Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

দুয়ার এঁটে রাতে ঘুম পুলিশের

কলেবরে নয়াচরের জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেলেও থানার পরিকাঠামোর  পরিবর্তন হয়নি। থানায় নেই গাড়ি। তার বদলে রয়েছে একটি মোটরবাইক। সেটিও অচল। তাই কোনও ঘটনা ঘটলে সাইকেলে চড়েই ঘটনাস্থলে যান পুলিশকর্মীরা।

এমনই অবস্থা নয়াচরের। নেই কোনও পাকা রাস্তাঘাট। নিজস্ব চিত্র

এমনই অবস্থা নয়াচরের। নেই কোনও পাকা রাস্তাঘাট। নিজস্ব চিত্র

আরিফ ইকবাল খান
নয়াচর শেষ আপডেট: ১১ মার্চ ২০১৮ ০১:৪৯
Share: Save:

দুষ্কৃতীদের ধাওয়া করতে সাইকেলই ভরসা নয়াচর থানার! আর অন্ধকার নামলেই কার্যত দুয়ার এঁটে বসে থাকতে বাধ্য হন পুলিশকর্মীরা।

একটি দোতালা বাড়ি তৈরি করে ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে চালু হয়েছিল নয়াচর থানা। কিন্তু গত দু’বছরেও সেখানে তৈরি হয়নি পর্যাপ্ত পরিকাঠামো।

রাসায়নিক হাব তৈরির বিতর্কে খবরের শিরোনামে এসেছিল হুগলি এবং হলদি নদীর মোহনায় ৬৪ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে থাকা নয়াচর। হলদিয়া ব্লকের মধ্যে পড়া ওই দ্বীপের জনসংখ্যা সে সময় ছিল মাত্র আড়াই হাজার। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে এ সবের পরিমাণ বেড়েছে। স্থানীয় মৎস্যজীবী ইউনিয়ন সূত্রের খবর, বর্তমানে নয়াচরে রাজ্যের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা আনুমানিক আট হাজার মানুষের বাস। প্রশাসনিকভাবে কোনও তথ্য না মিললেও প্রতিদিনই নতুন নতুন মানুষ নয়াচরে যাচ্ছেন। যাঁদের বেশিরভাগই মৎস্যজীবী।

কলেবরে নয়াচরের জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেলেও থানার পরিকাঠামোর পরিবর্তন হয়নি। থানায় নেই গাড়ি। তার বদলে রয়েছে একটি মোটরবাইক। সেটিও অচল। তাই কোনও ঘটনা ঘটলে সাইকেলে চড়েই ঘটনাস্থলে যান পুলিশকর্মীরা। প্রয়োজনে ওই সাইকেলেই ধাওয়া করতে হয় দুষ্কৃতীদের। স্থানীয়দের অবশ্য বক্তব্য, গাড়ি থেকেও পুলিশের কোনও লাভ হত না। কারণ, নয়াচরের যাতায়াতের জন্য পাকা রাস্তাই নেই।

থানায় বিদ্যুতের সংযোগ নেই। সৌরবিদ্যুতেই ভরসা পুলিশকর্মীদের। তবে সেই বিদ্যুতও পর্যাপ্ত নয়। খাতায় কলমে থানায় দুজন পুলিশ আধিকারিক এবং ১০ জন কনস্টেবল থাকা দরকার। কিন্তু বাস্তবে সে রকম কিছুই নেই। জেটি ঘাট দিয়ে প্রতিদিন এলাকায় যাচ্ছেন বহু মানুষ। জলপথে অসামাজিক কাজের সুবিধা থেকে যায়। এই পরিস্থিতিতে জেটিঘাট থেকে থানা পর্যন্ত নজরদারি ক্যামেরা নেই।

জলপথ দিয়ে দ্বীপে পৌঁছে যে কেউ গোপনে ঘাঁটি গেড়ে থাকতে পারেন, সে কথা মেনে নিচ্ছে হলদিয়া মহকুমার পুলিশ। তবে তাদের বক্তব্য, নয়াচরে রাস্তাঘাট নেই। বর্ষার সময় এলাকায় যাতায়াত করা দুর্বিসহ হয়ে যায়। এ রকম অবস্থায় দুষ্টের দমন কল্পনা ছাড়া আর কিছু নয়। নয়াচর কোস্টাল থানায় কর্তব্যরত এক পুলিশকর্মী বলেন, ‘‘রাতে অন্ধকারে মশারি খাটিয়ে ঘুমিয়ে থাকতে হয়। বেরনোর কোনও উপায় নেই। আলো নেই। সাপের উপদ্রব। টর্চ আর সাইকেল নিয়ে ভেড়ির আল ধরে কতদূরই বা যাব?’’

নয়াচর মৎস্যজীবী উন্নয়ন সমিতির তরফেও থানার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। সমিতির সভাপতি বনবিহারি পাল বলেন, ‘‘এখানে মাছের ভেড়ি দখল নিয়ে হামেশাই ঝামেলা বাধে। সে সময় পুলিশ নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে। থানাকে শক্তিশালী করা দরকার। তপন প্রামাণিক নামে এক মৎস্যজীবী জানান, নয়াচরের বাবলাতলা এবং খেজুরতলায় হামেশাই ঝামেলা হয়। বাইরের মানুষের সঙ্গে স্থানীয় মানুষের এলাকা দখল নিয়ে গন্ডগোল হয়। তাঁর কথায়, ‘‘বাবলাতলা এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনার দিকে লঞ্চে করে পুলিশি প্রহরার প্রয়োজন।’’

গোটা ব্যাপারে হলদিয়ার এসডিপিও তন্ময় মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘নয়াচরে থানার পরিকাঠামোর উন্নতির প্রয়োজন। রাস্তা না থাকায় পুলিশের মুভমেন্টে সমস্যা হয়।’’ হলদিয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কাজি সামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘‘নয়াচর থানার পুলিশকে ঘটনাস্থলে পৌঁছনোর জন্য সাইকেল দেওয়া হয়েছে।’’ তবে থানার পরিকাঠামোর উন্নতির পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন পূর্ব মেদিনিপুরের পুলিস সুপার ভি সোলেমন নেসকুমার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Nayachar Nayachar police station infrastructure
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE