Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

এডস আক্রান্ত বাড়ছে, হলদিয়ায় সমীক্ষা ‘ন্যাকো’র 

এড্স নিয়ে কাজ করা এই সংস্থার তরফে ইতিমধ্যে জানানো হয়েছে, রাজ্যের মধ্যে সবচেয়ে বেশি এইচআইভি জীবাণুবহনকারী মানুষ রয়েছেন হলদিয়ায়।

নিজস্ব সংবাদদাতা
হলদিয়া শেষ আপডেট: ০৩ ডিসেম্বর ২০১৮ ০২:১৫
Share: Save:

শিল্প আর বন্দর শহর হওয়ার সুবাদে নিয়মিত বহু লোকের আনাগোনা হলদিয়ায়। রুটি- রুজি জোগাড়ের জন্য প্রচুর মানুষ ভিড় করেন এই শিল্প-বন্দর শহরে। কলকাতা ছাড়া, পূর্ব মেদিনীপুরের এই শহর এখন মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ‘ন্যাকো’র কাছে। হলদি নদীর তীরে কয়েক দশক আগে গড়ে ওঠা এই শহরকে ‘রেড জোন’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে ‘ন্যাকো’। এড্স নিয়ে কাজ করা এই সংস্থার তরফে ইতিমধ্যে জানানো হয়েছে, রাজ্যের মধ্যে সবচেয়ে বেশি এইচআইভি জীবাণুবহনকারী মানুষ রয়েছেন হলদিয়ায়। ১ ডিসেম্বর বিশ্ব এডস দিবসে ‘ন্যাকো’ র এমন তথ্য সামনে আসায় ঘুম ছুটেছে স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলির।

উল্লেখ্য, হলদিয়ায় বন্দর ও শিল্প নগরী গড়ে ওঠায় নিত্যদিন লোকের আনাগোনা লেগেই থাকে। বিশেষ করে শয়ে শয়ে ট্রাক ও গ্যাস ট্যাঙ্কারচালক এখানে আসেন। শহরে ‘মারণ ব্যাধি’ এড্স-এর জীবাণু বহনের বিষয়ে মূলত তাঁদের বিরুদ্ধেই আঙুল তুলছেন এখানকার বাসিন্দারা। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, হলদিয়ার পাতিখালিতে হলদি নদীর তীরে বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে, টাউনশিপের বিদ্যাসাগর মোড় সহ ৪১ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে কিংবা কাপাসবেড়িয়া জুড়ে ট্রাক ও ট্যাঙ্কার চালকরা ভিড় জমান। এঁরা রাজ্যের বিভিন্ন জেলার বাসিন্দা হলেও মূলত পঞ্জাব, নেপাল, মহারাষ্ট্র, বিহারের মতো রাজ্য ও দেশের লোক হয়ে থাকেন। স্থানীয়দের একাংশের মতে, এই সব চালকদের অসুরক্ষিত যৌন জীবন যাপনের জন্য ‘এইচআইভি’ ভাইরাস বেড়ে গিয়েছে হলদিয়ায়। মহারাষ্ট্র থেকে আসা এক ট্যাঙ্কারচালক জানান, কয়েক মাস ধরে হলদিয়ায় রয়েছি। এত দিন ধরে কাজের ‘চাপ’ কাটাতে যৌনসঙ্গী খুঁজে নিই।’’

বন্দর ও কারখানা চত্বরের একাধিক ট্রাকচালক জানিয়েছেন, কাপাসবেড়িয়া এবং হলদিয়ার পাতিখালি, দুর্গাচকের মতো এলাকা থেকে এধরনের যৌনকর্মী মেলে। পঞ্জাব থেকে আসা মোহন সিংহ (নাম পরিবর্তিত) বলেন, ‘‘কন্ডোম ছাড়া যৌন সম্পর্ক স্থাপনে বিপদ যে রয়েছে তা আমরা বুঝি। কিন্তু এক এক সময় তা সম্ভব হয়ে ওঠে না।’’

আরও পড়ুন: দাদুর কাঁধে চড়ে স্নাতকের দরজা পেরোচ্ছেন সুদীপ

তবে শিল্পাঞ্চলের ট্রাক এবং ট্যাঙ্কার চালক নয়, হলদিয়া বন্দরে পণ্য নিয়ে যাতায়াতকারী লরিচালকদের মধ্যে ‘এইচআইভি’ পাওয়া গিয়েছে বলে দাবি ‘ট্রান্সপোর্ট কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়া’ (টিসিআই) নামে একটি সংস্থার। শিল্পাঞ্চলে এডস নিয়ে কাজ করে আসা ওই সংস্থার তরফে দাবি, নিয়মিত বিভিন্ন কারখানার পার্কিং জোনে এইচআইভি পরীক্ষার জন্য শিবির করা হয়। সমীক্ষায় আরও জানা গিয়েছে- প্রতি একশো জন ট্রাক চালকের রক্তের নমুনায় একজনের রক্তে এইচআইভি ভাইরাস পাওয়া যায়।

পাশাপাশি, স্থানীয়দের মধ্যেও এইচআইভি পজিটিভ জীবাণু পাওয়া যাচ্ছে। সে ক্ষেত্রে আইসিটিসি পরীক্ষার দ্বারা এক হাজার জনের রক্ত পরীক্ষায় একজনের রক্তে এইচআইভি পাওয়া যায়। টিসিআই তরফে দাবি করা হয়েছে, গত এপ্রিল থেকে এযাবৎ বিভিন্ন কারখানা ও বন্দরের গাড়ি পার্কিং জোনে রক্ত পরীক্ষা চালিয়ে মোট ১৭ জনের রক্তে এইচআইভি জীবাণুর সন্ধান মিলেছে।

‘ন্যাকো’র দাবি, এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি এইচআইভি পজিটিভ মানুষ রয়েছেন মহারাষ্ট্রের জুনাগাঁও-এ। তবে, এ রাজ্যে হলদিয়া তালিকার সবচেয়ে উপরে রয়েছে। এমন আশঙ্কা দেখা দেওয়ায় নড়েচড়ে বসেছে স্থানীয় প্রশাসন ও বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা।

টিসিআই-এর এক কর্মকতা উৎপল বেরা জানান, সোমবার ও মঙ্গলবার হলদিয়া পেট্রনাস এবং মিৎসুবিশিতে গাড়ি পার্কিং জোনে ট্রাক ও ট্যাঙ্কার চালকদের এ বিষয়ে সচেতন করার কর্মসূচী নেওয়া হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE