Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

প্লাস্টিকে ঢোকানো মৃত ছাত্রের মাথা, নেপথ্যে কী অনলাইনের মারণখেলা?

তদন্তকারীরা জানাচ্ছেন, কম্পিউটার গেম খেলতে ভালবাসত অঙ্কন। এ দিন সকালে দীর্ঘক্ষণ সে কম্পিউটারে ঠিক কী করছিল, কোনও গেম খেলছিল কিনা, বা ইন্টারনেটে বিশেষ কিছু দেখছিল কিনা, সব খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ১৩ অগস্ট ২০১৭ ০১:২৩
Share: Save:

শৌচাগারের মেঝেতে চিৎ হয়ে পড়ে দেহ। মাথাটা বড়সড় প্লাস্টিকের মধ্যে ঢোকানো। আর গলার কাছে দড়ির ফাঁস। এই অবস্থায় দশম শ্রেণির এক ছাত্রের মৃতদেহ উদ্ধার ঘিরে শোরগোল পড়েছে পশ্চিম মেদিনীপুরের কেশপুরের আনন্দপুরে। শনিবার দুপুরে শৌচাগারে স্নান করতে যায় অঙ্কন দে (১৬) নামে ওই ছাত্র। দীর্ঘক্ষণ না বেরনোয় মা ডাকাডাকি করেন। কিন্তু সাড়া মেলেনি। পরে দরজা ভেঙে ওই অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায় অঙ্কনকে। তড়িঘড়ি কেশপুর গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে গেলেও বাঁচানো যায়নি।

চিকিৎসকেদের অনুমান, শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মারা গিয়েছে অঙ্কন। পুলিশের ধারণা, আত্মহত্যাই করেছে ওই কিশোর। কিন্তু কেন তা স্পষ্ট নয়। এ ক্ষেত্রে মাথা প্লাস্টিকে ঢোকানো ও গলায় দড়ির ফাঁস থাকার বিষয়টি ভাবাচ্ছে তদন্তকারীদের। চকবাজারের বাসিন্দা অঙ্কন আনন্দপুর হাইস্কুলের ছাত্র ছিল। তার বাবা গোপীনাথ দে-র কেব্‌ল সংযোগের ব্যবসা রয়েছে। বাড়ির অদূরে তাঁর অফিস। প্রাথমিক ভাবে পুলিশ জেনেছে, এ দিন সকালে দীর্ঘক্ষণ বাবার অফিসের কম্পিউটারে বসেছিল অঙ্কন। দুপুরে বাড়ি ফেরার পরেই ওই কাণ্ড।

তদন্তকারীরা জানাচ্ছেন, কম্পিউটার গেম খেলতে ভালবাসত অঙ্কন। এ দিন সকালে দীর্ঘক্ষণ সে কম্পিউটারে ঠিক কী করছিল, কোনও গেম খেলছিল কিনা, বা ইন্টারনেটে বিশেষ কিছু দেখছিল কিনা, সব খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অনলাইন দুনিয়ায় নানা ধরনের ‘সুইসাইড গেম’ রয়েছে। সে সব খেলতে গিয়ে কিশোর-কিশোরীরা বিপত্তিও ঘটায়। সম্প্রতি ‘ব্লু হোয়েল’ নামে এক অনলাইন গেম খেলতে গিয়ে মুম্বইয়ের স্কুলছাত্র বহুতল থেকে ঝাঁপ দিয়ে মারা যাওয়ায় আলোড়ন পড়ে। অঙ্কনও তেমন কোনও মারণ খেলার শিকার হল কিনা, তা দেখছে পুলিশ। জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, “এ ক্ষেত্রে আত্মহত্যার ধরনটাই ভাবাচ্ছে। ওই ছাত্র ব্লু হোয়েলের শিকার নয়। তবে সে কম্পিউটারে কী করছিল, তা আমরা খুঁটিয়ে দেখছি।” কেশপুরের ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক তুহিন মাইতিরও বক্তব্য, “কিছুই বোঝা যাচ্ছে না। ময়নাতদন্তের জন্য দেহ মেদিনীপুরে পাঠানো হয়েছে। রিপোর্ট এলে মৃত্যুর কারণ স্পষ্ট হবে।” একই সঙ্গে তুহিনবাবুর পরামর্শ, “বাচ্চারা মোবাইল বা কম্পিউটারে কী করছে, তা নজরে রাখা উচিত। অস্বাভাবিক কিছু দেখলেই কথা বলা জরুরি।”

বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান ছিল অঙ্কন। ডাক নাম রাজ। ওই নামেই এলাকায় পরিচিত ছিল সে। চনমনে এই কিশোরের এমন মৃত্যুতে সকলেই হতভম্ব। বাবা গোপীনাথবাবু ও মা শম্পাদেবী কথা বলার অবস্থায় নেই। কেশপুর পঞ্চায়েত সমিতির সভানেত্রী শুভ্রা দে সেনগুপ্তের খুড়তুতো ভাই ছিল অঙ্কন। শুভ্রাদেবীও বলছিলেন, “ও খুব ছটফটে ছিল। বাড়িতে কোনও অশান্তিও হয়নি। কোত্থেকে যে কী হয়ে গেল, কিছুই বুঝতে পারছি না।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE