বাড়িতে না জানিয়েই এলাকার এক যুবকের মাধ্যমে ভিন্ রাজ্যে কাজে গিয়েছিল দাঁতনের দেউলির বাসিন্দা মৃতা বুধনি মুর্মু। পরে পরিজনেরা খোঁজ নিয়ে জানতে পারে, বুধনি হরিয়ানায় কাজে গিয়েছে— তদন্তে এমনই জেনেছে পুলিশ। সোমবার সন্ধ্যায় অ্যাম্বুল্যান্সে বছর সতেরোর ওই কিশোরীর দেহ গ্রামে ফেরার পর মৃতার বাবা সনাতন মুর্মুর দাবি, তাঁর মেয়েকে খুন করা হয়েছে। মঙ্গলবার রাতে এই মর্মে পুলিশে লিখিত অভিযোগ জানান সনাতনবাবু।
মৃতের পরিজনদের সঙ্গে কথা বলে পুলিশ জেনেছে, বুধনি যে ভিন্ রাজ্যে কাজে যাচ্ছে, তা জানতেন না বাড়ির কেউ। বছর দেড়েক আগে একদিন কাজ সেরে বাড়ি ফিরে পরিজনেরা দেখেন, বাড়িতে বুধনি নেই। এরপর তার খোঁজ শুরু হয়। পরে তাঁরা জানতে পারেন, পাশের গ্রাম কোটপদার বাসিন্দা যুবক সুবল মালিক কাজের আশ্বাস দিয়ে বুধনিকে ভিন্ রাজ্যে পাঠিয়েছে। সনাতনবাবু বলছেন, “মেয়ে যে কাজের জন্য অন্য এলাকায় যাবে, আমরা তা জানতাম না। আমরা গরিব মানুষ। একদিন মজুর খাটতে গিয়েছিলাম। বাড়ি ফিরে দেখি ও নেই। পরে জানতে পারি, ও কাজের জন্য অন্য এলাকায় গিয়েছে।” বুধনির সঙ্গে ফোনেই কথা হত বাবামার। মেয়েকে ফিরিয়ে আনার জন্য সুবলকে প্রায়ই বলতেন বুধনির বাবামা। যদিও বিষয়টি নানাভাবে সুবল এড়িয়ে যেত বলে অভিযোগ।
স্থানীয় সূত্রে খবর, গত রবিবার সন্ধ্যায় দাঁতনে ফোন করে বুধনির মৃত্যুসংবাদ দেওয়া হয়। জানানো হয়, অসুস্থ হয়ে বুধনি হাসপাতালে ভর্তি ছিল। সেখানেই তার মৃত্যু হয়েছে। তারপরে সোমবার সন্ধ্যায় অ্যাম্বুল্যান্সে এক ব্যক্তি বুধনির দেহ নিয়ে দেউলিতে আসে। ময়না তদন্ত না করিয়েই ওই কিশোরীর দেহ হরিয়ানা থেকে নিয়ে আসায় সন্দেহ হয় স্থানীয়দের। তারা অ্যাম্বুল্যান্স আটকে রেখে পুলিশে খবর দেয়। ঘটনাস্থলে পৌঁছয় পুলিশ। ওই ব্যক্তি ও অ্যাম্বুল্যান্সের চালককে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে। সুবলকেও আটক করা হয়েছে।
পুলিশ সূত্রে খবর, শুধু বুধনি নয়, আগেও এলাকার একাধিক কিশোরীকে সুবল কাজের জন্য অন্যত্র পাঠিয়েছে। তাদের মধ্যে কেউ কেউ এখনও নিখোঁজ। গ্রামবাসীদের একাংশের দাবি, সুবল দুষ্টচক্রের সঙ্গে জড়িত। তা না হলে কাজের লোভ দেখিয়ে এ ভাবে ভিন্ রাজ্যে সে মেয়েদের পাঠাত না। খড়্গপুরের এসডিপিও সন্তোষ মণ্ডল বলেন, “দাঁতনের ওই ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। তদন্তে সমস্ত দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” মঙ্গলবার মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে মৃতদেহের ময়না তদন্ত হয়েছে। কিশোরীর মাথার পিছন দিকে আঘাতের চিহ্ন মিলেছে। ময়না তদন্তের রিপোর্ট এলেই কিশোরীর মৃত্যুর কারণ স্পষ্ট হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
মেয়ের মৃত্যুতে ভেঙে পড়েছেন বুধনির বাবা সনাতনবাবু। তাঁর আক্ষেপ, ‘‘মেয়েকে ফেরত নিয়ে আসার কথা ওকে (সুবল) বহুবার বলেছি। ও শুধু আনছি- আনব বলে সময় পার করেছে। এ মাসেই মেয়েকে ফেরত নিয়ে আসার আশ্বাস দিয়েছিল ও। কী যে হয়ে গেল।” তাঁর কথায়, “আমার মেয়েকে যে বা যারা খুন করেছে, তাদের কঠোর শাস্তি চাই।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy