Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

স্কুলের দাদা-দিদিদের জামায় ফুটল হাসি

কারও জামা-প্যান্ট খানিক ছোট হয়ে গিয়েছে। বছর দু’য়েক আগে কেনা। কারও আবার চুড়িদারটা এখন আর গায়ে হচ্ছে না। এ সব পোশাক জমছিল ঘরের আলমারিতে।

পোশাক দেওয়া হচ্ছে খুদেদের। —নিজস্ব চিত্র।

পোশাক দেওয়া হচ্ছে খুদেদের। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ২৮ অক্টোবর ২০১৮ ০৭:০০
Share: Save:

কারও জামা-প্যান্ট খানিক ছোট হয়ে গিয়েছে। বছর দু’য়েক আগে কেনা। কারও আবার চুড়িদারটা এখন আর গায়ে হচ্ছে না। এ সব পোশাক জমছিল ঘরের আলমারিতে। নিজেদের সদ্য-পুরনো সেই সব পোশাকই এক বস্তি এলাকার ছেলেমেয়েদের দিল এক স্কুলের পড়ুয়ারা।

পোশাক পেয়ে খুশি গরিব পরিবারের ছেলেমেয়েরা। খুশি তাদের অভিভাবকেরাও। উদ্যোগটা মেদিনীপুরের ডিএভি স্কুলের। স্কুলের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ তিমিরকান্তি ষন্নিগ্রাহী বলছিলেন, ‘‘সমাজসেবা বই পড়ে শেখা যায় না। কাজের মধ্য দিয়ে এই চেতনা গড়ে ওঠে। তাই স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের এই কাজে সামিল করেছি।’’

স্কুলের পাশেই রয়েছে নিবেদিতাপল্লি। বস্তি এলাকা। প্রায় দু’শো পরিবারের বসবাস এখানে। অনেকেরই ‘নুন আনতে পান্তা ফুরনো’ অবস্থা। পরিবারের রোজগেরেদের মধ্যে কেউ অটো, টোটো চালান। কেউ গ্যারাজে কাজ করেন। কেউ বা দিনমজুর। ছেলেমেয়েদের নতুন পোশাক কিনে দেওয়ার সামর্থ্য নেই অনেকেরই। শনিবার সকালে এখানে এসেই নিজেদের পুরনো পোশাক বিলি করেছে ডিএভি স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা। পরিকল্পনা দিন কয়েক আগের। স্কুলের রজত জয়ন্তী বর্ষ উদ্‌যাপন চলছে।

ঠিক হয়, ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে তাদের সদ্য-পুরনো হয়ে যাওয়া জামা-প্যান্ট সংগ্রহ করা হবে। ভাবনার কথা পড়ুয়াদের জানানো হয়। তাদের অভিভাবকদেরও জানানো হয়। উৎসাহিত হন অভিভাবকেরা। পরে ক্লাসে ক্লাসে ঘুরে শুরু হয় পোশাক সংগ্রহ। স্কুলের ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা প্রায় ১,৬০০। প্রায় সকলেই এক- দু’টি করে পোশাক দেয়। প্রচুর পোশাক সংগ্রহ হয়। সেই সব পোশাক নিয়ে নিবেদিতাপল্লিতে পৌঁছয় স্কুলের পড়ুয়া।

পোশাক পেয়েছে বছর তিনেকের রহিনামা খাতুন। রহিনামার বাবা শেখ মেহবুব আলম গ্যারাজে কাজ করেন। মা নবীনা বিবি গৃহবধূ। নবীনার কথায়, ‘‘স্কুলের এই উদ্যোগ ভাল। অনেকে উপকৃত হবে।’’ দলবেঁধেই স্কুলের পাশের বস্তিতে এসেছিল ছাত্রছাত্রীরা। দলে ছিলেন ঋষিক দাশগুপ্ত, কির্তিকা মুখোপাধ্যায় প্রমুখ। নবম শ্রেণির ছাত্রী কীর্তিকা বলছিল, ‘‘পুজোয় নতুন পোশাক হয়েছে। পুরনো পোশাক সাইজে ছোট হয়ে গিয়েছে। ওই পোশাকই দিয়েছি। পোশাক পেয়ে ওরা খুশি হয়েছে। এটাই ভাল লাগছে। এই ভাললাগাটা অন্য রকম।’’ স্কুলের সহ-শিক্ষিকা সোমা চৌধুরী চট্টরাজ বলছিলেন, ‘‘এ বার শুরু হল। এমন কর্মসূচির মধ্য দিয়েই তো ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে দুঃস্থদের পাশে দাঁড়ানোর চেতনা গড়ে তোলা সম্ভব।’’ বস্তির পাশেই ঝাঁ চকচকে স্কুল। বছর আড়াইয়ের ছেলে শেখ নুরকে কোলে নিয়ে পেশায় দর্জি শেখ কাইসুলের স্ত্রী সায়েনা বিবি বলছিলেন, ‘‘স্কুলটা ভাল। কত ভাল ছেলেমেয়েরা আসে দেখি। ছেলেকে এই স্কুলেই ভর্তি করব বলে ভেবেছি। শুধু ভর্তির সময় কত টাকা লাগে জানতে হবে।’’ ফের একবার স্কুলের দিকে চোখ ফেরান সায়েনা। বস্তি থেকে স্কুলের সামনের দিকটা দেখা যায় না। তবে পিছনের দিকের জানলাগুলো বেশ ভালই দেখা যায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

DAV public school
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE