নিয়ম নাস্তি। মেদিনীপুরের কেরানিতলায়। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল।
নিয়ম ভাঙার গতি!
নজরে শুধু গতিবেগের কাঁটা। ৬০, ৭০, ৮০…। এখানেই থামা নয়। ছুটতে হবে আরও জোরে। গতির উড়ানে জয়টাই আসল। সেখানে তুচ্ছ নিজের জীবনও।
দিনের বেলা তো বটেই। রাতেও মেদিনীপুর ও খড়্গপুর দুই শহরেই চলে বাইকের ‘রেস’। একটু বেসামাল হলেই ঘটতে পারে ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনা। নজর নেই কারও।
গত শনিবার রাতে খড়্গপুরের পুরীগেট উড়ালপুল থেকে ছোটাট্যাংরার দিকে নামার সময়ে বাইক উল্টে মৃত্যু হয় বছর আঠারোর এক তরুণের। উড়ালপুলের বাঁকে গার্ডওয়ালে ধাক্কা মেরে বাইকটি উল্টে যায়। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের দাবি, তাঁরা দ্রুত গতিতে বাইক চালানোয় দুর্ঘটনাটি ঘটেছে।
শুধু বাইক আরোহী নয়, এই দুরন্ত গতির বলি হতে হয় সাধারণ পথচারীকেও। এমন নজিরও রয়েছে। ২০১৪ সালের ২৬ এপ্রিল খড়্গপুর শহরের ট্রাফিকের রাস্তা ধরে ইন্দার দিকে যাচ্ছিলেন স্নাতকোত্তর পড়ুয়া সৌরভ নন্দ। পিছন থেকে দ্রুত গতিতে আসা একটি বাইকের ধাক্কায় মৃত্যু হয় সৌরভের। ঘটনার আট মাস পরে গ্রেফতার হয় অভিযুক্ত যুবক। মৃতের দাদা সৌগত নন্দ বলেন, “ভাইয়ের মৃত্যুর শোক আজও ভুলতে পারিনি। বেপরোয়া বাইক চালকের দৌরাত্ম্যেই আমার ভাইয়ের প্রাণ গিয়েছিল। আর এখন এই বাইক চালকদের সংখ্যা বহুগুণ বেড়ে গিয়েছে।’’
পথ নিরাপত্তার বেহাল দশা নিয়ে সম্প্রতি উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যদিও পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার সদর শহর মেদিনীপুরেও প্রায়শই মোটরবাইক দুর্ঘটনা হয়। পুলিশের এক সূত্রে খবর, পথ দুর্ঘটনায় মৃতদের একটা বড় অংশই হলেন মোটরবাইক চালক অথবা আরোহী। যাদের ৮০ শতাংশই মাথায় আঘাত পেয়ে থাকেন। হেলমেট ব্যবহার করলে মৃত্যু ঠেকানো যেতে পারে।
মেদিনীপুরের অলিগঞ্জ গার্লস হাইস্কুলের পরিচালন সমিতির সভাপতি সুব্রত সরকারের কথায়, “রাতে কিছু যুবক বেপরোয়া বাইক চালায়। জোরে হর্ন বাজায়। ওই যুবকেরা যদি কাউকে ধাক্কা দেয় তাহলে তার মৃত্যু নিশ্চিত।” জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, “এ বার বেপরোয়া বাইকের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করা হবে। পথ দুর্ঘটনা আমরা কিছুতেই আটকাতে পারছি না। এ বার সচেতনতা কর্মসূচি হবে।” তিনি আরও বলেন, “প্রয়োজনের তুলনায় ট্রাফিক পুলিশের সংখ্যা কম। ফলে, অনেক সময়ই বিধি ভেঙে যারা মোটরবাইক চালায়, তাদের বিরুদ্ধে আইনত পদক্ষেপ করা যায় না। দ্রুত গতিতে মোটরবাইক চালানোর ফলে বিপত্তিও ঘটছে।”
বাইকের দাপটে রাস্তায় বেরোলে ভয়েই থাকেন খড়্গপুরের সুভাষপল্লির বাসিন্দা ব্যবসায়ী ভোলা পাল বলেন, “শহরের মালঞ্চ, পুরীগেট, নিমপুরা রোডের মতো রাস্তায় চলতে রীতিমতো ভয় লাগে। নিজে আস্তে চালালেও বেপরোয়া বাইক চালকের দাপটে প্রাণ সংশয় হয়। পুলিশের আরও কড়া হওয়া উচিত।” পুলিশ সূত্রে খবর, প্রতি মাসে বেপরোয়া দু’শোটি বাইক ধরে মামলা রুজুর লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। এ নিয়ে খড়্গপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অভিষেক গুপ্ত বলেন, “বেপরোয়া বাইক চালকদের আটকানো খুব মুশকিল। বাইক দ্রুত গতিতে থাকায় ধরা যায় না। এ ক্ষেত্রে সচেতনতা বাড়াতে পদক্ষেপ করব।”
শুধু এই দুই শহর নয়। দুর্ঘটনা বাড়ছে গোটা পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা জুড়ে। পরিসংখ্যান অন্তত তাই বলছে। প্রশাসনের এক সূত্র জানাচ্ছে, জেলায় বছরে গড়ে ৬৫৪টি পথ দুর্ঘটনা ঘটে। মৃত্যু হয় গড়ে ৩৩৯ জনের। জখম হন গড়ে ৭১৬ জন। এখনই রাশ না টানলে ভবিষ্যতে শহর মেদিনীপুরে পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার আশঙ্কাও করছেন একাংশ বাসিন্দা।
শহরের বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, মেদিনীপুর শহরের রাস্তা সম্প্রসারণের বদলে রাস্তার সঙ্কীর্ণ হয়ে যাচ্ছে। শহর ও শহরতলিতে মোটরবাইকের সংখ্যাও আগের থেকে অনেক বেড়েছে। যদিও বাইকগুলি পথবিধি মেনে চলছে কিনা, তা দেখার জন্য পর্যাপ্ত পুলিশ রাস্তায় থাকে না। পুলিশ আরও কড়া হলে পরিস্থিতি বদলাতে বাধ্য।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy