মুক্তমঞ্চে ফ্যাশন শো। ডিজাইনার পোশাকে মন জয় করলেন শহরের মডেলরা।— সৌমেশ্বর মণ্ডল
জীবনযাত্রায় আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে আগেই। এ বার ধীরে ধীরে সাহসী আর সাবালকও হচ্ছে শহর মেদিনীপুর। সেই বার্তা দিয়েই শীতের সন্ধ্যায় উষ্ণতা ছড়াল শহরের প্রথম র্যাম্প শো।
চারপাশে আলোর ছটা, সুদৃশ্য পোশাকে র্যাম্পে হাঁটছেন মডেলরা, ঘন ঘন ক্যামেরার ঝলকানি— শনিবার সন্ধ্যায় বিদ্যাসাগর হলের মাঠে মুক্তমঞ্চ দেখে এক লহমায় মনে হতেই পারে এটা কোনও মফস্সল শহর নয়, খাস কলকাতা। ওই চত্বরেই তিন দিন ধরে ফোটোগ্রাফি উৎসবের আয়োজন করেছে পশ্চিম মেদিনীপুর ফটোগ্রাফি ক্লাব। সন্ধ্যায় তিনদিনই ছিল নানা অনুষ্ঠান। সেই অনুষ্ঠান মঞ্চেই শনিবার সন্ধ্যায় হয় ফ্যাশন শো। শহরে কোনও মুক্তমঞ্চের র্যাম্পে এমন ফ্যাশন শো, পোশাকের নতুন সম্ভার দেখানো এই প্রথম।
র্যাম্পে যাঁরা হাঁটলেন তাঁরা সকলেই তাঁরা সকলেই মেদিনীপুরের বাসিন্দা। প্রত্যেকের জন্যই পোশাক ডিজাইন করেছিলেন ফ্যাশন ডিজাইনার দেবযানী ঘোষ। মেদিনীপুরে মেয়েদের পোশাকের বিপণি রয়েছে দেবযানীর। তিনি জানালেন, এই ফ্যাশন শোয়ের জন্য পোশাক ডিজাইন করতে গিয়ে একটা বিষয় মাথায় রেখেছিলেন যে পোশাকগুলো যেন খুব খোলামেলা না হয়। মফস্সল শহরে আগল ভাঙতে একটু সময় তো লাগবেই। সে জন্য ছেলেদের পোশাকে ছিল কুর্তা-পাজামা থেকে ব্লেজার, মেয়েদের পরনে শাড়ি, সালোয়ার, লেহেঙ্গা। তবে প্রতিটি পোশাকেই প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের মেলবন্ধন ঘটানো হয়েছিল। শোয়ের সঞ্চালক শতাব্দী গোস্বামী চক্রবর্তী বলছিলেন, ‘‘ইন্দো-ওয়েস্টার্ন পোশাকের কত সম্ভার। আমরা সকলেই প্রাচ্য এবং পাশ্চাত্যের মেলবন্ধন ঘটাতে চাই। ভিন্ন সংস্কৃতিকে মিলিয়ে দিতে চাই। সুহানি যেমন লেহেঙ্গা পরে হাঁটল। লেহেঙ্গা ভারতীয় পোশাক। কিন্তু ওটা কাটা হয়েছিল ওয়েস্টার্ন স্টাইলে।’’
র্যাম্পে কচিকাঁচা থেকে যুবক-যুবতী নানা বয়সের পুরুষ-মহিলারা হাজির ছিলেন। কারও বয়স তিন, কারও তিরিশ। কেউ পেশাদার মডেল, কেউ আবার মডেলিং নিয়ে এগোতে চায়, কেউ নিছক প্যাশনের টানে মঞ্চে হাঁটেন। মডেলদের মধ্যে ছিলেন সুহানি দাস, সুকন্যা চক্রবর্তী, অভিজিত্ দাস। ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ুয়া অভিজিতের কথায়, ‘‘প্যাশনের জন্যই এই মঞ্চে আসা।’’ তিন বছরের সুহানিও স্টাইলিশ পোশাকে পেশাদার মডেলের মতো ক্যাট ওয়াক করেছে। সুকন্যার লক্ষ্য মডেলিং। ইতিমধ্যে কলকাতার একাধিক মঞ্চে সে পারফর্ম করেছে। বছর পনেরোর এই কিশোরীর কথায়, ‘‘মডেলিং দারুণ লাগে। নিজের শহরে পারফর্ম করতে পেরে আরও ভাল লাগছে।’’ ডিজাইনার দেবযানীরও বক্তব্য, ‘‘সত্যিই এটা একটা আলাদা অনুভূতি। ফ্যাশনে মেদিনীপুরও ধীরে ধীরে এগোচ্ছে।’’
ফোটোগ্রাফি উৎসবের আঙিনায় হঠাৎ ফ্যাশন শো কেন?
ফোটোগ্রাফি ক্লাবের অন্যতম কর্তা কৃষ্ণা ভিলানির ব্যাখ্যা, ‘‘এখন মেদিনীপুর আর আগের মতো নেই। সময়ের সঙ্গে অনেক কিছুই বদলে গিয়েছে। শহরের মানুষের সাজও বদলে যাচ্ছে। তাই আমরা ভাবলাম, এ বার ফ্যাশন শো করলে মন্দ হয় না!” কৃষ্ণা বলছিলেন, ‘‘শহরে মুক্তমঞ্চে এ ভাবে এই প্রথম ফ্যাশন শো হল। প্রথম বার। তাই হয়তো সবকিছু ঠিক গুছিয়ে করা যায়নি। লাইট, সাউন্ড সিস্টেমে কিছু ভুল হয়তো থেকেছে। পরের বার আরও ভাল ভাবে এই শো করার ভাবনা রয়েছে আমাদের।’’
ফ্যাশনের মঞ্চ থেকেই সাফল্যের উড়ান শুরু করেন অনেকে। শহর মেদিনীপুরেও এখন আর জামা-জুতোর মধ্যে ফ্যাশন আটকে নেই। পোশাকের সঙ্গে মানানসই অ্যাকসেসরিজও চাই। যেমন, টিপ-ব্যাগ-দুল আরও কত কিছু। এখন শহরের ফ্যাশনে ‘মিক্সড অ্যান্ড ম্যাচ’ ভীষণ ভাবে ইন। পোশাকের রঙে বাই-কালারের চল এসেছে।কারও পছন্দ লম্বা ঝুলের ড্রেস, কারও একটু শর্ট। শহরের বিবাহিত মহিলারাও আকছার এই সব পোশাক এখন পরছেন। এই ফ্যাশন শোয়ে বদলে যাওয়া শহরের সেই ছবিই প্রতিফলিত হয়েছে।
অনুষ্ঠানের সঞ্চালক শতাব্দীও তাই বলছিলেন, ‘‘চৌকাঠের একধাপ বাইরে গিয়ে বাড়ির মেয়েরা নিত্য নতুন পোশাকে যে ভাবে র্যাম্প মাতালেন তা অনবদ্য। শালীনতার মাত্রা বজায় থাকল ষোলোআনা। তবু কনকনে ঠান্ডায় থেকে গেল উষ্ণতার ছোঁয়া।’’ গোটা অনুষ্ঠান বার্তা দিয়ে গেল— লেটস র্যাম্প মেদিনীপুর...।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy