Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

খেতে দেয় না ছেলে-বৌমা, এসডিওর কাছে অভিযোগ বৃদ্ধ দম্পতির

তিন ছেলে এবং বৌমার কাছে অশীতিপর এই দম্পতি এখন ব্রাত্য। তাঁদের অভিযোগ, দুবেলা দুমুঠো খেতে পর্যন্ত দেওয়া হয় না। এমনকী বাড়ি থেকে তাঁদের তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ ননীগোপালের।

কাঁথি থানা চত্বরে অসহায় বৃদ্ধ দম্পতি। সোমবার। নিজস্ব চিত্র

কাঁথি থানা চত্বরে অসহায় বৃদ্ধ দম্পতি। সোমবার। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
সাতমাইল শেষ আপডেট: ১২ নভেম্বর ২০১৯ ০০:৫০
Share: Save:

তিন ছেলেকে নিজেদের পায়ে দাঁড় করিয়ে তাঁদের বিয়ে দিয়ে সংসার পেতে দিয়েছিলেন। এমনকি সম্পত্তিও তাঁদের নামে করে দিয়েছিলেন। ভেবেছিলেন বৃদ্ধ বয়সে স্বামী-স্ত্রী ছেলেদের আশ্রয়ে নিশ্চিন্তে কাটিয়ে দেবেন। কখনও ভাবেননি শেষ বয়সে আশ্রয়হীন হয়ে ছেলেদের কাছে ভরণপোষণের দাবি নিয়ে দোরে দোরে অভিযোগ জানাতে হবে। কিন্তু এখন সেটাই করতে হচ্ছে কাঁথি-১ ব্লকের বাদলপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের কুদভেড়ি গ্রামের বাসিন্দা ননীগোপাল দাস এবং তাঁর স্ত্রী গৌরীকে।

তিন ছেলে এবং বৌমার কাছে অশীতিপর এই দম্পতি এখন ব্রাত্য। তাঁদের অভিযোগ, দুবেলা দুমুঠো খেতে পর্যন্ত দেওয়া হয় না। এমনকি বাড়ি থেকে তাঁদের তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ ননীগোপালের। ছেলে বৌমাদের এমন আচরণের বিরুদ্ধে গ্রামের আর পাঁচজনকে জানালে তাঁদের হস্তক্ষেপে পঞ্চায়েতে বিষয়টি তোলা হয়। কিন্তু সেখানেও কোনও সুরহা হয়নি বলে অভিযোগ। উপায় না দেখে কাঁথি থানায় ছেলে এবং বৌমাদের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ জানাতে গিয়োছিলেন। কিন্তু সেখানে অভিযোগ না নেওয়া ফিরে আসতে হয়। শেষ পর্যন্ত স্থানীয়দের সহযোগিতায় সোমবার মহকুমা শাসকের কাছে ওই বৃদ্ধ দম্পতি ছেলেদের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়েছেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ননীগোপালবাবু কলকাতা পুরসভার অবসরপ্রাপ্ত কর্মী। পেনশন পান। সেই টাকাতেই স্বামী-স্ত্রী পেট চলত। বৃদ্ধের তিন ছেলে এবং বৌমা রয়েছেন। এঁদের মধ্যে একজন চাকরিজীবী। বাকি দুই ছেলের একজন রাজমিস্ত্রি এবং অন্যজন খেতমজুর। মোটের উপর সচ্ছল পরিবার। বৃদ্ধের অভিযোগ, ছেলেদের বিশ্বাস করে সব সম্পত্তি ওদের নামে লিখে দিয়েছিলাম। তারপর থেকে নানা রকম অত্যাচার শুরু হয়। এমনকি বাড়িতে দুবেলা-দুমুঠো খেতে পর্যন্ত দেওয়া হত না। তাঁর কথায়, ‘‘গ্রামবাসী থেকে পঞ্চায়েত সকলেই সমস্যার কথা জানে। কিন্তু গ্রামের লোকজনের কথা মানেনি ছেলেরা। পঞ্চায়েতও কোনও ব্যবস্থা নেয়নি।’’

বৃদ্ধের বড় ছেলে হরেন্দ্র নাথকে এই বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে তিনি দাবি করেন, ‘‘দাবি-বাবা মা অহেতুক মিথ্যা অভিযোগ করছেন। আমরা কোনও রকম কিছু করিনি।’’ তবে পঞ্চায়েত প্রধান গণেশ মহাকুড় বলেন, ‘‘ওই পরিবারটিকে চিনি। তবে এ ধরনের কোনও অভিযোগ আমাদের কানে আসেনি।’’

শেষ পর্যন্ত স্থানীয়দের হস্তক্ষেপে ওই বৃদ্ধ দম্পতি কাঁথির মহকুমা শাসকের কাছে যান। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৯৯৭ সালে রাজ্য সরকার বয়স্ক বাবা-মার দেখভালে গাফিলতির অভিযোগ জানানোর জন্য একটি ট্রাইবুনাল তৈরি হয়েছিল। এদিন ওই বৃদ্ধ দম্পতি যে অভিযোগ জানিয়েছেন, তার প্রেক্ষিতে ছেলে এবং বৌমাদের কাছে ভরণপোষণের দাবি জানিয়ে ট্রাইব্যুনালে একটি মামলা দায়ের করেছে মহাকুমা প্রশাসন। মামলার শুনানিতে অভিযুক্ত ছেলে এবং বৌমাদের ডেকে পাঠানোর প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে বলে জানা গিয়েছে।

কাঁথির মহকুমা শাসক শুভময় ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘ছেলে এবং বৌমারা নানা রকম অত্যাচার করে এবং খেতে দেয় না বলে এক বৃদ্ধ দম্পতি আমার সঙ্গে দেখা করেছেন। তাঁরা যে লিখিত অভিযোগ করেছেন, তার পরিপ্রেক্ষিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করছে প্রশাসন।’’ এ দিন স্থানীয় কয়েকজন ওই বৃদ্ধ দম্পতির দুপুরে খাওয়ার ব্যবস্থা করেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Old couole Torture by Son
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE