Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

খাদ্যের সঙ্কট! নদীর তীর ছেড়ে পরিযায়ী পাখিদের ভিড় পুকুরে

স্থানীয় সূত্রের খবর, এক দশকের আগেও কেলেঘাই নদী এবং বাগুই নদী এলাকায় শীতে অসংখ্য পরিযায়ী পাখীর আনাগোনা লেগেই থাকত। আজ সেই দৃশ্য প্রায় অতীত।

মকরামপুরের জলাশয়ে ভিন্‌দেশি অতিথিরা। নিজস্ব চিত্র

মকরামপুরের জলাশয়ে ভিন্‌দেশি অতিথিরা। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
পটাশপুর শেষ আপডেট: ১৭ ডিসেম্বর ২০১৮ ০১:৫৬
Share: Save:

কয়েক বছর আগেও কেলেঘাই নদীতে শীতে ভিড় করত সাইবেরিয়ান অতিথিরা। কিন্তু বর্তমানে তারা ঠিকানা বদল করেছে। নদীর বদলে এখন ওই অতিথিরা আশ্রয় নিচ্ছে নদী সংলগ্ন গ্রামের বদ্ধ জলাশয় ও পুকুরের আশে পাশে। এলাকার পক্ষীবিদদের দাবি, জীব বৈচিত্রের পরিবর্তন ঘটছে কেলেঘাই নদীতে। ফলে নদী বিমুখ হচ্ছে সাইবেরিয়ান অতিথিরা।

স্থানীয় সূত্রের খবর, এক দশকের আগেও কেলেঘাই নদী এবং বাগুই নদী এলাকায় শীতে অসংখ্য পরিযায়ী পাখীর আনাগোনা লেগেই থাকত। আজ সেই দৃশ্য প্রায় অতীত। এর জন্য নদী এলাকায় বাস্তুতন্ত্রের পরিবর্তনকেই দুষছেন পরিবেশ প্রেমীরা। তাঁরা জানাচ্ছেন, খাদ্য এবং নিরাপদ আশ্রয়ের সঙ্কটে ক্রমেই নদী বিমুখ হয়েছে ওই সাইবেরিয়ান পাখীরা।

পরিবেশবী তথা পক্ষীপ্রেমীরা জানাচ্ছেন, শীতে ভিন্‌দেশি পরিযায়ী পাখিদের মধ্যে সরাল এবং পানকৌড়ি সংখ্যা বেশি। এক সময় কেলেঘাই নদীর চরের ঝোপ জঙ্গলে, অ্যালগি, বেনা, খড়ি, ঢৈচা প্রজাতির ঘাসের মধ্যে ছোট ছোট পোকা মাকড় ছোট মাছ থাকত। অভিযোগ, সম্প্রতি কেলেঘাই এবং বাগুই নদীর সংস্কারের ফলে নদীর চরিত্রের বদল ঘটেছে। উধাও হয়েছে নদীর চরের ওই ঝোপঝাড় এবং ঘাসের বন। ফলে পরিযায়ী পাখিদের খাদ্যের অভাব ঘটছে।

স্থানীয়েরা জানাচ্ছেন, নদীর চরে আগের মতো জল থাকে না। ফলে চাষিরা খালের চরে বিকল্প ধানের চাষআবাদ করছেন। সেই ধান চাষের জন্য যথেচ্ছ হারে রাসায়নিক এবং কীটনাশক ব্যবহার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ। ওই কীটনাশ জলে মিশেও পক্ষীকুলের খাদ্যের সংঙ্কট তৈরি করছে বলে জানাচ্ছে পরিবেশবীদেরা। ফলে বর্তমান জীবন যাত্রার ধরন বদলেছে সরাল, পানকৌড়ি, সাইবেরিয়ান ক্রেনের মতো সাইবেরিয়ান পাখিরা।

এবিষয়ে পটাশপুর-১ ব্লকের জীববৈচিত্র্য কমিটির সম্পাদক সোমনাথ দাস অধিকারী বলেন, ‘‘যে পাখিরা এক সময় কেলেঘাই নদীর জলে ঝাঁকে ঝাঁকে আসত, এখন তারা আর তেমন আসে না। এর কারণ একটাই— নদীর বস্তুতন্ত্র নষ্ট হচ্ছে।’’ সোমনাথের কথায়, ‘‘নদীর চরে এবং পার্শ্ববর্তী এলাকায় বিকল্প ফসল চাষের জন্য যথেচ্ছ হারে রাসায়নিক সার এবং কীটনাশক প্রয়োগের ফলে নদীতে পাখিদের বাসস্থান এবং খাদ্যের অভাব দেখা দিয়েছে। তাই গ্রামের বন্ধ জলাশয়ে তারা যেতে বাধ্য হয়েছে পাখিরা।’’

বর্তমানে কেলেঘাই নদীর কাছেই মকরামপুর, শাহাপুর, কুঞ্জবেড়িয়া গ্রামের বিভিন্ন পুকুর এবং জলাশয়ে ভিড় করছে পরিযায়ী পাখিরা। আর শিকারিরদের হাত থেকে তাদের বাঁচাতে পাহরা দিচ্ছেন স্থানীয়েরা। যদিও পরিয়ায়ী পাখির বিষয়ে জেলা বন দফতরের আধিকারিক স্বাগতা দাসের দাবি, ‘‘কেলেঘাইয়ে কোনও জীব বৈচিত্র্যের পরিবর্তন ঘটেনি। এখন সবে শীত পড়তে শুরু করেছে। তাই ওখানে তেমন পাখি নেই। কিছু দিনের মধ্যেই পরিযায়ী পাখিরা কেলেঘাই নদীতে আসতে শুরু করবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Food Migratory Bird Pond
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE