পর্য়াপ্ত আলো নেই বড়বাতি-খরিদা রাস্তায়। নিরাপত্তার অভাব বোধ করেন এলাকাবাসী। —ফাইল চিত্র।
মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে টাকা লুঠ, দিনেদুপুরে গুলি করে খুন, তোলা চেয়ে হুমকি ফোন— ‘রিল লাইফ’-এর এমন নানা ঘটনাই খড়্গপুরের ক্ষেত্রে একেবারে ‘রিয়েল লাইফ’। মাঝে কিছু দিন দাঁড়ি পড়েছিল। তবে এখন আবার অপরাধমূলক কাজকর্মের বাড়বাড়ন্ত হয়েছে রেলশহরে। আইনশৃঙ্খলা নিয়ে প্রশ্নও উঠছে। উদ্বিগ্ন শহরবাসী। এই পরিস্থিতিতে খড়্গপুরের নিরাপত্তা নিয়ে পুরসভার সঙ্গে আলোচনায় বসল পুলিশ।
সম্প্রতি খড়্গপুরের পরিস্থিতি নিয়ে পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষের সঙ্গে কথা হয়েছে খড়্গপুরের পুরপ্রধান প্রদীপ সরকারের। পুরসভাকে কিছু পরামর্শও দিয়েছে পুলিশ। পুরসভা সূত্রে খবর, খড়্গপুরে নজরদারি (সিসিটিভি) ক্যামেরা নেই। অবিলম্বে গুরুত্বপূর্ণ কিছু মোড়ে তা বসানোর পরামর্শ দিয়েছে পুলিশ। পাশাপাশি, কয়েকটি রাস্তায় বড় বাতিস্তম্ভ বসানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। কয়েকটি রাস্তা জরুরি ভিত্তিতে সংস্কারের পরামর্শও দেওয়া হয়েছে। পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষ বলেন, ‘‘খড়্গপুরে অপরাধমূলক ঘটনা এবং অপরাধীদের নিয়ন্ত্রণ করতে বিশেষ কিছু কৌশল নেওয়া হয়েছে। প্রতিদিনই তল্লাশি অভিযান চলছে। সিসিটিভি ক্যামেরা, আলো এবং রাস্তা— এই তিনটি ব্যাপারে পুরপ্রধানের সঙ্গে কথা হয়েছে।’’ আর পুরপ্রধান প্রদীপবাবুর বক্তব্য, ‘‘পুলিশ সুপারের সঙ্গে কথা হয়েছে। খড়্গপুর শহরে নজরদারি ক্যামেরা বসানো দরকার। আলো এবং রাস্তার ব্যাপারেও পদক্ষেপ করা হবে।’’
রেলশহরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোর মধ্যে অন্যতম খরিদা, মালঞ্চ। এই এলাকায় বিভিন্ন ব্যাঙ্কের শাখা রয়েছে। রয়েছে বেশ কিছু দোকান। পুরসভার এক সূত্রে খবর, শহরের এই এলাকায় নজরদারি ক্যামেরা বসানোর পরামর্শ দিয়েছে পুলিশ। ইন্দা-পুরাতনবাজারের মতো কয়েকটি এলাকাতেও সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো হতে পারে।
সাম্প্রতিক অতীতে খড়্গপুরে একের পর এক দুষ্কর্ম ঘটেছে। গত ১৯ জুন খরিদার ব্যবসায়ী ধনকুমার অগ্রবালের বাড়িতে দুষ্কৃতীরা ঢুকে লঙ্কার গুঁড়ো ছিটিয়ে ২০ হাজার টাকা নিয়ে চম্পট দেয়। ১২ জুন মালঞ্চর কাছে জামবনির এক বাসিন্দার ২ লক্ষ টাকা ছিনতাই হয়। গত ২৭ মে সুভাষপল্লিতে আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে গোলবাজারের এক ব্যবসায়ীর লক্ষাধিক টাকা ছিনতাই করে দুষ্কৃতীরা। তার আগে ৬ মে দিনেদুপুরে গুলি চালিয়ে লক্ষাধিক টাকা ডাকাতি হয় মালঞ্চতেই। গত সোমবার আবার পুরাতনবাজারের এক দোকানে ঢুকে দুষ্কৃতীরা ৪ লক্ষ ৭৫ হাজার টাকা নিয়ে চম্পট দেয়।
শহরবাসীর অভিযোগ, একে তো পুলিশি নজরদারির অভাব রয়েছে। তার উপর পুলিশের একাংশের সঙ্গে দুষ্কৃতীদের যোগ রয়েছে। তাই অধিকাংশ ঘটনারই কিনারা হয় না। পুলিশকে চুরি-ছিনতাইয়ের অভিযোগ জানাতে গেলে ‘দেখছি-দেখবো’ বলে দায় এড়ায়। কংগ্রেসের রবিশঙ্কর পাণ্ডে থেকে বিজেপির তুষার মুখোপাধ্যায়, সিপিআইয়ের বিপ্লব ভট্ট সকলেরই বক্তব্য, রেলশহরে দুষ্কৃতী-দৌরাত্ম্যের দায় পুলিশ এড়াতে পারে না। কারণ, পুলিশ দুষ্কৃতী দমনে কড়া পদক্ষেপ করলে এবং শহরে ঠিকঠাক নজরদারি চালালে এ ভাবে একের পর এক চুরি-ছিনতাই হত না।
পুলিশ অবশ্য এই সব অভিযোগ মানতে নারাজ। উল্টে তাদের দাবি, সাদা পোশাকের পুলিশ রাস্তায় নজরদারি চালানোয় অপরাধমূলক ঘটনা কমছে। কিছু ক্ষেত্রে দুষ্কৃতীদের হাতেনাতে ধরাও সম্ভব হয়েছে। জেলার পুলিশ সুপার ভারতীদেবীর কথায়, ‘‘খড়্গপুর শহরে পুলিশি নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। মোটর বাইকের পাশাপাশি সাইকেলেও নজরদারি চলছে। গোলবাজারের মতো কিছু কিছু এলাকায় ফুটমার্চ চলছে। ইতিমধ্যে বিকাশ, সঞ্জয়, বুলবুলরা ধরা পড়েছে।’’ নানা ঘটনায় গত ১০ দিনে প্রায় ৩০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানান পুলিশ সুপার।
আগামী দিনে খড়্গপুরের গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলিতে নজরদারি ক্যামেরা বসানো হলে দুষ্কৃতী দৌরাত্ম্য ঠেকানো সহজ হবে বলেই মনে করছে পুলিশ। জেলা পুলিশের এক কর্তার কথায়, ‘‘খড়্গপুরের মতো শহরের কিছু কিছু এলাকায় সিসি-ক্যাম বসানো জরুরি। তাহলে অপরাধমূলক ঘটনা কমবে। আর হটাৎ কোনও ঘটনা ঘটে গেলে ফুটেজ দেখে দ্রুত অপরাধীদের চিহ্নি করা সম্ভব হতে পারে।নিরাপত্তার স্বার্থেই এই পদক্ষেপ জরুরি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy