এই হোমেরই ভাঙাচোরা ঘর নিয়ে উঠেছে অভিযোগ। নিজস্ব চিত্র
ভবন বলতে জীর্ণ মাটির দেওয়াল আর ভাঙাচোরা টালির চাল। জলকষ্ট, বিদ্যুতের সমস্যা নিত্যসঙ্গী। উঠছে জনা তিরিশেক কচিকাঁচা। ওদের পরিচয়— অনাথ।
অনুন্নত পরিকাঠামোয় পূর্ব মেদিনীপুরের সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত বেশিরভাগ হোমই ধুঁকছে। খাগদা শিশু সদনও তার ব্যতিক্রম নয়। এই অনাথালয়ের স্বাস্থ্যোদ্ধারে রাজ্যের ‘জনশিক্ষা প্রসার বিভাগ’ কোনও নজর দেয় না বলেই অভিযোগ। কোনও শিশু অসুস্থ হয়ে পড়লেও ভরসা গ্রামের হাতুড়ে।
এগরা ২ ব্লকের খাগদা গ্রামে ১৯৮৮ সালের মৈত্রেয়ী বসুর হাত ধরে গড়ে ওঠে এই শিশু সদন। পরে খাগদা গ্রামের বিশিষ্ট সমাজসেবী রমণিমোহন মাইতির দান করা সাড়ে চার বিঘে জমির উপর তৈরি হয় অনাথ আশ্রমের ভবন। তবে মাটির দেওয়াল আর টালির ছাউনির কাঠামো এতদিনেও বদলায়নি। ক্রমে কমছে আবাসিকের সংখ্যাও। এই মুহূর্তে এই হোমে ৩০জন শিশু রয়েছে।
সরকার প্রত্যক্ষভাবে সাহায্য না করলেও ‘সেভ দ্য চিলড্রেন কমিটি’-র সুপারিশ ক্রমে রাজ্য সরকারের ‘জনশিক্ষা প্রসার বিভাগ’ হোমের উন্নয়নে অর্থ বরাদ্দ করে। শিশু সদনের আবাসিক সংখ্যার নিরিখেই অর্থ বরাদ্দ হয়। গোড়ার দিকে ছাত্র সংখ্যা যথেষ্ট থাকায় সমস্যা হয়নি। কিন্তু এখন মাত্র ৩০জন শিশু রয়েছে। তাদের দেখভালের জন্য তিনজন শিক্ষক। শিশুদের জন্য মাথাপিছু মাসে ১৮০০ টাকা মঞ্জুর করে জনশিক্ষা প্রসার বিভাগ। সেখান থেকেই খাওয়াদাওয়া, লেখাপড়া, স্বাস্থ্য এবং শিক্ষকদের ভাতা দিতে হয়। এই বরাদ্দে দু’বেলা ডাল-ভাত জোগানোই দুষ্কর হয়ে পড়ছে বলে অভিযোগ। অবহেলিত হচ্ছে শিশুদের স্বাস্থ্যের দিকটিও।
হোমের পরিকাঠামো দেখভালের জন্য ব্লকে একজন জনশিক্ষা আধিকারিক থাকেন। বর্তমানে এগরা ২ ব্লকের অস্থায়ী একজন আধিকারিক রয়েছেন। তবে তাতে সুরাহা হয়নি বলেই অভিযোগ খাগদা হোম কর্তৃপক্ষের। অবহেলা আর রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে পুরনো মাটির ঘর জীর্ণ হয়েছে। টালির ছাউনি ভাঙাচোরা। যে কোনও সময় ঘটতে পারে বিপদ। গ্রীষ্মে শিশু সদনের জলের সমস্যা মেটাতে এগরা ২-এর বিডিও’র তৎপরতায় গভীর পাম্পের ব্যাবস্থা হলেও বিদ্যুৎ বিল মেটানো নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে। কখনও বিদ্যুৎ বিলের টাকা মেটাতে না পারলে আশ্রমের বিদ্যুৎ সংযোগ বিছিন্ন করে দেয় বিদ্যুৎ দফতর।
দশম শ্রেণির ছাত্র সুজয় কাণ্ডার এবং সুমন দাস বলেন ‘‘ছোট থেকে আশ্রমে স্যরেদের কাছে বাবা-মায়ের মতোই স্নেহ পেয়েছি। পড়াশোনাও শিখছি। কিন্তু ভাঙা ঘরে বিপদের মধ্যে দিন কাটাচ্ছি।’’ শিশু সদনের ভারপ্রাপ্ত সুপারিন্টেনন্ডেন্ট গৌরহরি পাত্রের কথায়, ‘‘ছেলেমেয়েদের খাবার জোগাতে নিজেদের বাগানে আনাজ চাষ করছি, পুকুরে মাছ চাষও হচ্ছে। কিন্তু তাতেও সামলানো যাচ্ছে না। কারও অসুখ হলে স্থানীয় কোয়াকের উপর নির্ভর হতে হয়। দীর্ঘ চল্লিশ বছর ধরে হোমের সংস্কার হয়নি।’’ গৌরহরিদের আশঙ্কা, এ ভাবে চলতে থাকলে কয়েকবছরের মধ্যেই হারিয়ে যাবে অনাথ শিশুদের এই ঠিকানা।
এগরা ২-এর বিডিও রানি ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘খাগদা শিশু সদনের সমস্যা খতিয়ে দেখতে শীঘ্রই পরিদর্শন করা হবে। শিশুদের সঙ্গে ও কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy