Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

ব্যক্তিগত শৌচাগারও নির্মল! দাঁতনের গ্রামে ‘দুর্নীতি’, কাঠগড়ায় শাসকদল

গ্রামের অধিকাংশ মানুষ নিম্নবিত্ত। পঞ্চায়েত থেকে মিশন নির্মল বাংলা প্রকল্পে শৌচাগার করতে তাদের টাকা নেওয়া হয়েছে। অথচ দেড় বছর কেটে গেলেও শৌচাগার হয়নি। অভিযোগ, অনেক উপভোক্তাকে টাকা দেওয়া হয়নি, আবার অনেকের ব্যক্তিগত শৌচাগারে মিশন নির্মল বাংলার বোর্ড লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। 

শৌচাগারের পাশে লাগানো হয়েছে বোর্ড। নিজস্ব চিত্র

শৌচাগারের পাশে লাগানো হয়েছে বোর্ড। নিজস্ব চিত্র

বিশ্বসিন্ধু দে
দাঁতন শেষ আপডেট: ১৪ অগস্ট ২০১৮ ০১:৩৭
Share: Save:

গ্রামের অধিকাংশ মানুষ নিম্নবিত্ত। পঞ্চায়েত থেকে মিশন নির্মল বাংলা প্রকল্পে শৌচাগার করতে তাদের টাকা নেওয়া হয়েছে। অথচ দেড় বছর কেটে গেলেও শৌচাগার হয়নি। অভিযোগ, অনেক উপভোক্তাকে টাকা দেওয়া হয়নি, আবার অনেকের ব্যক্তিগত শৌচাগারে মিশন নির্মল বাংলার বোর্ড লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে।

এমনই দুর্নীতির অভিযোগে সরব হয়েছেন পশ্চিম মেদিনীপুরের দাঁতন ১ ব্লকের শালিকোঠা গ্রাম পঞ্চায়েতের অস্তি ও কাঁটাগেড়িয়া গ্রামের মানুষ। তাঁদের দাবি, পঞ্চায়েত প্রধানকে বারবার জানালেও কোনও বিহিত হয়নি। গত ৩০ জুন কেন্দ্রীয় অডিট টিম গ্রাম পরিদর্শনে এলে তাঁদের কাছেও গ্রামবাসী ক্ষোভ জানান, লিখিত অভিযোপত্র জমা দেন। সেখানে জানানো হয়েছে, ১৫টি শৌচাগার অসমাপ্ত, ১৮ বাড়ি শৌচাগারহীন ও প্রধানের নির্দেশে শৌচাগার নিজ দায়িত্বে বানিয়ে নেওয়ার পরেও টাকা পাননি ১৮ জন। অস্তি কাঁটাগেড়িয়া গ্রামের মানুষের অভিযোগ, এলাকার তৃণমূলের বুথ সভাপতি সহদেব মাইতি ও বিদায়ী পঞ্চায়েত সদস্য শ্রীনিবাস চন্দ বাড়ি বাড়ি শৌচাগার বানিয়ে দেওয়ার জন্য অর্থ নিয়ে যান। কিন্তু কাজ সে ভাবে হয়নি।

শৌচাগার না থাকায় মাঠে-ঘাটে মলমূত্র ত্যাগ চলছে, দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। বর্ষায় ভোগান্তি বেড়েছে। অষ্টম শ্রেণির এক ছাত্রী মানছে, ‘‘মাঠেই শৌচকর্মে যাই।’’ অস্তি গ্রামের বাসিন্দা অরুণকুমার দে, নগেনচন্দ্র দে, চন্দন দাসেদের শৌচাগার তৈরির কাজ অসমাপ্ত রয়েছে।

তাঁরা বলছেন, ‘‘প্রায় দু’বছর হল অর্ধেক কাজ করে ফেলে রেখেছে। আমরাও কাজ এগোতেতে পারছি না। কী করব? বড় সমস্যার মধ্যে পড়েছি।’’ গ্রামবাসী জানাচ্ছেন, শৌচাগার পেতে ন’শো টাকা করে জমা নিয়েছে পঞ্চায়েত। অথচ কাজ হয়নি। এই প্রকল্পে শৌচাগার তৈরির জন্য উপভোক্তারা পান ১০ হাজার ৯০০ টাকা করে। গ্রামবাসীর মতে, এ থেকে বোঝা যাচ্ছে কত টাকার দুর্নীতি হয়েছে।

শৌচাগার দুর্নীতি নিয়ে এলাকায় ক্ষোভ যথেষ্ট। অস্তি-কাঁটাগেড়িয়া বুথে এ বার জিতেছে বিজেপি। নব-নির্বাচিত বিজেপির পঞ্চায়েত সদস্য মল্লিকা মাইতি বলেন, ‘‘দুর্নীতির বিহিত চাই। আমরা চাই সবাই সমান পরিষেবা পাক।’’ দাঁতনের তৃণমূল বিধায়ক তথা দলের ব্লক সভাপতি বিক্রমচন্দ্র প্রধানের দাবি, ‘‘কেন্দ্র সব টাকা দেয়নি। তাই ঠিকাদার সংস্থা কাজ না করে চলে গিয়েছে। টাকা এলে নিশ্চয়ই শৌচাগার হবে।’’ সিপিএমের কিছু লোক বিজেপিতে এসে ভিত্তিহীন অভিযোগ করছে বলে দাবি বিক্রমবাবুর।

অভিযুক্তেরা অবশ্য দুর্নীতির কথা মানতে নারাজ। তৃণমূলের বুথ সভাপতি সহদেব বলেন, ‘‘অভিযোগ ভিত্তিহীন। প্রধান ও পঞ্চায়েতের সদস্যরা সবাই বসে নিয়ম মেনেই ২০০৯ সালে উপভোক্তা তালিকা তৈরি হয়েছিল।’’ আর শ্রীনিবাসের দাবি, ‘‘অঞ্চল অফিসে টাকা জমা দিয়েছি। সে হিসেবে আমি উপভোক্তা। তবে আমরা কেউই টাকা পাইনি।’’ এ প্রসঙ্গে শালিকোঠা গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান সঞ্জিদা বিবির বক্তব্য, ‘‘টাকা কিছু এসেছে। যাঁদের প্রাপ্য তাঁদের দিয়ে দেওয়া হবে। মূলত এই কাজের সঙ্গে যে ঠিকাদার সংস্থা যুক্ত ছিল তারাই এই সমস্যা করেছে।’’ আর পুরনো শৌচাগারে মিশন নির্মল বাংলার বোর্ড লাগানোর বিষয়টি তাঁর জানা নেই বলে দাবি করেছেন প্রধান।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Home Toilet
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE