নুন খেলে নাকি গুণ গাইতে হয়। কিন্তু সব নুনের কি গুণ সমান!
জেলা স্বাস্থ্য দফতরের রিপোর্ট বলছে, চোখ বন্ধ করে ভরসা করে বাজার থেকে নুন কিনলে হতে পারে বিপদ। কারণ, সব নুন গুণবিশিষ্ট নয়। নুনের গুণ মানে তার মধ্যে থাকা আয়োডিনের মাত্রা। স্বাস্থ্য দফতর গত কয়েকমাস ধরে জেলা জুড়ে অভিযান চালিয়েছিল। জেলার ২১টি ব্লক থেকেই সংগ্রহ করা হয়েছিল নুন। সেই নুনে আয়োডিনের মাত্রা কেমন তা পরীক্ষার জন্য কলকাতার কনভেন্ট লেনের সেন্ট্রাল ল্যাবরেটরি ও ক্যালকাটা মেডিক্যাল কলেজের বায়োকেমেস্ট্রি বিভাগে পাঠানো হয়েছিল। সম্প্রতি তার রিপোর্ট স্বাস্থ্য দফতরের কাছে এসেছে। সেই রিপোর্ট বলছে, জেলার বিভিন্ন প্রান্তে যে সব নুন বিক্রি হচ্ছে তার মধ্যে অনেক ক্ষেত্রেই নির্ধারিত পরিমাণ আয়োডিন থাকে না। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্র বেরা বলেন, “অনেক ক্ষেত্রে নুনে আয়োডিন কম থাকছে। এতে নানা বিপদ হওয়ার সম্ভবনাও থাকছে। পরীক্ষায় ধরা পড়ার পরই অভিযান ও প্রচার শুরু হয়েছে। বাজার থেকে নুন সংগ্রহের কাজ চলছে।”
চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, আয়োডিনের মাত্রাভেদে হতে পারে গলগণ্ড। কমতে পারে বৌদ্ধিক বিকাশ। এমনকি, কেউ বধিরতা, মানসিক অসুস্থতায় আক্রান্ত হতে পারেন বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা। গর্ভবতী মায়ের আয়োডিন যুক্ত নুন না খেলে গর্ভস্থ শিশু নষ্ট হয়ে যাওয়াও সম্ভাবনা থাকে। বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপিকা তথা পুষ্টিবিদ ছন্দা মল্লিক (মুখোপাধ্যায়) বলেন, “শরীরে আয়োডিন একটি প্রয়োজনীয় উপাদান। তার পরিমাণ কম হলে থাইরক্সিল হরমোনের মাত্রা কমে যায়। গলগণ্ড-রোগ সহ নানা সমস্যা দেখা দেয়। গর্ভস্থ শিশু নষ্ট হয়ে যায়।”
স্বাস্থ্য দফতরের পরামর্শ, প্যাকেটজাত ভাল নুন কিনুন। প্রয়োজনে নুনের গুণাবলি জানতে স্বাস্থ্য দফতরে যোগাযোগ করুন। পরীক্ষায় ধরা পড়েছে, জেলার কমবেশি ব্লকেই আয়োডিন কম নুন বিকোচ্ছে। কোথাও ৭ পিপিএম ইউনিট কোথাও আবার দশ পিপিএম ইউনিট। কোথাও আবার ২৫ পিপিএম ইউনিটও থাকছে। পরীক্ষার রিপোর্ট পাওয়ার পর স্বাস্থ্য প্রশাসন প্রচারে জোর দিয়েছে। টানা অভিযান চলছে। এএনএম,আশা কর্মীদের দিয়ে নুন সংগ্রহ চলছে। নজরদারি চালাচ্ছে জেলা স্বাস্থ্য ভবনের সহকারী মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক রবীন্দ্রনাথ প্রধান।
নুনে বিপদ এড়াতে তাই স্বাস্থ্য দফতরের পরামর্শ, খোলা জায়গায় নুন কিনবেন না। সত্যি কি এ ভাবে খোলা জায়গায় নুন বিক্রি আটকানো সম্ভব? কনফেডারেশন অফ অল ইন্ডিয়া টেডার্সের পশ্চিমবঙ্গ শাখার সাধারণ সম্পাদক রাজা রায় বলেন, “খাদ্যদ্রব্য ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত সংশ্লিষ্ট সকলকেই বিষয়টি খেয়াল রাখতে আর্জি জানানো হয়েছে। খোলা বাজারে নুন বিক্রি হলেও খবর দিতে বলা হয়েছে।”
স্বাস্থ্য দফতর বলছে, খাবারে গরম অবস্থায় নুন না দিয়ে ঠান্ডা অবস্থায় দিন। উনুনের কাছাকাছি নুন না রাখারও আর্জি জানাচ্ছে স্বাস্থ্য দফতর। নুনেও এত ঝক্কি! চিকিৎসকেরা বলছেন, একটু খেয়াল রাখতেই হবে। কারণ, শুধু স্বাদ নয়, নুনের সঙ্গে যে স্বাস্থ্যও জড়িয়ে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy