বিদ্যুৎ নেই, তাই হাতপাখাই ভরসা। ছবি: কিংশুক গুপ্ত
বাজ পড়ে বিকল হয়ে গিয়েছে বিদ্যুতের ট্রান্সফর্মার। আট দিনেও ট্রান্সফর্মার মেরামত না হওয়ায় গরমে নাভিশ্বাস উঠছে কয়েক হাজার মানুষের। একসময় মাওবাদীদের খাসতালুক ঝাড়গ্রামের বাঁশতলা স্টেশন সংলগ্ন খাসডাহি গ্রামের ক্ষুব্ধ বাসিন্দাদের একটাই প্রশ্ন, এটাই কি তবে উন্নয়ন!
এই বাঁশতলা রেল স্টেশনেই ২০০৯ সালের অক্টোবরে জনগণের কমিটির জেলবন্দি নেতা ছত্রধর মাহাতোর মুক্তির দাবিতে ভুবনেশ্বর-দিল্লি রাজধানী এক্সপ্রেস থামিয়ে দিয়েছিল মাওবাদীরা। উদ্ধারে যাওয়ার যৌথবাহিনীর সঙ্গে গুলির লড়াইও হয়েছিল মাওবাদীদের। জঙ্গমহলের এমন একটি আট দিন বিদ্যুৎহীন হয়ে থাকায় শাসকদলকে বিঁধছেন বিরোধীরা।
গত ১২ এপ্রিল বিকেলে ঝড়-বৃষ্টির সময় বাজ পড়ে বিকল হয়ে যায় গ্রামের বিদ্যুতের ট্রান্সফর্মার। বিদ্যুৎ না থাকায় গ্রামের ২৫টি পরিবার সমস্যার মধ্যে পড়েছেন। বাঁশতলা স্টেশন লাগোয়া রাস্তার ধারের ব্যবসায়ীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। বিদ্যুতের অভাবে এলাকার পানীয় জল প্রকল্পের পাম্প চলছে না। সেচ দেওয়ার সাব মার্শিবল পাম্পগুলিও চালানো যাচ্ছে না। গরমে এলাকার পাতকুয়ো গুলির জলও শুকিয়ে গিয়েছে। ফলে পানীয় জল ও রোজকার ব্যবহারের জলেরও সঙ্কট দেখা দিয়েছে। এলাকায় বোরো ধান ও আনাজ চাষের জমিতেও সেচের জল দেওয়া যাচ্ছে না।
বাড়ির দাওয়ায় বসে হাতপাখায় হাওয়া খাচ্ছিলেন বৃদ্ধা সাবিত্রী মাহাতো। তিনি বলছেন, “গরমে আর পারছি না। আট দিন ধরে টেবিল ফ্যান চলছে না। তালপাতার পাখার বাতাস করে হাত ব্যথা হয়ে গিয়েছে। তেষ্টার জলও অমিল।” স্থানীয় বাসিন্দা স্বপন মাহাতো, অতুল মাহাতো, তপন মাহাতোরা জানালেন, পাশের গ্রামে যেখানে বিদ্যুৎ রয়েছে, সেখানে গাড়ি ভাড়া করে বড় জ্যারিকেনে করে জল নিয়ে আসছি। কিন্তু এ ভাবে জল আনতে গেলে অন্য গ্রামের বাসিন্দারা বিরক্ত হচ্ছেন। আপত্তি করছেন। স্নান ও কাপড় কাচার জন্য এলাকা থেকে জঙ্গলপথে কিলোমিটার দু’য়েক দূরে নুনিয়াকুন্দ্রি খালে যেতে হচ্ছে।
বাসিন্দারা জানালেন, এলাকায় বুনো হাতির উত্পাত লেগে থাকে। রাত বিরেতে তাই বাড়ির সামনে আলো জ্বেলে রাখেন বাসিন্দারা। কিন্তু এখন লোডশেডিংয়ের জেরে সন্ধ্যা হলেই অন্ধকারে ডুবে যাচ্ছে গ্রাম। আতঙ্কের রাত কাটাচ্ছেন বাসিন্দারা। রাতে আবার হাতির আতঙ্কে খাওয়া খেতে বাড়ির বাইরেও বেরোতে পারছেন না বাসিন্দারা। স্কুলপড়ুয়া নন্দন মাহাতো, ভানুমতী মাহাতোরা জানায়, “অন্ধকারে লম্ফ জ্বেলে রাতে পড়াশোনা করতে সমস্যা হচ্ছে। গরমেও রাতে ঘুমোতেও পারছি না।”
ঝাড়গ্রাম বিদ্যুৎ সরবরাহ কেন্দ্রের এক আধিকারিক বলেন, “এই মুহূর্তে আমাদের কাছে ১৬ কেভিএ ট্রান্সফর্মার মজুত নেই। দ্রুত ট্রান্সফর্মার এনে লাগানোর ব্যবস্থা করা হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy