জয়োল্লাস: ভোটে জয়ের খবর শোনার পর আনন্দে মেতেছেন তৃণমূল কর্মী-সমর্থকেরা। ছবি: পার্থপ্রতিম দাস।
নির্বাচনী প্রচারে হলদিয়া ও পাঁশকুড়ায় বিরোধীশূন্য পুরসভা গড়ার ডাক দিয়েছিলেন রাজ্যের পরিবহণ মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী। হলদিয়ায় লক্ষ্য সফল হয়েছে। বিরোধীরা সেখানে নিশ্চিহ্ন। কিন্তু পাঁশকুড়ার ১৮ ওয়ার্ডের পুরসভায় বিজেপি একটি আসনে জয়লাভ করায় বিরোধী শূন্য পুরবোর্ড গড়ার লক্ষ্য এখানে অধরাই থেকে গেল শাসক দলের।
২০১১ সালে রাজ্যে রাজনৈতিক পালাবদলের আগে ২০০৭ সালে পাঁশকুড়া পুরসভা দখল করেছিল তৃণমূল। ২০১২ সালের পুরভোটে পাঁশকুড়ায় ফের জেতে তৃণমূল। এবার ক্ষমতা ধরে রাখতে পারা যাবে কি না তা নিয়ে দলেই সন্দেহ ছিল। যার মূলে ছিল দলের গোষ্ঠীকোন্দল। যার কিছুটা আঁচ পড়ে প্রার্থী বাছাইয়েও। এর পাশাপাশি ছিল সম্প্রতি দক্ষিণ কাঁথি বিধানসভার উপনির্বাচনে ভোটপ্রাপক হিসাবে বিজেপির দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসার চাপ।
দুয়ের চাপ সামলাতে ভোট প্রক্রিয়ার শুরু থেকেই প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে কোন্দল সামলে আদাজল খেয়ে প্রচারে নেমে পড়ে তৃণমূল। উল্টোদিকে, বিরোধী হিসাবে বিজেপি তো বটেই, বাম-কংগ্রেস আসন সমঝোতা সত্ত্বেও সব আসনে প্রার্থী দিতে না পারার ঘটনা শাসক দলকে বাড়তি অক্সিজেন দেয়। ভোটের আগেই ৪ ও ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে বিনা-প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয় তৃণমূল। বাকি ১৬ টি আসনে ভোট গ্রহণ করা হয়। যার একটি ছাড়া সবকটিই তাদের দখলে। আর তাতেই দেখা যাছে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে বাম নয়, তৃণমূলের সামনে উঠে এসেছে বিজেপি। গতবার ৫টি আসনে জিতে বিরোধী দলে থাকা বামফ্রন্টের ঝুলি এবার ফাঁকা।
তবে পুরসভায় নিরঙ্কুশ জয়ের পরেও শাসকদলের কাছে কাঁটা ৬ নম্বর ওয়ার্ডে বিজেপি প্রার্থীর জয়। ২০০২ সালে পাঁশকুড়া পুরসভা গঠনের পর গত তিনটি পুর নির্বাচনেই এই ওয়ার্ডে জয়ী হয়েছিল তৃণমূল। এ বারও বিদায়ী তৃণমূল কাউন্সিলর সুপর্ণা পাড়িয়ালের স্বামী শ্যামল পারিয়াল লড়াই করেন। বিজেপি প্রার্থী ছিলেন দলের জেলা যুব মোর্চার সভাপতি সিন্টু সেনাপতি। শ্যামলবাবুকে ৩২৬ ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে জয়ী হয়েছেন সিন্টু। পাঁশকুড়া পুরসভায় বিজেপি খাতা খোলার পাশাপাশি ৭ টি ওয়ার্ডে দ্বিতীয় স্থান দখল করেছে। বামেরা একটিও আসন না পেলেও বাম-কংগ্রেস জোট প্রার্থীরা ৫ টি ওয়ার্ডে দ্বিতীয় স্থানে। তিনটি আসনে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে নির্দল প্রার্থীরা।
২০১২
(তৃণমূল ১২, বামফ্রন্ট-৫)
এলাকার মানুষের বক্তব্য, কিছু না থেকে একটি আসন এবং সাতটি ওয়ার্ডে দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসা বিজেপিকে অবশ্যই উজ্জীবিত করবে। যদিও এটাকে কাঁটা বলে মানতে নারাজ তৃণমূল। দলের তরফে পাঁশকুড়ার পুরভোটের দ্বায়িত্বে থাকা রাজ্যের জলসম্পদ মন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র বলেন, ‘‘ভোটের ফলে আমরা খুশি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়ন কাজের প্রতি মানুষের বিপুল সমর্থন এতে প্রকাশ পেয়েছে। তবে ১৮-০ হলে ভাল হতো।’’ বিজেপির একটি আসন পাওয়া নিয়ে তাঁর মন্তব্য, ‘‘২০১৬ সাল থেকে বাম, কংগ্রেস ও বিজেপির যে অশুভ আঁতাত তৈরি হয়েছে তার জন্য একটি ওয়ার্ডে আমাদের প্রার্থী হেরেছে।’’
বিজেপির জেলা সভাপতি মলয় সিংহ বলেন, ‘‘হলদিয়া ও পাঁশকুড়া পুরভোটে তৃণমূল যে ভাবে সন্ত্রাস করেছে এবং পুলিশ-প্রশাসন যে ভাবে তাতে মদত জুগিয়েছে, তাতে বহু মানুষ ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেননি। তাই এই ফলে প্রকৃত জনমত প্রতিফলিত হয়নি। ৬ নম্বর ওয়ার্ডে আমরা সাংগঠনিকভাবে তৃণমূলের সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ায় সেখানে দাঁত ফোটাতে পারেনি তারা।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy