Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

রোজা ভেঙে রক্তদান, নজির নাজিরের

সপ্তাহ খানেক আগে মেদিনীপুর মেডিক্যালে ভর্তি হন বছর তেতাল্লিশের বুলুদেবী। বাড়ি ঝাড়গ্রামের বাঁধগড়ায়। বুলুদেবীর ছেলে সৌভিক সিংহ মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। হাসপাতাল সূত্রে খবর, রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা অত্যধিক কমে যাওয়ায় বুলুদেবীর অবস্থা এখন সঙ্কটজনক।

নাজির হাসান। নিজস্ব চিত্র

নাজির হাসান। নিজস্ব চিত্র

বরুণ দে
মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ০৭ জুন ২০১৮ ০৩:৩১
Share: Save:

খবরটা যখন এল তখন তিনি ক্লাসে। জানলেন, তাঁদের কলেজেরই এক ছাত্রের মা গুরুতর অসুস্থ। বি-নেগেটিভ রক্ত লাগবে। ক্লাস থেকেই রক্ত দিতে ছুটলেন নাজির হাসান। রোজা ভেঙে রক্ত দিলেন বুলু সিংহকে।

জীবনের প্রথম রক্তদানেই নজির গড়েছেন মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র নাজির। হবু ডাক্তার নাজির বলছেন, ‘‘মুমুর্ষুকে রক্ত দেওয়া কতটা জরুরি আমি বুঝি। তাছাড়া আমার যে গ্রুপ, সেই বি-নেগেটিভ রক্ত সহজে মেলে না। তাই রোজা ভেঙে রক্ত দেওয়ার আগে আর কিছু ভাবিনি।’’ নাজিরের বিশ্বাস, ধর্ম পালনের থেকেও মানুষের জীবন বাঁচানোটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। ক’দিন আগে বিহারের দ্বারভাঙার তরুণ মহম্মদ আসফাক সদ্যোজাতকে বাঁচাতে রোজা ভেঙে রক্ত দেন। তারপর এ রাজ্যেও কোচবিহার থেকে বনগাঁ, রোজার উপবাস ভেঙে রক্তদানের একাধিক দৃষ্টান্ত সামনে এসেছে। সেই তালিকায় এ বার জুড়ল নাজিরের নাম। তাঁকে নিয়ে গর্বের শেষ নেই মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষককের। অধ্যক্ষ পঞ্চানন কুণ্ডু বলছেন, “মানুষের প্রাণ বাঁচানোটাই সব থেকে বড় ধর্ম। এমন ছাত্ররাই আমাদের গর্ব।’’

সপ্তাহ খানেক আগে মেদিনীপুর মেডিক্যালে ভর্তি হন বছর তেতাল্লিশের বুলুদেবী। বাড়ি ঝাড়গ্রামের বাঁধগড়ায়। বুলুদেবীর ছেলে সৌভিক সিংহ মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। হাসপাতাল সূত্রে খবর, রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা অত্যধিক কমে যাওয়ায় বুলুদেবীর অবস্থা এখন সঙ্কটজনক। সিসিইউ-তে ভেন্টিলেশনে রয়েছেন তিনি। বুলুদেবীর অবস্থার অবনতি হওয়ায় মঙ্গলবার দুপুরে দু’ইউনিট রক্তের প্রয়োজন পড়ে। বি-নেগেটিভ গ্রুপের রক্ত পাওয়া সহজ নয়। তাই বুলুদেবীর জন্য চেনা-পরিচিতের মধ্যেই রক্তের খোঁজ শুরু হয়। দেখা যায়, মেডিক্যাল কলেজের দুই ছাত্রের রক্তের গ্রুপ বি-নেগেটিভ। নির্মাল্য রায় এবং নাজির হাসান। নির্মাল্য রক্ত দেন। কিন্তু রোজা করছেন বলে নাজিরের রক্ত দেওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যা ছিল। উপবাসের মধ্যে রক্ত দিলে অসুস্থও হয়ে পড়তে পারতেন। তাই ফল খেয়ে রোজা ভেঙেই রক্ত দেন নাজির। এমন সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানাচ্ছেন মেদিনীপুরের বেতরা মসজিদের ইমাম হাফেজ শেখ ওলি মহম্মদ। তাঁর কথায়, “রোজা ভেঙে রক্ত দিয়ে কেউ যদি কারও জীবন বাঁচায় তাহলে তার থেকে ভাল আর কিছু হয় না।” যে দুই ছাত্র রক্ত দিয়েছেন, সেই নাজির ও নির্মাল্যকে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন বুলুদেবীর ছেলে সৌভিক। তিনি বলেন, “সিনিয়র ওই দুই দাদার কাছে কৃতজ্ঞ। এখন শুধু চাই মা তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠুক।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Ramadan Muslim Community Blood Donation
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE