Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
বাড়ির সামনেই চোলাই বিক্রির নালিশ

আটক কাউন্সিলরের মা

চোলাইয়ের কারবার রুখতে উদ্যোগী হয়েছে প্রশাসন। রাজ্য-সহ জেলা জুড়ে হামেশাই চলছে পুলিশ এবং আবগারি দফতরের অভিযান। এই অভিযানেই চোলাইয়ের কারবার চালানোর অভিযোগে পাঁশকুড়ায় পুলিশের ‘জালে’ আটক হলেন এক তৃণমূল কাউন্সিলের মা। যা দেখে স্থানীয়দের একাংশের কটাক্ষ, ‘এতো বাঘের ঘরেই ঘোগের বাসা’!   

এগরায় আবগারি দফতরের অভিযানে উদ্ধার চোলাই।

এগরায় আবগারি দফতরের অভিযানে উদ্ধার চোলাই।

নিজস্ব সংবাদদাতা
পাঁশকুড়া শেষ আপডেট: ২৬ জানুয়ারি ২০১৯ ০৪:২৪
Share: Save:

চোলাইয়ের কারবার রুখতে উদ্যোগী হয়েছে প্রশাসন। রাজ্য-সহ জেলা জুড়ে হামেশাই চলছে পুলিশ এবং আবগারি দফতরের অভিযান। এই অভিযানেই চোলাইয়ের কারবার চালানোর অভিযোগে পাঁশকুড়ায় পুলিশের ‘জালে’ আটক হলেন এক তৃণমূল কাউন্সিলের মা। যা দেখে স্থানীয়দের একাংশের কটাক্ষ, ‘এতো বাঘের ঘরেই ঘোগের বাসা’!

পুলিশ এবং স্থানীয় সূত্রের খবর, পাঁশকুড়া পুরসভার ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর সুকুমার দাসের মায়ের বিরুদ্ধে বহু বছর ধরে বাড়ির সামনে চোলাইয়ের কারবার চালানোর অভিযোগ রয়েছে। স্থানীয়েদের দাবি, সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত প্রকাশ্যেই চলত চোলাইয়ের ব্যবসা। মা’কে সামনে রেখে খোদ কাউন্সিলরই ব্যবসা চালাতেন বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়েরা।

বৃহস্পতিবার রাত ৮টা নাগাদ ওই চোলাই ঠেকে অভিযান চালায় পাঁশকুড়া থানার পুলিশ। পুলিশকে দেখে চোলাই খেতে আসা লোকজন দৌড় দেন। তবে ঘটনাস্থল থেকে সুকুমারের মাকে আটক করে পুলিশ। তাঁকে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। পাশাপাশি, পুলিশ ১০ লিটার চোলাই এবং পাঁচ লিটার দেশি মদ বাজেয়াপ্ত করে। মা’কে আটক করার খবর পেয়ে গভীর রাতে থানায় হাজির হয় কাউন্সিলর। স্থানীয়েরা অভিযোগ করেছেন, প্রভাব কাটিয়ে রাতেই মা’কে থানা থেকে ছাড়িয়ে আনেন সুকুমার। যদিও এ ব্যাপারে পাঁশকুড়া থানার পুলিশ জানিয়েছে, আটক করা মহিলাকে সাবধান করে তারা ছেড়ে দিয়েছে। ভবিষ্যতে এই ধরনের আরও অভিযোগ এলে পদক্ষেপ করা হবে।

স্থানীয়েরা জানাচ্ছেন, ওই চোলাই ঠেকের অদূরেই রয়েছে একটি শিশু শিক্ষা কেন্দ্র। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত মদ্যপেরা এলাকায় ঘুরে বেড়ান। কিন্তু সুকুমার শাসকদলের কাউন্সিলর এবং তাঁর স্ত্রীও ওই ওয়ার্ডের প্রাক্তন কাউন্সিলর। এই জন্য কেউও এই চোলাই ঠেকের প্রতিবাদ করতে পারতেন না বলে দাবি। স্থানীয় এক ব্যক্তির কথায়, ‘‘তৃণমূল নেতার মায়ের চোলাইয়ের ডেরায় কখনও অভিযান চলবে না— এটি ভেবে বহু মদ্যপ ওই চোলাই ঠেককে বেশ নিরাপদ মনে করতেন। কিন্তু ঠেকটি বন্ধ করা জরুরি হয়ে পড়েছিল।’’

চোলাই-কাণ্ডে দলীয় নেতার নাম জড়ানোয় ক্ষোভ ছড়িয়েছে তৃণমূলের অন্দরে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক তৃণমূল কাউন্সিলর বলেন, ‘‘সুকুমারকে চোলাই কারবার বন্ধ করার ব্যাপারে দলীয়ভাবে বহুবার জানানো হয়েছে। কিন্তু উনি শোনেননি। এতে আমাদের দলেরই বদনাম হচ্ছে।’’ পাঁশকুড়া পুরসভার চেয়ারম্যান নন্দকুমার মিশ্র অবশ্য এ ব্যাপারে বলেন, ‘‘প্রথমবার শুনলাম। খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে।’’ আর কাউন্সিলর সুকুমারের দাবি, ‘‘আমার বাড়ির কেউ চোলাই ব্যবসার সাথে যুক্ত নন।’’

তবে শাসক দলের নেতার যাই বলুক না কেন, এ নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি বিরোধীরা। পাঁশকুড়া পুরসভার বিরোধী তথা বিজেপির নেতা সিন্টু সেনাপতি বলেন, ‘‘তৃণমূল নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী চোলাইয়ে মৃতদের দু’লক্ষ টাকা দিচ্ছেন। অন্য দিকে তাঁর দলেরই নেতারা চোলাইয় ব্যবসা করে সেই টাকার ব্যবস্থা করে দিচ্ছেন!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Hooch TMC West Bengal Police
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE