প্রতীকী ছবি।
নেই স্মোক অ্যান্ড ফায়ার অ্যালার্ম। পযার্প্ত ফায়ার এক্সটিংগুইশার তো নেই-ই। চওড়া সিঁড়ি অথবা নীচে ও ছাদে জলের রিজার্ভারের অবস্থাও তথৈবচ। সুইচ বোর্ডও অরক্ষিত। এমনই অবস্থা ঘাটাল সহ পশ্চিম মেদিনীপুরের অধিকাংশ বেসরকারি হাসপাতাল ও নার্সিংহোমগুলির।
আমরি হাসপাতালে আগুন লাগার পরপরই বেসরকারি স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানগুলির অগ্নিনিবার্পণ ব্যবস্থার হাল পাল্টাতে উদ্যোগী হয়েছিল স্বাস্থ্যভবন। ক্লিনিক্যাল এস্টাব্লিশমেন্ট আইনের বদল ঘটিয়ে নতুন নার্সিংহোমে খোলার অনুমোদন কিংবা পুনর্নবীকরণের সময় দমকল দফতরের এনওসি বাধ্যতামূলক করা হয়েছিল। তৈরি হয়েছিল কমিটিও। বেসরকারি স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানগুলিতে নয়া নিয়ম ঠিকঠাক মানা হচ্ছে কি না, তার জন্য পরিদর্শনের উপরেও জোর দেওয়া হয়েছিল। অভিযোগ, এসবই এখন খাতায়-কলমে আটকে রয়েছে। বাস্তবে পশ্চিমের বেসরকারি হাসপাতাল এবং নার্সিংহোমগুলির বেসমেন্টও জতুগৃহ অবস্থা।
কড়া নির্দেশ সত্ত্বেও কেন এমন অবস্থা? ঘাটাল শহরের এক নার্সিংহোমের মালিক বললেন, “পয়সা দিলেই তো মিলছে দমকলের এনওসি। নজরদারিও নেই। তাই ঝক্কিরও বালাই নেই।”
গত বছর মেদিনীপুরের বটতলাচকের অদূরে এক নার্সিংহোমে আগুন লেগেছিল। রোগী এবং রোগীর পরিজনদের অনেকে ছোটাছুটি শুরু করে দেন। প্রসূতিরাও বাচ্চা কোলে নিয়ে দৌড়তে শুরু করেছিলেন। দমকলের ইঞ্জিন এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। তদন্তে নেমে দমকল দেখে, এসএনসিইউ- এর পাশে একটি এসি-তেই শটসার্কিট হয়। বছর কয়েক আগে রবীন্দ্রনগরের একটি বেসরকারি হাসপাতালেও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। সেই ক্ষেত্রেও শটসার্কিট থেকে বেসমেন্টে আগুন লেগেছিল।
দমকলের আইন বলছে, প্রতিটি নার্সিংহোম বা হাসপাতালে থাকতে হবে প্রশস্ত সিঁড়ি। এ ছাড়াও নার্সিংহোমগুলির নীচে (আন্ডারগ্রাউন্ড) এবং ছাদে জলের রিজার্ভারের ব্যবস্থা করতে হবে। যাতে কোনও দুর্ঘটনা ঘটলে দমকল সহজেই কাজ করতে পারে। শুধু তাই নয়। দুর্ঘটনার পরই দমকল আসার আগে কর্তৃপক্ষ নিজেরাই যাতে প্রাথমিক ভাবে আগুন নেভানোর কাজ শুরু করতে পারে তারজন্য ১০০ ফুটের একটি হোস রিল মজুত রাখতে হবে। প্রতিটি দেওয়ালে জলের পাইপ লাইনের সংযোগও থাকতে হবে। শয্যাসংখ্যার অনুপাতে অগ্নি নিবার্পক যন্ত্র (ফায়ার এক্সটিংগুইশার) লাগাতে হবে। প্রশস্ত সিঁড়ির বিকল্প দরজার ব্যবস্থাও করতে হবে। কিন্তু অভিযোগ, একে দমকলের সব নিয়ম তো মানা হচ্ছে না। উপরন্তু বেসমেন্টগুলিতে জমে থাকছে নানা দাহ্যবস্তু। অক্সিজেনের ও গ্যাসের সিলিন্ডারও মজুত থাকছে বেসমেন্টে। কিছু কিছু নার্সিংহোমে বেসমেন্টেই চলছে রান্না। সিগারেট-বিড়ির ছাইও ফেলা হচ্ছে। সুইচ বোর্ড-সহ বিদ্যুতের লাইনগুলির হাল কেমন তাও পরীক্ষা করা হয় না ঠিকঠাক। অভিযোগ, কোনও ঘটনা ঘটলে তারপর ধরপাকড় শুরু হয়। তারপর ফের একই অবস্থা।
জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্র বেরা মানলেন, “জেলার সব নার্সিংহোমগুলিতে দমকলের নিয়ম মানা হয় না। তাই একাধিক স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স আটকে রাখা হয়েছে।” ঘাটাল দমকল কেন্দ্রের ওসি রবীন্দ্রনাথ বেরা বললেন, “আগের চেয়ে এখন বেশ কিছু নার্সিংহোমে কর্তৃপক্ষ সচেতন হয়েছেন। তবে সবক্ষেত্রেই মানা হচ্ছে না এটা ঠিক।” যদিও পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার নার্সিংহোম মালিক সংগঠনের পক্ষে সুব্রত রায় দাবি, “কমবেশি জেলার সব নার্সিংহোমেই দমকলের নিয়ম মানা হয়।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy