Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
নিয়মের বালাই নেই

ফেরি রাজ্যে প্রাণের ঝুঁকি

ফেরিঘাটে নিয়ম চলে না— জানেন নিত্যযাত্রীরা। সেখানে শুধুই নেই রাজ্য, আর নিয়ম ভাঙার নিয়ম। এ নিয়ে সম্প্রতি নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন। হুগলি, হলদিয়ার পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে পদক্ষেপের কথা বলেছেন পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী।

ঝুঁকি: আঘাটা থেকেই নৌকায় ওঠেন যাত্রীরা। ছবি: কৌশিক সাঁতরা

ঝুঁকি: আঘাটা থেকেই নৌকায় ওঠেন যাত্রীরা। ছবি: কৌশিক সাঁতরা

অভিজিৎ চক্রবর্তী
ঘাটাল শেষ আপডেট: ১৩ নভেম্বর ২০১৭ ০৬:৩০
Share: Save:

ফেরিঘাটে নিয়ম চলে না— জানেন নিত্যযাত্রীরা। সেখানে শুধুই নেই রাজ্য, আর নিয়ম ভাঙার নিয়ম। এ নিয়ে সম্প্রতি নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন। হুগলি, হলদিয়ার পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে পদক্ষেপের কথা বলেছেন পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী। ঘাটালের অবস্থাও অবশ্য ব্যতিক্রমী কিছু নয়। শিলাবতী, রূপনারায়ণ, কংসাবতী, ঝুমির উপর সেতু রয়েছে হাতে গোনা। বেশির ভাগ এলাকায় সামান্য বাঁশের সাঁকোও নেই। ভরসা নৌ-পারাপার। এবং সেখানকার অবস্থায় মনে মনে ভয় পান যাত্রীরা। প্রশাসনের নজর নেই বলে অভিযোগ করেন তাঁরাই। আবার ফেরি কর্মীরা আঙুল তোলেন যাত্রীদের দিকে।

সম্প্রতি জেলাশাসকের সঙ্গে বৈঠকে এ বিষয়ে কথা বলেছেন পরিবহণমন্ত্রী। তাঁর নির্দেশ পেয়ে জেলা প্রশাসন ঘাটগুলি পরিদর্শন শুরুও করেছে। তারপর কোনও ফেরিঘাটেই যে নৌকা চলাচলের পরিস্থিতি নেই তা জানিয়ে গোপন রিপোর্টও জমা দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট আধিকারিক। বিশেষ করে রানিচক, গোপীগঞ্জ, কৈজুড়ি, দুধকোমরা, হরিশপুর প্রভৃতি ফেরিঘাটে জরুরি ভিত্তিতে পরিকাঠামো তৈরির উপর জোর দেওয়ার কথাও উঠে এসেছিল সরকারি তদন্তে। কিন্তু কাজ এতটুকুও এগোয়নি।

ঘাটাল জনপদটি হাওড়া, হগলি ও পূর্ব মেদিনীপুর— তিনটি জেলার সীমানাবর্তী। নানা কাজেই নদী পেরিয়েই পশ্চিম মেদিনীপুর-সহ চারটি জেলার হাজার হাজার মানুষ প্রতিদিন যাতায়াত করেন। রূপনারায়ণ পেরোলেই দাসপুরের এক প্রান্তের মানুষ পৌঁছে যেতে পারেন হাওড়ার বাগনানে। কিংবা, হাওড়ার জয়পুর হয়ে কলকাতা। আবার জয়পুর বা বাগনানের বাসিন্দারাও বিভিন্ন কাজে ঘাটালে আসেন। একই রকম ভাবে জলপথে হুগলির খানাকুল‌ এবং আরামবাগ যেতেও খুব কম সময় লাগে। ফলে চাপ বাড়ছে ফেরিঘাটগুলিতে।

ঘাটাল মহকুমায় ২৯টি ফেরিঘাট রয়েছে সরকার অনুমোদিত। অবৈধ ফেরিঘাটের সংখ্যাটাও কম নয়। ভুক্তভোগীরা অবশ্য জানাচ্ছেন, বৈধ বা অবৈধে কিছু এসে যায় না। সমস্ত ফেরিঘাটেই একই ছবি।

মহকুমা প্রশাসন সূত্রের খবর, জেলা পরিষদ ফেরিঘাটগুলির অনুমোদন দিলেও নিরাপত্তা বা অন্য বিষয়গুলি দেখভাল করে পরিবহণ দফতর। নিয়মানুযায়ী, প্রতি ফেরিঘাটে লকগেট এবং জেটি থাকতেই হবে। যাতায়াতের জন্য অ্যাপ্রোচ রোডও চওড়া হতে হবে। মাঝিমাল্লাদের প্রশিক্ষণ-সহ নামের তালিকাও প্রশাসনের কাছে থাকতে হবে। সে সব কিছুই প্রায় নেই প্রশাসনের কাছে।

নেই আলো, সিসি ক্যামেরার ব্যবস্থাও। সূর্য ডুবে গেলে নৌকা চলাচল বন্ধ করে দেওয়াই দস্তুর— এখানে মানা হয় না সে নিয়মও। নেই লাইফ জ্যাকেট পরার ব্যবস্থা। এক একটি নৌকায় ৪৫-৫০ জন করে যাত্রী তোলা হয় বলেও অভিযোগ।

দুধকোমরার এক মাঝিও বললেন, “সরকারের কোনও নজর নেই। ভিড়ের সময় আমরা অভিজ্ঞতার মাধ্যমে ঠিক করি কতজন যাত্রী তোলা হবে। কিন্তু যাত্রীদের চাপে পড়ে অনেক সময়ই ঝুঁকি নিয়ে অতিরিক্ত যাত্রী তোলা হয়।” ভিড়ের চাপে নৌকা যখন টালমাটাল তখন আবার যাত্রীরাই ভয়ে কম্পমান। ঘাটালের হরিশপুরের এক স্কুল ছাত্রীর কথা, “নৌকায় চেপেই স্কুলে যেতে হয়। মাঝে মধ্যে এত ভিড় হয়, মনে হয় জলে প়়ড়ে যাব। কিন্তু সে ভাবেই যেতে, উপায় নেই।” একই বক্তব্য অন্য যাত্রীদেরও।

অথচ, নদিয়া ও বর্ধমান সীমান্তের কালনা ঘাটে নৌকা ডুবির পর ফেরিঘাটগুলির হাল ফেরাতে উদ্যোগী হয়েছে সরকার। জোর দেওয়া হয়েছে ফেরিঘাটগুলির পরিকাঠামো উন্নয়নে, নজরদারিতে। আইন না মানলে সংশ্লিষ্ট ফেরিঘাট বন্ধ করে দেওয়ার কথাও বলা হয়েছে বারবার। তবু ফেরেনি হুঁশ।

ঘাটালের মহকুমাশাসক পিনাকী রঞ্জন প্রধান বলেন, “ঘাটালে দ্রুত চারটি ফেরিঘাট সংস্কার শুরু হবে। ২০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ হয়েছে। বাকি ফেরিঘাটগুলিও দ্রুত সংস্কার শুরু করা হবে।” জেলার অতিরিক্ত পরিবহণ আধিকারিক অমিত দত্ত বলেন, “নিয়ম করেই এ বার ফেরিঘাটগুলির উপর নজরদারি চালানো হবে।” জেলা পরিষদের সহ-সভাধিপতি অজিত মাইতির কথায়, “ঘাটাল-সহ জেলার সমস্ত ফেরিঘাটগুলির উপযুক্ত পরিবেশ এবং পরিকাঠামোর উপর জোর দেওয়া হবে। মন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনাও হয়েছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE