Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Contentment Zones

পথে জটলা, গণ্ডিবদ্ধেও অকুতোভয়

খড়্গপুর শহরেও বিকেল ৫টার পরে লকডাউন বিধি কার্যকরে তেমন কড়াকড়ি দেখা যায়নি। দিনভর শহরে ঘুরেছেন রাজ্য পুলিশের ডিজি।

মাস্ক নেমেছে থুতনিতে। বৃহস্পতিবার বিকেল পাঁচটার পরে কন্টেনমেন্ট জ়োনে লকডাউন শুরুর পরে।

মাস্ক নেমেছে থুতনিতে। বৃহস্পতিবার বিকেল পাঁচটার পরে কন্টেনমেন্ট জ়োনে লকডাউন শুরুর পরে।

অভিজিৎ চক্রবর্তী ও দেবমাল্য বাগচী
ঘাটাল ও খড়্গপুর শেষ আপডেট: ১০ জুলাই ২০২০ ০২:৫৭
Share: Save:

কোথাও করোনা রোগী সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে এসেছেন। কোথাও আক্রান্ত হাসপাতালে ভর্তি। তবে ঘাটাল-দাসপুরের সেই সব কন্টেনমেন্ট জ়োনে বৃহস্পতিবার বিকেল পাঁচটার পরেও বোঝা গেল না আদৌ লকডাউন শুরু হয়েছে কিনা।

দেখা গেল, মাস্ক ছাড়াই দিব্যি লোকে ঘুরছে। দোকানপাট খোলা। অনেকেই আবার জানেনই না, সেখানে লকডাউন শুরু হয়েছে!

খড়্গপুর শহরেও বিকেল ৫টার পরে লকডাউন বিধি কার্যকরে তেমন কড়াকড়ি দেখা যায়নি। দিনভর শহরে ঘুরেছেন রাজ্য পুলিশের ডিজি। তাঁকে নিয়ে ব্যস্ত থাকতে দেখা গিয়েছে পুলিশ আধিকারিক ও কর্মীদের। খড়্গপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কাজী সামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘‘শুক্রবার সকাল থেকেই আমরা প্রতিটি কন্টেনমেন্ট জ়োনে কড়াভাবে লকডাউন বিধি কার্যকর করব।’’

পশ্চিম মেদিনীপুরে ঘাটাল-দাসপুর এবং খড়্গপুরেই সব থেকে বেশি কন্টেনমেন্ট জ়োন বা গণ্ডিবদ্ধ এলাকা। ঘাটাল, দাসপুর ও চন্দ্রকোনায় মোট ২১ টি গণ্ডিবদ্ধ এলাকা রয়েছে। ঘাটালে ৫টি, দাসপুরে ১৪টি এবং চন্দ্রকোনায় দুটি। এ দিন বিকেল ৫টা ২০ নাগাদ দাসপুরের মামুদপুর এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, করোনা সংক্রমিত সিভিক ভলান্টিয়ারের বাড়ির সামনের রাস্তায় মানুষের জটলা। এলাকা ঘুরে লকডাউন বোঝাও গেল না। বাঁশের কোনও ব্যারিকেড পর্যন্ত নেই। ঘর থেকে উঁকি মেরে করোনা থেকে সেরে ওঠা সিভিক ভলান্টিয়ারও বললেন, “আমার সূত্রেই পাড়ায় লকডাউন। তবে আমি তো সুস্থ হয়ে বাড়িতেই আছি। তাই এত কড়াকড়ি নেই।”

এক শিক্ষক দম্পতির সূত্রে দাসপুরের সুজানগরে মাইতি পাড়াকে গণ্ডিবদ্ধ ঘোষণা করেছে প্রশাসন। বৃহস্পতিবার পৌনে ছ’টায় সময় ওই দম্পতির বাড়ি লাগোয়া মোড়ে খোলা সব দোকানপাটই খোলা ছিল। মাস্ক ছাড়াই চলছিল বেচাকেনা। পুলিশের প্রচার নেই। শুধু সংশ্লিষ্ট বাড়িতে লেখা রয়েছে কন্টেনমেন্ট জ়োন। এক চা বিক্রেতা বললেন, “বাজারে সবাই বলাবলি করছে বটে। তবে লকডাউনের কোথায় কী?”

ছ’টা নাগাদ দাসপুরে শ্যামসুন্দপুর গ্রামের এক পাড়ায় ঢুকেও দেখা গেল, পাশের জমিতে তেলের পাইপ লাইনের কাজ হচ্ছে। তা দেখতে ভিড় জমানো অনেকে আবার জানালেন, পাড়ার নাম ভুল করা হয়েছে। এটা মাইতি পাড়া নয়,ভুঁইয়া পাড়া। তবে এখানেই একজন আক্রান্ত হয়েছিলেন। তাই লকডাউন। জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিকের বক্তব্য, “সরকারের নির্দেশ মতো কাজ হচ্ছে ঠিকই। তবে পুলিশ-প্রশাসনের সমন্বয়ের অভাব। গণ্ডিবদ্ধ এলাকা নিয়েও ধোঁয়াশা রয়েছে। তাই তৎপরপতাও নেই।”

শুধু দাসপুর নয়, ঘাটালের গ্রামের ছবিটাও একই। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ঘাটালের কিসমত দীর্ঘগ্রাম ও কোতুলপুরের নির্দিষ্ট দুই পাড়াতেও একেবারে স্বাভাবিক জনজীবন। এক নার্সিং পড়ুয়ার সূত্রে ঘাটাল শহরের কুশপাতায় প্রগতি বাজার, কালীতলা, অগ্রণী ক্লাব মোড়, ঘাটাল কলেজ মোড় এলাকা এবং ৬ নম্বর ওয়ার্ডের মণ্ডল পাড়ায় তুলনায় কড়া লকডাউন শুরু হয়েছে। শহরে চলছে পুলিশের টহল। যদিও ঘাটালের মহকুমাশাসক অসীম পাল বলেন, “মহকুমার সংশ্লিষ্ট সব গণ্ডিবদ্ধ এলাকায় কড়া লকডাউন শুরু হয়েছে। পুলিশ-প্রশাসন সতর্ক রয়েছে। মাইকে প্রচার হচ্ছে।”

রেলশহর খড়্গপুরে ১৩টি গণ্ডিবদ্ধ এলাকা এ দিন বিকেল ৫টার পরে সেখানেও লকডাউন কার্যকর হয়নি। গণ্ডিবদ্ধ এলাকার মধ্যে অবাধে ঘুরতে দেখা গিয়েছে বাসিন্দাদের। অনেকের মুখেই মাস্ক নেই। মাস্ক ছাড়া চলেছে আড্ডা। শহরের সবচেয়ে ঘিঞ্জি করোনা সংক্রমিত এলাকা পাঁচবেড়িয়াতেই এই প্রবণতা সব থেকে বেশি। বালুবস্তি, বামনিয়ারা মিলিয়ে এই পাঁচবেড়িয়ায় রয়েছে একাধিক গণ্ডিবদ্ধ এলাকা। সেই এলাকার গা ঘেঁষেই একটি দোকানের সামনে দেখা গেল জটলা। কারও মাস্কে হাত, আবার নেমেছে থুতনিতে। শেখ করিম নামে এক যুবকের যুক্তি, “এই সবে দোকান থেকে বেরোলাম তো তাই মাস্ক পরতে ভুলে গিয়েছি।” শেখ সায়জাদা আবার বলেন, “এখানে করোনা ছড়ানোর পর থেকে ১৭ দিন কেটে গিয়েছে। একবার পুলিশ সব গার্ডরেল খুলে নিয়ে গেল। এখন দেখছি ফের কন্টেনমেন্ট বলে লকডাউন করছে। এ সব কেন হবে?”

ইন্দার নিউটাউন ও কমলাকেবিন এলাকার দু’টি ফ্ল্যাটের বাসিন্দা করোনা আক্রান্ত হলেও সেখানে গণ্ডিবদ্ধ এলাকার ফ্লেক্স নেই। অবাধে অ্যাপার্টমেন্ট থেকে ঢোকা-বেরোনো চলেছে। নিউটাউনের ওই আবাসনের নিরাপত্তারক্ষী গোপাল পাত্র বলেন, “আমাদের একটি ফ্ল্যাটের এক মহিলা করোনা আক্রান্ত হয়েছেন কলকাতার হাসপাতালে। তাঁর মেয়ে সংস্পর্শে আসায় তিনি ফ্ল্যাটের মধ্যে রয়েছেন। কিন্তু পুলিশ এখানে কিছু বলে যায়নি!” আবার ২০নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূলের দলীয় কার্যালয়ের সামনেই গণ্ডিবদ্ধ এলাকার পরিধি বাড়ানোর বদলে কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে ভবানীপুরে কিছুটা সচেতনতা দেখা গিয়েছে। ইন্দার নিউটাউনের বাসিন্দা সঙ্গীতশিল্পী শ্রীতমা রাই বলছেন, “মানুষ যদি অসচেতন হয় তবে পুলিশের আর কী করার আছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Contentment Zones Covid 19
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE