Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

পুলিশি মদতেই সন্ত্রাসের ছক, দাবি বিরোধীদের

পুলিশি মদতে সন্ত্রাসের ছক তৈরি করেছে তৃণমূল—এমনই অভিযোগ বিরোধীদের। ভোটের দিন ভয় দেখিয়ে বিরোধী কর্মীদের বুথ থেকে সরিয়ে রাখার কৌশলই তারা নেবে বলে আশঙ্কা। বিরোধীদের দাবি, কলকাতা মডেলে পুলিশকে নিস্ক্রিয় করে রাখার পরিকল্পনাও করা হয়েছে। এ নিয়ে শাসক দলকে বিঁধছেন বিরোধী নেতারা।

নিজস্ব সংবাদদাতা
মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০১৫ ০০:৪৭
Share: Save:

পুলিশি মদতে সন্ত্রাসের ছক তৈরি করেছে তৃণমূল—এমনই অভিযোগ বিরোধীদের। ভোটের দিন ভয় দেখিয়ে বিরোধী কর্মীদের বুথ থেকে সরিয়ে রাখার কৌশলই তারা নেবে বলে আশঙ্কা।

বিরোধীদের দাবি, কলকাতা মডেলে পুলিশকে নিস্ক্রিয় করে রাখার পরিকল্পনাও করা হয়েছে। এ নিয়ে শাসক দলকে বিঁধছেন বিরোধী নেতারা। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য দীপক সরকার বলেন, “তৃণমূল গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না। সরকার তাদের শক্তির পরিচয় দেওয়ার চেষ্টা করছে। তবে বুথ দখল হলে মানুষই প্রতিরোধ করবেন।” জেলা কংগ্রেস সভাপতি বিকাশ ভুঁইয়ার বক্তব্য, “পুলিশকে দিয়ে সন্ত্রাস করতে চাইলে তৃণমূল ভুল করবে। যে ভাবেই হোক, কংগ্রেস সেই সন্ত্রাস রুখবে।” বিজেপির জেলা সভাপতি তুষার মুখোপাধ্যায়ের দাবি, “শাসক দল ভোট লুঠের চেষ্টা করলে মানুষই জবাব দেবেন। বিভিন্ন এলাকায় ভোটের পরিবেশই নেই। তৃণমূলের বাহিনী এলাকায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছে।’’

বিরোধীরা একযোগে শাসক দলকে নিশানা করছে। তবে তৃণমূল অবশ্য এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে। তৃণমূলের জেলা সভাপতি দীনেন রায়ের মন্তব্য, “এ সব ওদের কল্পনা। মানুষ সঙ্গে নেই বুঝেই ওরা এ সব বলছে।” জেলা নির্বাচনী আধিকারিক তথা পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলাশাসক জগদীশপ্রসাদ মিনার বক্তব্য, “সুষ্ঠু ও অবাধ ভোট করতে প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপই করা হচ্ছে।”

শাসক দল জুলুমবাজি করে ভোট করলেও কলকাতায় পুলিশকে নিস্ক্রিয় করে রাখা হয়েছিল বলে বিরোধীদের দাবি। তাদের আশঙ্কা, জেলার ভোটেও তাই হবে। পুলিশের এক সূত্রে খবর, ভোটের জন্য বেশ কয়েকজন পুলিশ- কর্তাকে পুরনো এলাকায় ফেরানো হচ্ছে। যেমন, এক সময় চন্দ্রকোনা থানার ওসি ছিলেন সুশান্ত রাজবংশী। ভোটের দিন তাঁর চন্দ্রকোনা বা রামজীবনপুরে থাকারই সম্ভাবনা। ঘাটাল থানার ওসি ছিলেন বিশ্বরঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়। ভোটের দিন তিনিও ঘাটালে থাকাতে পারেন। কয়েকটি থানার ওসি এবং বেশ কয়েকজন এসআই-এএসআইদেরও পুরনো বা পরিচিত এলাকায় ফেরানো হচ্ছে। পুলিশের ওই সূত্রের অবশ্য দাবি, সুষ্ঠু ভোটের জন্যই এই ব্যবস্থা। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা পুলিশের এক অফিসার বলেন, “এতে সুবিধেই হবে। এক সময় যাঁরা কাজ করেছেন, পুরনো এলাকা তাঁদের হাতের তালুর মতো চেনা। ফলে, কোনও গোলমাল হলে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে তা নিয়ন্ত্রণে আনা সহজ হবে।” বিরোধীদের অবশ্য দাবি, শাসক দল ব্যাপক সন্ত্রাস করলেও পুলিশকে কী ভাবে নিষ্ক্রিয় করে রাখা যায়, সে ব্যাপারে একাংশ পুলিশ- কর্তা বেশ পারদর্শী। বেছে বেছে এমন পুলিশ- কর্তাদেরই বাড়তি দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে, যাঁরা এই অংশের মধ্যে পড়েন। যদিও এ ব্যাপারে পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষের কোনও বক্তব্য জানা যায়নি। পুলিশ সুপারের ফোন নিরুত্তর থেকেছে।

কাল, শনিবার পশ্চিম মেদিনীপুরের ৬টি পুরসভায় নির্বাচন। বিরোধীদের অভিযোগ, ইতিমধ্যে ওই পুর- এলাকাগুলোয় তৃণমূল আশ্রিত ছোট- বড় দুষ্কৃতীরা দাপিয়ে বেড়াতে শুরু করেছে। চাপা সন্ত্রাসের পরিবেশ তৈরি করা হচ্ছে। এই পুর- এলাকাগুলোর মধ্যে খড়্গপুর অন্যতম। রেলশহর খড়্গপুর কংগ্রেসের গড় বলেই পরিচিত। কংগ্রেসের গড়ে সম্মানের লড়াইয়ে জিততে শাসক দল ভোট লুঠের ছক করেছে বলেও অভিযোগ। এখানে কংগ্রেসের দাপটের মোকাবিলা করা যে খুব সহজ নয়, তা বুঝতে পারছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। তাই ‘অন্য পথে’ জয় নিশ্চিত করার চেষ্টা চলছে।

পরিস্থিতি বুঝে নিরন্তর হামলার মুখে দাঁড়িয়েও ফের সেই প্রতিরোধের ডাক শোনা যাচ্ছে বিরোধীদের গলায়। রেলশহরের বিদায়ী পুরপ্রধান রবিশঙ্কর পাণ্ডে, শহর কংগ্রেস সভাপতি অমল দাসদের বক্তব্য, “তৃণমূল যেন মনে রাখে এটা খড়্গপুর। কংগ্রেস সব ধরনের পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে জানে।” সিপিআইয়ের জেলা সহ- সম্পাদক বিপ্লব ভট্ট বলেন, “শাসক দল ভোট লুঠের চেষ্টা করলে মানুষ ছেড়ে কথা বলবেন না। প্রতিরোধ হবেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE