Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
হাওড়া জেলার সঙ্গে সংযুক্তির প্রস্তাব

মায়াচর নিয়ে শুভেন্দুর মন্তব্যে ক্ষোভ

গত ৫ অক্টোবর নন্দকুমারে এক অনুষ্ঠানে শুভেন্দু দাবি করেন, মায়াচরকে হাওড়া জেলার সঙ্গে অন্তর্ভুক্ত করার ব্যাপারে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা হয়েছে। পুজোর পরে এ ব্যাপারে প্রস্তাব দেওয়ার কথা মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন।

মায়াচরের একটি ইটভাটা। নিজস্ব চিত্র

মায়াচরের একটি ইটভাটা। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
মহিষাদল ও শ্যামপুর শেষ আপডেট: ১৭ অক্টোবর ২০১৯ ০২:২৯
Share: Save:

রূপনারায়ণ নদে গত ৩০ সেপ্টেম্বর নৌকাডুবিতে মৃত্যু হয়েছিল দু’জনের। উদ্ধার করা হয়েছিল ৩৮ জন যাত্রীকে। ঘটনায় উদ্ধারকাজ নিয়ে পূর্ব মেদিনীপুর এবং হাওড়া জেলা প্রশাসনের মধ্যে দড়ি টানাটানি শুরু হয়েছিল। উঠেছিল নিরাপত্তার প্রশ্ন। যার জেরে মায়াচর এবং মহিষাদলের অমৃতবেড়িয়ার মধ্যে নৌকো চলাচল নিষিদ্ধ করে দেয় পূর্ব মেদিনীপুর জেলা প্রশাসন। ঘটনার পর ১৫ দিন কেটে গেলেও চালু হয়নি নৌকা চলাচল। যা নিয়ে দুর্ভোগে পড়েছেন মায়াচরের বাসিন্দারা। এ বার মায়াচরকে ভৌগোলিক ভাবে হাওড়ার সঙ্গে যুক্ত করা নিয়ে রাজ্যের পরিবহণ ও সেচমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীর বক্তব্য নিয়ে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে সেখানকার বাসিন্দাদের মধ্যে।

গত ৫ অক্টোবর নন্দকুমারে এক অনুষ্ঠানে শুভেন্দু দাবি করেন, মায়াচরকে হাওড়া জেলার সঙ্গে অন্তর্ভুক্ত করার ব্যাপারে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা হয়েছে। পুজোর পরে এ ব্যাপারে প্রস্তাব দেওয়ার কথা মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন। রাজ্য সরকারের তরফে যুক্তি, মায়াচর হাওড়া জেলার সঙ্গে যুক্ত হলে নদীপথে যাতায়াতের ঝুঁকি অনেকটাই কমবে। কিন্তু পরিবহণমন্ত্রীর এমন বিবৃতি নিয়েই সিঁদুরে মেঘ দেখছেন সেখানকার বাসিন্দারা।

রূপনারায়ণের কোলে দীর্ঘ এলাকা জুড়ে চর পড়ে গড়ে উঠেছে মায়াচর। এক সময় এখানে কেউ বাস করতেন না। পরবর্তী সময় পূর্ব মেদিনীপুরের মহিষাদল, শহিদ মাতঙ্গিনী, কোলাঘাট এবং তমলুক থেকে প্রচুর মানুষ এখানে বসবাস শুরু করেন। ২০০০ সালে মায়াচর পূর্ব মেদিনীপুর জেলার অধীনে চলে আসে। সেখানকার বাসিন্দাদের অনেকেরই জমির নথি এবং রেকর্ড পূর্ব মেদিনীপুর নথিভুক্ত। অনেকের পূর্ব মেদিনীপুরের বাসিন্দা হিসাবে সচিত্র পরিচয়পত্রও রয়েছে। এই অবস্থায় মায়াচরকে হাওড়া জেলার সঙ্গে যুক্ত করা হলে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র তৈরি করতে সমস্যায় পড়তে হবে বলে আশঙ্কা তাঁদের। এখানকার বাসিন্দারা মহিষাদলের অমৃতবেড়িয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের অধীন। মায়াচরে প্রচুর প্রাকৃতিক সম্পদ এবং ৫০টির বেশি ইট ভাটা রয়েছে। মায়াচরকে হাওড়ার সঙ্গে যুক্ত করা হলে ওই সব ইটভাটা থেকে রাজস্ব বন্ধ হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষের। এদিকে বুধবার মহিষাদলের বিডিওর কাছে মায়াচর থেকে অমৃতবেড়িয়া পর্যন্ত নৌকা চালানোর দাবি জানিয়ে স্মারকলিপি দিয়েছেন সেখানকার বাসিন্দারা।

দীর্ঘদিন ধরে মায়াচরে বাস করছেন মনোরঞ্জন মাইতি। তাঁর কথায়, ‘‘হাওড়ার সঙ্গে যুক্ত করলেই মায়াচরের সমস্যা মিটবে না। এখানকার মানুষের রুটি-রুজি, চিকিৎসা ও আত্মীয় পরিজনদের সঙ্গে যোগাযোগ অসম্ভব হয়ে দাঁড়াবে।’’ স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মায়াচর থেকে আড়াই কিলোমিটার রূপনারায়ণ নদ পেরিয়ে মহিষাদলের অমৃতবেড়িয়ায় পৌঁছতে আধঘণ্টা সময় লাগে। তারপর দনিপুর হয়ে তমলুকের দূরত্ব চার কিলোমিটার। অন্যদিকে মায়াচর থেকে হাওড়া যাওয়ার জন্য কমলপুরের কাছে তিনটি সেতু রয়েছে। তিন কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করলেই হাওড়ায় পৌঁছনো যায়। ফলে দূরত্বে তুলনায় হাওড়া কাছে হওয়ায় মন্ত্রী এমন কথা বললেন কি না তা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে। যদিও মায়াচরের বাসিন্দাদের দাবি, তাঁরা দীর্ঘদিন ধরেই পূর্ব মেদিনীপুরের সঙ্গে কাজের সূত্রে ও আত্মিক ভাবে জড়িয়ে গিয়েছেন। এখন হঠাৎ তাঁদের হাওড়া জেলার সঙ্গে যুক্ত করা হলে তাঁরা প্রভূত সমস্যায় পড়বেন। তাঁদের দাবি, এরকম কোনও কথা বলা বা সিদ্ধান্ত হওয়ার আগে বাসিন্দাদের মতামত নেওয়া জরুরি।

অমৃতবেড়িয়া পঞ্চায়েতের প্রাক্তন উপপ্রধান ও স্থানীয় বাসিন্দা যুগলকিশোর মান্না বলেন, ‘‘মায়াচর কোন জেলার সঙ্গে যুক্ত থাকতে চায়, তা নিয়ে এখানকার মানুষের মতামত নেওয়া হয়নি। এটা দুর্ভাগ্যজনক। পূর্ব মেদিনীপুর জেলা থেকে মায়াচরকে বিচ্ছিন্ন করার চেষ্টা হলে আমরা বৃহত্তর আন্দোলনে নামব।’’ শ্রীনিবাস গুড়িয়া নামে এক বাসিন্দার দাবি, ‘‘মায়াচর থেকে অমৃতবেড়িয়া পর্যন্ত নদীপথে জেটি এবং ফেরি চলাচলের ব্যবস্থা করা হলে যাতায়াতে ঝুঁকি অনেকটাই কমে যাবে। অন্য জেলার সঙ্গে মায়াচরকে যুক্ত করার বদলে সেই ব্যবস্থা করা হলে এখানকার মানুষ বেশি উপকৃত হবেন।’’

মহিষাদলের বিডিও জয়ন্ত কুমার দে বলেন, ‘‘স্থানীয়দের কাছ থেকে এই বিষয়ে স্মারকলিপি পেয়েছি। সেটি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়ে দেব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

TMC Suvendu Adhikari Mamata Banerjee
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE