প্রতীকী ছবি।
একই আবাসনের তিনটি ফ্ল্যাটে চুরির ঘটনায় চেনামুখের যোগ থাকতে পারে বলেই মনে করছেন তদন্তকারীরা। তাঁদের মতে, পরিচিত কেউ জড়িত না থাকলে দুষ্কৃতীরা অবাধে আবাসনের মধ্যে ঢুকতে-বেরোতে পারত না। তা ছাড়া, ওই তিনটি ফ্ল্যাটের আবাসিকেরা যে ওই রাতে ছিলেন না, সেই খবরও দুষ্কৃতীদের কাছে পৌঁছত না। জেলা পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষের নির্দেশে রবিবার রাতেই আবাসনে গিয়েছিলেন জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) শচীন মক্কর। আরও একাধিক পদস্থ পুলিশ আধিকারিকেরা সঙ্গে ছিলেন। আবাসনের সমস্ত দিক খতিয়ে দেখেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার। এক তদন্তকারী পুলিশ আধিকারিকের কথায়, “হতে পারে এই আবাসনে যাতায়াত রয়েছে, এমন কেউই দুষ্কৃতীদের কাছে সব খবর পৌঁছে দিয়েছিল। সেই মতো চুরির পরিকল্পনা করা হয়। এ ক্ষেত্রে চেনামুখ জড়িত থাকার সম্ভাবনাই বেশি।’’
তদন্তে পুলিশ কুকুরও নিয়ে যাওয়া হয়েছিল মেদিনীপুর শহরের তাঁতিগেড়িয়ার ওই আবাসনে। যে তিনটি ফ্ল্যাটে চুরি হয়েছে, সেখানে ঢোকার পরে কুকুরটি সিঁড়ি দিয়ে নেমে রাস্তায় চলে আসে। পরে আবার আবাসনে ঢুকে দৌড়ে ছাদের দিকে যায়। জেলা পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষ জানিয়েছেন, তদন্তে সব দিকই খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ইতিমধ্যে কয়েকজন নিরাপত্তারক্ষীকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। নিরাপত্তারক্ষীরা দাবি করেছেন, তাঁরা কিছুই জানেন না। কোনও অপরিচিত লোকজনেদের দলবেঁধে ওই দিন আবাসনে ঢুকতে-বেরোতেও দেখেননি। এক পরিচারিকাকেও জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ।
শনিবার রাতে মেদিনীপুরের তাঁতিগেড়িয়ার এক আবাসনের তিনটি ফ্ল্যাটে চুরির ঘটনা ঘটে। প্রথমে কোলাপসিবল গেট, তারপর কাঠের দরজার লক ভেঙে টাকা-গয়না নিয়ে পালায় দুস্কৃতীরা। নিরাপত্তারক্ষী থাকা সত্ত্বেও কী ভাবে এমন ঘটনা ঘটল সেই নিয়ে জল্পনা শুরু হয়। প্রশ্নের মুখে পড়ে মেদিনীপুরের নিরাপত্তাও। আবাসিকদের একাংশের অভিযোগ, আবাসন চত্বরে জনা তিরিশেক শ্রমিক থাকে। তাঁরা অন্যত্র কাজ করেন। প্রোমোটাররাই এই শ্রমিকদের এখানে থাকার ব্যবস্থা করেছেন। সেই সূত্রে বহিরাগতদের আনাগোনাও রয়েছে এখানে। এর ফলে আবাসনের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয়। আবাসনে সিসি ক্যামেরাও নেই। সোমবার সন্ধ্যায় ওই আবাসনের বাসিন্দারা এক বৈঠক করেন। সেখানেও নিরাপত্তা জোরদার করা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
বেসরকারি এই আবাসনে ৬টি টাওয়ারে ১১০টি ফ্ল্যাট রয়েছে। যে টাওয়ারে চুরি হয়েছে সেটি পাঁচতলা। এই টাওয়ারে ৩২টি ফ্ল্যাট রয়েছে। এর মধ্যে তিনতলার দু’টি এবং চারতলার একটি ফ্ল্যাটে চুরি হয়েছে। এই তিনটি ফ্ল্যাটের আবাসিকেরাই ঘটনার রাতে ছিলেন না। প্রতিবেশীদের দাবি, তাঁরাও কিছু টের পাননি। তদন্তে নেমে পুলিশ দেখেছে, দরজা ভেঙেই ফ্ল্যাটে ঢুকেছে দুস্কৃতীরা। আলমারির দরজা ভেঙে জিনিসপত্র তছনছ করেছে। তদন্তকারী পুলিশ আধিকারিকের কথায়, “যে ভাবে প্রথমে আবাসনে ঢুকে, তারপর কোলাপসিবল গেট, কাঠের দরজার লক ভেঙে দুষ্কৃতীরা ফ্ল্যাটে ঢুকেছে, তা থেকে স্পষ্ট এই কাজ এক- দু’জনের নয়।’’
পুলিশের অনুমান, দুষ্কৃতীরা একাধিক দলে ভাগ হয়ে ছিল। একদল যখন ফ্ল্যাটের দরজার তালা ভাঙার চেষ্টা করেছে, অন্যদল নিশ্চয়ই তখন আশেপাশে নজর রেখেছিল। দেখছিল, সিঁড়ি বা লিফ্ট দিয়ে কেউ আসছে কি না। পুলিশ এও মনে করছে, যে তিনটি ফ্ল্যাটে চুরি করতে বেশ কিছুটা সময় লেগেছে। কিন্তু দুষ্কৃতীরা কী ভাবে অবাধে আবাসনে দীর্ঘক্ষণ থাকার ঝুঁকি নিল সেটা ভাবাচ্ছে তদন্তকারীদের। আর সেই সূত্রেও জোরাল হচ্ছে চেনামুখের যোগ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy