লন্ডভন্ড: দুষ্কৃতী তাণ্ডবের পরে। নিজস্ব চিত্র
রাতে সটান বাড়িতে ঢুকে পড়েছিল চার দুষ্কৃতী। মাফলার দিয়ে সত্তরোর্ধ্ব সনৎ প্রসাদ দে ও তাঁর স্ত্রী ইতুদেবীর হাত পিছমোড়া করে বেঁধে ফেলে তারা। ঝাড়গ্রাম জেলার জামবনি থানার গিধনির পুরনো পোস্ট অফিস পাড়ায় শুক্রবার রাতে দুষ্কৃতী দল ইতুদেবীর গলায় হাঁসুয়া ঠেকিয়ে আলমারির লকার ভেঙে নগদ টাকা ও গয়না লুঠ করে বলে অভিযোগ।
প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ জানিয়েছে, বাইরের পাঁচিলের ও বাড়ির বারান্দার দু’টি গ্রিল গেটের তালা কেটে ঢুকেছিল দুষ্কৃতীরা। এরপর শোওয়ার ঘরের বন্ধ দরজা বাইরে থেকে কোনও কিছু দিয়ে চাড় দিয়ে ভিতরের ছিটকিনি খুলে ফেলা হয়েছিল। অথচ শীতের রাতে টেরও পাননি সনৎপ্রসাদ, ইতুদেবী ও পাশের ঘরে থাকা ভাড়াতে রাজা চক্রবর্তী।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, অবসরপ্রাপ্ত রেলকর্মী সনৎপ্রসাদ দে ২০০৪ সাল থেকে সস্ত্রীক এই একতলা বাড়িতে থাকেন। তাঁদের একমাত্র বিবাহিতা মেয়ে জামশেদপুরে থাকেন। বছর আটেক সনৎবাবুর বাড়িতে ভাড়া আছেন জামবনির বারুণশোল হাইস্কুলের শিক্ষক রাজু চক্রবর্তী। তাঁর বাড়ি নন্দীগ্রামে। প্রতি শনিবার বাড়ি যান রাজাবাবু। সেজন্য শুক্রবার এটিএম থেকে টাকা তুলেছিলেন তিনি। শনিবার কলকাতায় এক আত্মীয়ার বিয়েতে যাওয়ার কথা ছিল সনৎবাবু ও ইতুদেবীর। ব্যাগ গোছানো ছিল। ব্যাগে কিছু গয়না ও টাকা নিয়েছিলেন ইতুদেবী। বিয়েবাড়িতে যাবেন বলে কয়েক গাছা সোনার বালা ও চুড়িও পরেছিলেন তিনি। বাদবাকি গয়না ও টাকা ছিল দু’টি আলমারির লকারে।
পুলিশ সূত্রে খবর, দুষ্কৃতীরা সনৎবাবুকে খাটে বসিয়ে পিছনের দিকে দু’টি হাত বেঁধে দেয়। আওয়াজ শুনে পাশের ঘর থেকে রাজাবাবু বেরিয়ে আসেন। তাঁর হাতও মাফলার দিয়ে বেঁধে দেয় দুষ্কৃতীরা। তারপর সনৎবাবুর একটি আলমারির চাবি খুলে নগদ বেশ কয়েক হাজার টাকা, অন্য আলমারির লকার ভেঙে গয়না লুঠ করে নেয়। ইতুদেবীর হাত থেকেও বালা, চুড়ি খুলে নেয়। ব্যাগ ভোজালি দিয়ে কেটে জিনিসপত্র লন্ডভন্ড করে টাকা গয়না বের করে নেয় তারা। রাজাবাবুর হাতের আংটি খুলে নেয় তারা। মোবাইলও কেড়ে নেওয়া হয়। প্রায় ৪৫ মিনিট ধরে লুঠপাট চালানোর পরে বাইরে থেকে দরজা লাগিয়ে পালিয়ে যায় দুষ্কৃতীরা।
শনিবার অভিযোগ পেয়ে ঝাড়গ্রামের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বিশ্বজিৎ মাহাতো ও ঝাড়গ্রামের এসডিপিও দীপক সরকারের নেতৃত্বে পুলিশ ঘটনার তদন্তে যায়। ঝাড়গ্রামের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বিশ্বজিৎ মাহাতো বলেন, তদন্তে সব দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ওই এলাকায় পুলিশ মোতায়ন করা হচ্ছে। এখনও পর্যন্ত কেউ গ্রেফতার হয় নি। দুষ্কৃতীদের সন্ধানে তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ। তবে এই ঘটনার পরে রীতিমতো আতঙ্কে রয়েছেন এলাকাবাসী।
সনৎবাবু ও ইতুদেবী বলেন, ‘‘প্রায় চোদ্দো বছর এখানে আছি। আমাদের বাড়িতে কখনও কোনও সমস্যা হয়নি।’’ ইতুদেবীর অভিযোগ, মাঝ রাতে শোওয়ার ঘরে অস্ত্র হাতে মুখ বাঁধা ছেলে গুলোকে দেখে ভয়ে সিঁটিয়ে যান। ওরা আলো জ্বালতে দেয়নি। ওদের কাছে লম্বা টর্চ ও ধারালো জিনিসপত্রও ছিল। সনৎবাবু দাবি করেন, ছেলেগুলো বার বার বলছিল, ব্যাঙ্ক থেকে যে পাঁচ লক্ষ টাকা তুলেছিস সেটা বের করতে। কিন্তু এমন কোনও টাকা বাড়িতে ছিল না। ব্যাঙ্ক থেকে অত টাকা তুলিওনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy