Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

নির্যাতিতাকে ‘হেনস্থা’

কেশাপাট এলাকার ওই মহিলা জানিয়েছেন, কয়েকমাস ধরে তাঁর শ্বশুরের সঙ্গে খুড়তুতো শ্বশুরের সম্পত্তি নিয়ে বিবাদ চলছিল। ওই বিবাদের জেরে মহিলার বাপের বাড়ির এলাকার এক আত্মীয়ের প্ররোচনায় বৃন্দাবনচক এলাকার কয়েকজন তৃণমূল নেতা তাঁর মা এবং বৌদির উপরে হামলা চালায় বলে অভিযোগ।

ফাইল চিত্র

ফাইল চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
পাঁশকুড়া শেষ আপডেট: ২২ ডিসেম্বর ২০১৯ ০১:২৩
Share: Save:

সম্পত্তি গত বিবাদে প্রকাশ্যে এক মহিলাকে বিবস্ত্র করে শ্লীলতাহানি এবং ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগ উঠল কয়েকজন তৃণমূল নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে। পাঁশকুড়ার কেশাপাট এলাকার ওই ঘটনায় কাঠগড়ায় স্থানীয় পুলিশের ভূমিকাও। নির্যাতিতার অভিযোগ, স্থানীয় পুলিশ যেমন তাঁর অভিযোগ নিতে চায়নি, তেমনই পরে অভিযুক্তদের আড়াল করারও চেষ্টা করছে তারা। বিহিত চেয়ে নির্যাতিতা তমলুকের এসডিপিও, জেলা পুলিশ সুপারের কাছে অভিযোগ করেছেন। তমলুকের এসডিপিও অতীশ বিশ্বাস বলেন, ‘‘ওই মহিলার অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত চলছে। কেউ দোষী হলে তার বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

কেশাপাট এলাকার ওই মহিলা জানিয়েছেন, কয়েকমাস ধরে তাঁর শ্বশুরের সঙ্গে খুড়তুতো শ্বশুরের সম্পত্তি নিয়ে বিবাদ চলছিল। ওই বিবাদের জেরে মহিলার বাপের বাড়ির এলাকার এক আত্মীয়ের প্ররোচনায় বৃন্দাবনচক এলাকার কয়েকজন তৃণমূল নেতা তাঁর মা এবং বৌদির উপরে হামলা চালায় বলে অভিযোগ। সমস্যা সমাধানে ওই মহিলা ও তাঁর স্বামী স্থানীয় দুটি গ্রামের ক্লাবের সদস্যদের দ্বারস্থ হন। গত ১৭ নভেম্বর এ নিয়ে একটি সালিশি সভার দিন স্থির হয়।

ওই মহিলার দাবি, ওই দিন সভা হয়নি। সভাস্থল থেকে তিনি সাড়ে ৩ বছরের ছেলেকে নিয়ে স্বামীর সঙ্গে মোটরবাইকে বাড়ি ফিরছিলেন। অভিযোগ, বৃন্দাবনচক এলাকায় তাঁদের পথ আটকায় কয়েকজন তৃণমূল নেতা এবং তারা মহিলাকে বিবস্ত্র করে শ্লীলতাহানি করে। বাধা দিতে গেলে মহিলার স্বামীকে কাঠ দিয়ে মারা হয় এবং তাদের ছেলেকে ছুড়ে ফেলা হয়। পরে তাঁদের টাকা এবং মোবাইল কেড়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

মহিলার অভিযোগ, পাঁশকুড়া সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে চিকিৎসা করিয়ে পাঁশকুড়া থানায় গেলে পুলিশ তাঁদের অভিযোগ নেয়নি। ২০ নভেম্বর ওই মহিলা পুলিশ সুপার, তমলুকের এসডিপিও, সার্কেল ইনস্পেক্টরের কাছে লিখিত অভিযোগ জানান। ওই দিন তিনি ফের পাঁশকুড়া থানায় গিয়ে লিখিত অভিযোগ দিতে গিয়েছিলেন। অভিযোগ, সেই সময় কর্তব্যরত পুলিশ অফিসার তাঁকে ‘চরিত্রহীন’ বলে হেনস্থা করেন। ওই মহিলা তখন পুলিশ সুপারকে ফোনে বিষয়টি জানান।

নির্যাতিতা জানিয়েছেন, এর পরে ওই রাতে পাঁশকুড়া থানার অ্যাসিস্ট্যান্ট সাব ইনস্পেক্টর দিলীপ চক্রবর্তী কয়েকজন পুলিশকর্মী ও স্থানীয় তৃণমূল নেতা তাপস চক্রবর্তীকে নিয়ে তাঁর বাড়িতে আসেন। দিলীপ মহিলাকে থানায় গিয়ে অভিযোগ করতে বলেন এবং ওই মহিলার বিরুদ্ধে পাল্টা মামলার হুমকি দেন বলে দাবি। পুলিশ চলে গেলে তাপসও মহিলাকে হুমকি দেন বলে অভিযোগ। যদিও তাপসের বক্তব্য, ‘‘ওঁদের বাড়ি চিনিয়ে দেওয়ার জন্য পুলিশ আমাকে নিয়ে গিয়েছিল। এর বাইরে আমার সঙ্গে ওই পরিবারের কারও কথা হয়নি।’’

গত ২১ নভেম্বর ওই মহিলা বৃন্দাবনচক এলাকার ন’জনের নামে পাঁশকুড়া থানায় লিখিত আরও একটি অভিযোগ দায়ের করেন। তাদের মধ্যে কয়েকজন সক্রিয় তৃণমূল নেতা-কর্মী। মহিলার দাবি, সম্প্রতি তাঁকে থানায় ডেকে দিলীপ জানান, তাঁর বিরুদ্ধে পাল্টা মামলা হয়েছে এবং এ জন্য তাঁকে একটি ফর্মে সই করার জন্য চাপ দেওয়া হয়।

ঘটনায় জড়িয়েছে রাজনীতিও। ওই মহিলা বলেন, ‘‘১৭ নভেম্বর বিবস্ত্র করে শ্লীলতাহানি করা হয়। পাঁশকুড়া থানা অভিযোগ নিতে চায়নি। পুলিশ সুপারের চাপে অভিযোগ নিলেও এখন দোষীদের আড়াল করছে। হুমকির মুখে পড়ছি আমরা। বিজেপি করি বলেই এই হামলা।’’ এ ব্যাপারে শুক্রবার ফের জেলা পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন নির্যাতিতাপুলিশের বিরুদ্ধে করা অভিযোগ প্রসঙ্গে অ্যাসিস্ট্যান্ট সাব ইনস্পেক্টর দিলীপ বলেন, ‘‘ওই মহিলা প্রথম দিন লিখিত অভিযোগ দেননি। আমি ওসির নির্দেশে ওঁর বাড়িতে গিয়েছিলাম। ওই মহিলার অভিযোগ নেওয়া হয়েছে। পাল্টা আরেকটি মামলাও হয়েছে বলে শুনেছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Molestation Woman Molested
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE