তমলুক: ফের দিনের আলোয় দুষ্কৃতী দৌরাত্ম্য। ঘটনাস্থল সেই জেলার সদর শহর।
সোমবার সকালে তমলুক শহর থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে কাঁকটিয়া বাজারে আক্রান্ত হলেন এক বৃদ্ধা। মিনতি ভৌমিক নামে ৬৫ বছরেরওই বৃদ্ধা ব্যাঙ্ক থেকে ৪০ হাজার টাকা তুলে হেঁটে বাড়ি ফিরছিলেন। ব্যস্ত রাস্তায় মোটরসাইকেলে চেপে আসা দুষ্কৃতী তাঁর টাকার ব্যাগ ছিনতাইয়ের চেষ্টা করে বলে অভিযোগ। বাধা দিতে গেলে দুষ্কৃতীরা মিনতিদেবীকে মোটরসাইকেল চেপেই কয়েকশো মিটার টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে যায়। তারপর তাঁকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে টাকার ব্যাগ ছিনিয়ে পালিয়ে যায়। টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে যাওয়ার সময় সারা শরীর ক্ষতবিক্ষত হয়ে যায় মিনতিদেবীর। আশঙ্কাজনক অবস্থায় প্রথমে তাঁকে তমলুক জেলা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। পরে কলকাতার হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়েছে।
তমলুক শহর পরপর এমন দুষ্কৃতী হানায় এলাকাবাসী উদ্বিগ্ন। উঠছে পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ। শহরবাসী মনে করিয়ে দিচ্ছেন, ক’দিন আগেই ব্যাঙ্ক থেকে টাকা তুলে বাড়ি ফেরার পথে তমলুকের প্রকাশ্য রাস্তায় মোটরসাইকেলে আসা দুষ্কৃতীরা ধারাল অস্ত্রের কোপ মেরে এক ব্যবসায়ীর ৫ লক্ষ টাকা লুট করে পালিয়েছিল। সেই ঘটনার এখনও কিনারা হয়। ধরা পড়েনি কেউ।
এ দিন ফের একই রকম ঘটনা ঘটায় এলাকাবাসী বিক্ষুব্ধ। প্রতিবাদে কাঁকটিয়া বাজারের কাছে হলদিয়া-মেচেদা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভও দেখানো হয়। পরিস্থতি সামাল দিতে তমলুক থানা থেকে যায় পুলিশ বাহিনী। পুলিশের সামনেও বিক্ষোভ চলে। শেষে পুলিশ অভিযুক্তদের গ্রেফতারের আশ্বাস দিলে অবরোধ তুলে নেওয়া হয়। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিনের ঘটনাস্থলে সিসিটিভি ক্যামেরা ছিল। তবে তা বিকল থাকায় ঘটনার ছবি ওঠেনি। স্থানীয় বাসিন্দা রাজকমল ঘড়া ও রাকেশ ভৌমিক বলেন, ‘‘কিছুদিন আগেও এই বাজারে ব্যাঙ্ক থেকে টাকা তুলে ফেরার সময়ই এক ব্যক্তির টাকা ছিনতাই হয়েছে। ফের এমন ঘটনায় আমরা আতঙ্কিত।’’
পূর্ব মেদিনীপুরের জেলা পুলিশ সুপার ভি সলোমন নেসাকুমার অবশ্য বলেন, ‘‘এ দিনের ঘটনায় জড়িত দুষ্কৃতীদের সম্পর্কে কিছু সূত্র মিলেছে। আমরা আশা করছি শিগগিগিরি তাদের ধরতে পারব।’’ আর পুরনো অপরাধ প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্য, এমন ঘটনায় বহিরাগতরাই জড়িত বলে পুলিশ মনে করছে। সম্প্রতি কাঁথিতে যে দুষ্কৃতী দল ধরা পড়েছে, তার আরও কয়েকজনের খোঁজ চলছে। এ দিনে ঘটনাতেও ওই দলের কেউ জড়িত কিনা তা দেখা হচ্ছে।
তমলুক শহর থেকে ৮ কিলোমিটার দূরে কাঁকটিয়া বাজার সংলগ্ন জানুবসান গ্রামে হলদিয়া–মেচেদা রাজ্য সড়কের ধারেই মিনতিদেবীর বাড়ি। তাঁর স্বামী অজিত ভৌমিক স্থানীয় কাখরদা হাইস্কুলের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক। ছেলে তন্ময় ব্লক প্রাণিসম্পদ দফতরের আধিকারিক। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, এ দিন সকাল সওয়া ১০টা নাগাদ মিনতিদেবী একাই হেঁটে হলদিয়া–মেচেদা রাজ্য সড়ক ধরে আধ কিলোমিটার দূরে কাঁকটিয়া পানবাজারের কাছে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের শাখায় গিয়ে ৪০ হাজার টাকা তুলেছিলেন। ব্যাগে টাকা ভরে ফের ওই পথেই হেঁটে বাড়ি ফিরছিলেন তিনি। ব্যাঙ্ক থেকে কয়েকশো মিটার দূরে সোয়াদিঘি খালের সেতু পেরনোর পরেই ঘটনাটি ঘটে।
অভিযোগ, মেচেদার দিক থেকে মোটরসাইকেলে চেপে দুই দুষ্কতী এসে মিনতিদেবীর উপর হামলা চালায়। একজন ওই বৃদ্ধার হাত থেকে টাকার ব্যাগ ছিনতাইয়ের চেষ্টা করে। মিনতিদেবী বাধা দিলে দুষ্কৃতীরা প্রচণ্ড গতিতে বাইক চালিয়ে টাকার ব্যাগ-সহ বৃদ্ধাকে রাস্তায় টেনে-হিঁচড়ে প্রায় সাতশো মিটার দূরে নিয়ে যায়। তারপর তাঁকে ফেলে টাকা সমেত ব্যাগ নিয়ে তমলুক শহরের দিকে পালিয়ে যায় বলে অভিযোগ। ব্যস্ত বাজার এলাকায় রাস্তার দু’ধারের দোকানদাররা এমন ঘটনা দেখে চিৎকার করে দুষ্কৃতীদের ধাওয়া করেন। তবে নাগাল পাননি। স্থানীয় বাসিন্দারাই রক্তাক্ত অবস্থায় মিনতিদেবীকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করান। আক্রান্ত বৃদ্ধা কথা বলার অবস্থায় নেই। তাঁর স্বামী অজিত ভৌমিক বলেন, ‘‘স্ত্রীর অবস্থা আশঙ্কাজনক। ছিনতাইয়ে বাধা দেওয়াতেই ওঁর উপর হামলা হয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy