দেদার: ঝাড়গ্রামে উদ্ধার হওয়া শব্দবাজি। নিজস্ব চিত্র
শব্দবাজিতে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। অভিযান চলছে বলে দাবি পুলিশেরও। তবে সে সবকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে কালীপুজোর সকাল থেকেই শব্দবাজির দাপট শুরু হয়ে গিয়েছে রেলশহরে। অবাধে বিকোচ্ছে দেদার শব্দবাজিও।
খড়্গপুর শহরের কুমোরপাড়ার গলিপথ। রাস্তার ধারে নর্দমার উপর পাতা খাটিয়ায় বাজির পসরা সাজিয়ে বসে রয়েছে বছর পনেরোর এক কিশোর। রং-মশাল, চটপটি, হাওয়াই, ফানুসের মাঝে উঁকি দিচ্ছে নানা ধরনের চকোলেট বোমা। গোপনে নয়, একেবারে প্রকাশ্যে চলছে শব্দবাজির ব্যবসা। তবে সবই রয়েছে এক প্যাকেট করে। পছন্দ জানালেই ওই কিশোরের বাবা পাশেই থাকা একটি বাড়ি থেকে শব্দবাজি এনে দিচ্ছে। কিন্তু এ ভাবে শব্দবাজি সাজিয়ে ব্যবসা করলে তো পুলিশ ব্যবস্থা নেবে! তবে ওই কিশোর প্রত্যয়ের সঙ্গে বলছিল, “পুলিশ এই গলিতে আসবেই না। ও সব শুধু ভয় দেখানোর জন্য বলছে।”
শুধু কুমোরপাড়া নয়, খড়্গপুর শহরের সুভাষপল্লি, ভবানীপুর, খরিদা, ঝোলি, তালবাগিচা, পুরাতনবাজার, কৌশল্যা— সর্বত্রই এক ছবি। দোকানিরাই জানাচ্ছেন, এ বার ধরপাকড়ের ভয়ে শব্দবাজির বড় ব্যবসায়ীরা দোকান থেকে অনেক দূরে অন্যত্র শব্দবাজি মজুত করে রেখেছেন। সেখান থেকে অর্ডার অনুযায়ী চলছে কারবার। শহরের গেটবাজার, বারবেটিয়া, কৌশল্যায় রয়েছে শব্দবাজির ডিলার। তাঁদের থেকেই বাজারের থলিতে এই গলিপথের দোকানিরা নিয়ে আসছে শব্দবাজি। সেখান থেকেই উৎসাহী মানুষের হাতে পৌঁছে যাচ্ছে এই শব্দবাজি। আর সেগুলিই এ বার জোরাল শব্দে ফাটতে শুরু করেছে। শহরের সাঁজোয়ালের বাসিন্দা কৃশানু আচার্য বলছিলেন, “শব্দবাজির নিষেধাজ্ঞা ও অভিযান তো খাতায়-কলমে। কোনও অভিযান চোখে পড়ছে না। রেলশহরে গত বছরও দীপাবলিতে শব্দবাজির তাণ্ডব হয়েছে। এ বার তো কালীপুজোর দিন সকাল থেকেই দেদার শব্দবাজি ফাটানো হচ্ছে।”
পুলিশের অবশ্য দাবি, শব্দবাজি রুখতে শহরে অভিযান চলছে গত কয়েকদিন ধরেই। তবে শব্দবাজি যাঁরা ফাটাচ্ছে তাঁদের ধরা কঠিন বলেই মানছে পুলিশ। খড়্গপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ওয়াই রঘুবংশী বলেন, “আমাদের ধারাবাহিক অভিযান চলছে। যাঁরা শব্দবাজি ফাটাচ্ছে তাঁদের তো ধরা সম্ভব নয়, তাই আমরা শব্দবাজির বিক্রি বন্ধে অভিযান চলছে। এই অভিযান চলবে।”
এমন পরিস্থিতিতে শব্দবাজির বিক্রি ঠেকানোই আপাতত পুলিশের চ্যালেঞ্জ। ক’দিন আগে ব্যাগে গাছবোমা নিয়ে যাওয়ার পথে দু’জনকে গ্রেফতার করেছে খড়্গপুর টাউন পুলিশ। প্রধান সড়কে চলছে অভিযান। তবে গলিপথে পুলিশি অভিযান সে ভাবে নেই বলেই অভিযোগ। ভবানীপুরের শব্দবাজির এক দোকানি বলছিলেন, “আমাদের কাছে তো সামান্য কিছু শব্দবাজি রয়েছে। তাই আমাদের ধরে পুলিশের লাভ নেই। এই কারবার বন্ধ করতে প্রয়োজনে বড় ব্যবসায়ীদের ধরুক না পুলিশ। আসলে মানুষের উৎসাহে শব্দবাজি বেঁচে রয়েছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy