মাতৃমার সামনে ভিড়। মঙ্গলবার। নিজস্ব চিত্র
করোনা- কালের এতদিনেও করোনা আক্রান্ত প্রসূতিদের জন্য পৃথক আইসোলেশন ওয়ার্ড গড়ে ওঠেনি মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে।
পরিণতি?
ঘটনা এক। ২ সেপ্টেম্বর গভীর রাত। শালবনি থেকে করোনা আক্রান্ত এক প্রসূতিকে পাঠানো হয়েছিল মেদিনীপুর মেডিক্যালে। শুরুতে ভর্তি নেওয়া হয়নি। প্রসব যন্ত্রণায় ছটফট করতে থাকেন প্রসূতি। শেষমেশ অ্যাম্বুল্যান্সের মধ্যেই সন্তানের জন্ম দেন তিনি। পরে তাঁকে ভর্তি নেওয়া হয়।
ঘটনা দুই। ৭ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা। ক্ষীরপাই থেকে আরেক করোনা আক্রান্ত প্রসূতিকে পাঠানো হয়েছিল মেদিনীপুর মেডিক্যালে। পিপিই কিট পরে অ্যাম্বুল্যান্সে এলেও শুরুতে প্রসূতিকে মেডিক্যালে ভর্তি নেওয়া হয়নি। প্রসব যন্ত্রণা নিয়ে প্রায় দু’ঘন্টা হাসপাতাল চত্বরেই ছটফট করতে থাকেন তিনি। অ্যাম্বুল্যান্স চালক হাসপাতাল চত্বরে প্রসূতিকে নামিয়ে চম্পট দেন। খবর পৌঁছয় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে। এরপর তাঁর ভর্তির বন্দোবস্ত হয়।
মা ও শিশুদের চিকিৎসায় মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ‘মাদার চাইল্ড হাব’ রয়েছে। এই ভবনের নাম ‘মাতৃমা’। করোনা আক্রান্ত প্রসূতিদের জন্য হাসপাতালে পৃথক আইসোলেশন ওয়ার্ড খোলা প্রয়োজন। না-হলে অন্য প্রসূতিরা সংক্রমিত হতে পারেন। মেডিক্যালে সেই ওয়ার্ডই নেই। তাই করোনা আক্রান্ত প্রসূতির পরিজনেদের এখানে-সেখানে ছুটতে হচ্ছে। কেন এখনও পৃথক আইসোলেশন ওয়ার্ড খোলা হল না? হাসপাতালের সুপার তন্ময়কান্তি পাঁজার জবাব, ‘‘পৃথক একটি রুমের বন্দোবস্ত হচ্ছে। এ বার থেকে ওই রুমেই করোনা আক্রান্ত প্রসূতি থাকবেন।’’ হাসপাতাল- কর্তৃপক্ষের আশ্বাস, চলতি সপ্তাহের মধ্যে এই ব্যবস্থা চালু হয়ে যাবে।
করোনা আক্রান্ত প্রসূতিদের ভর্তি নিয়ে চরম অব্যবস্থার অভিযোগ উঠেছে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বিরুদ্ধে। মেদিনীপুর মেডিক্যালের এই ‘মাদার চাইল্ড হাব’ ২৫০ শয্যার। বেশিরভাগই প্রসূতিদের জন্য। এই ভবনে ৫৬ শয্যার এসএনসিইউ রয়েছে, ১২ শয্যার পিআইসিইউ রয়েছে। হাসপাতালের অন্য কয়েকটি বিভাগের মতো প্রসূতি বিভাগের একাধিক চিকিৎসক, নার্স করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। এরপর উদ্বেগ আরও চেপে বসেছে। অভিযোগ, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীদের একাংশও করোনা আক্রান্ত প্রসূতির থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করছেন।
রাজ্যের তরফে প্রসূতিদের চিকিৎসার ক্ষেত্রে আলাদা একটি নির্দেশিকা জারি করা হয়েছিল আগেই। প্রসূতিদের করোনা উপসর্গ দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছিল হাসপাতালগুলিকে। অথচ, মেদিনীপুর মেডিক্যালে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হয়নি। সব দেখে হাসপাতালের পুরনো ‘লেবার রুম’ যেখানে ছিল, সেখানে পৃথক আইসোলেশন ওয়ার্ডের বন্দোবস্ত করা হচ্ছে। এখানে আপাতত ১০টি শয্যা থাকার কথা। হাসপাতালের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘এ বার থেকে করোনা আক্রান্ত প্রসূতি ওখানে থাকবেন। ওখানে লেবার রুমও থাকবে। প্রসূতিকে লেবার টেবিলে তোলা, প্রসব করানো— সবই ওখানে হবে।’’
হাসপাতাল সূত্রের খবর, আগেও দু’দফায় না কি এই ব্যবস্থা চালু করার চেষ্টা হয়েছিল। কোনও অজ্ঞাতকারণে সম্ভব হয়নি। হাসপাতালের সুপার তন্ময়কান্তি পাঁজা বলেন, ‘‘কর্মীর সমস্যা ছিল। সেই সমস্যা এখন মিটে গিয়েছে।’’
(জরুরি ঘোষণা: কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য কয়েকটি বিশেষ হেল্পলাইন চালু করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই হেল্পলাইন নম্বরগুলিতে ফোন করলে অ্যাম্বুল্যান্স বা টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত পরিষেবা নিয়ে সহায়তা মিলবে। পাশাপাশি থাকছে একটি সার্বিক হেল্পলাইন নম্বরও।
• সার্বিক হেল্পলাইন নম্বর: ১৮০০ ৩১৩ ৪৪৪ ২২২
• টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-২৩৫৭৬০০১
• কোভিড-১৯ আক্রান্তদের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-৪০৯০২৯২৯)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy