Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪
Puja Dole

গভীর রাতেও পুজোর চেক দিচ্ছে পুলিশ

জেলা পুলিশের এক পদস্থ কর্তার কথায়, ‘‘ফের উচ্চ-আদালতে মামলা হয়ে স্থগিত হওয়ার সম্ভাবনা থেকেই যায়। তার আগেই চেক বিলির কাজ সম্পূর্ণ করে ফেলতে চাইছি। এতে রাজ্য সরকারের প্রতিশ্রুতি পূরণ হল। আইনি জটিলতাও এড়ানো গেল।’’

রাতে চেক বিলি। তমলুকে। নিজস্ব চিত্র

রাতে চেক বিলি। তমলুকে। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১২ অক্টোবর ২০১৮ ০১:০৪
Share: Save:

বাগড়া দিচ্ছে বৃষ্টি। প্রস্তুতি খতিয়ে দেখে বুধবার রাত ১২টা নাগাদ বাড়ি ফিরছিলেন পুজো কমিটির এক উদ্যোক্তা। বেজে উঠল মোবাইল। ওপারে থানার আধিকারিক। কী ব্যাপার। এত রাতে ফোন। খানিকটা ঘাবড়েই গিয়েছিলেন ওই উদ্যোক্তা। ভয় ভাঙালেন আধিকারিক। বললেন, ‘‘মণ্ডপে তৈরি থাকুন। আমরা চেক নিয়ে আসছি।’’

লোকজনকে ফোন করে ডেকে তৈরি হতে হতে পেরিয়ে গেল অনেকটা সময়। রাত দেড়টা নাগাদ চণ্ডীপুরের ‘শ্রীকৃষ্ণপুর অষ্টগ্রাম সম্মিলন দুর্গোৎসব’ কমিটির অন্য উদ্যোক্তাদের নিয়ে মণ্ডপের কাছে পৌঁছলেন সম্পাদক বিদ্যুৎ করণ। আরও এক দফা চমক। সেখানে চেক নিয়ে আগেই হাজির হয়েছেন থানার ওই আধিকারিক। তিনি উদ্যোক্তাদের হাতে তুলে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শুভেচ্ছা ভরা খাম। তার মধ্যেই রয়েছে পুজো অনুদানের সরকারি ১০ হাজার টাকার চেক। দেওয়া-নেওয়ার পর্বের মুহূর্ত ক্যামেরাবন্দি করে রাখা হল। ওই দুর্গোৎসব কমিটির সম্পাদক বিদ্যুতের কথায়, ‘‘রাতে ফোন পেয়ে প্রথমে অবাক হয়েছিলাম। পুলিশ পুজো অনুদান দিতে এত রাতে আসবে ভাবতে পারিনি।’’

কেন এত তাড়াহুড়ো? জেলা পুলিশের এক পদস্থ কর্তার কথায়, ‘‘ফের উচ্চ-আদালতে মামলা হয়ে স্থগিত হওয়ার সম্ভাবনা থেকেই যায়। তার আগেই চেক বিলির কাজ সম্পূর্ণ করে ফেলতে চাইছি। এতে রাজ্য সরকারের প্রতিশ্রুতি পূরণ হল। আইনি জটিলতাও এড়ানো গেল।’’ কিন্তু ছবি তুলে রাখার কারণ কী? পুলিশ সূত্রের খবর, পুজো কমিটির উদ্যোক্তাদের হাতে যে সরকারি অনুদানের ১০ হাজার টাকার চেক তুলে দেওয়া হয়েছে তার প্রমাণ রাখতেই এই ব্যবস্থা।

‘শ্রীকৃষ্ণপুর অষ্টগ্রাম সম্মিলন দুর্গোৎসব’ কমিটির মতো গভীর রাতে চেক পেয়েছেন নন্দকুমারের ব্যবত্তারহাট শারদ সঙ্ঘ। তাদের এক উদ্যোক্তা জানালেন, সন্ধ্যায় পুলিশ থানায় ডেকেছিল। সেখানে নথিপত্র দেখার পর চেক নিয়ে হাজির হয় মণ্ডপে। রাত তখন ১টা। একই ছবি হলদিয়া শিল্পাঞ্চলে। সেখানেও বুধবার রাত থেকে বিভিন্ন পুজো কমিটির মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে ঘুরে চেক তুলে দেয় পুলিশ। চেক বিলি করতে বৃহস্পতিবার হলদিয়ার টাউনশিপের মোহনা মার্কেটে পুলিশের পক্ষ থেকে একটি শিবির করা হয়। সূত্রের খবর, হলদিয়া ব্লকের ৩২টি পুজো কমিটি পুজো অনুদান পেয়েছে। নন্দীগ্রাম-১ ও ২ ব্লকের ২৮ টি এবং সুতাহাটা ব্লকের ৫৪ টি পুজো কমিটিকে চেক দেওয়া হয়েছে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, পুজো উদ্যোক্তাদের ১০ হাজার টাকা করে দেওয়ার জন্য মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণার পরেই প্রশাসনিক স্তরে প্রস্তুতি শুরু হয়েছিল। রেজিস্ট্রিকৃত ক্লাব ও পুজো উদ্যোক্তা ছাড়াও ২৫ বছরের বেশি পুজো করছে এমন নন-রেজিস্টার্ড পুজো কমিটি এই অনুদানের তালিকায় স্থান পায়। এজন্য পুজো কমিটিগুলির থেকে প্রয়োজনীয় নথিপত্র জমা নেয় থানাগুলি। কিন্তু হাইকোর্টে মামলায় বিচারকের অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশের জেরে অনুদান দেওয়ার প্রশাসনিক প্রক্রিয়া থমকে যায়। বুধবার হাইকোর্টের রায়ে জটিলতা কাটে। এরপরই জেলা প্রশাসনের অফিসে ট্রেজারি বিভাগে অনুদান প্রাপক পুজো কমিটির নামে চেক তৈরি করা হয় যুদ্ধকালীন গতিতে। বুধবার রাতেই সেই সরকারি চেক থানায় থানায় পৌঁছে দেওয়া হয়। তমলুক-সহ জেলার ২৫টি থানার অধিকাংশতেই রাত থেকে শুরু হয় চেক বিলি।

তিতলির জেরে মন খারাপ করা আবহাওয়া। তবু তারই মধ্যে থানায় ভিড় জমিয়েছিলেন পুজো কমিটির উদ্যোক্তারা। হাতে চেক। মুখে হাসি। পুব আকাশ তখন রাঙা। পকেট চেক পুরে বাড়ির পথে পা বাড়িয়ে এক উদ্যোক্তা বললেন, ‘‘শুনলাম অনুদান মামলা উচ্চ আদালতে গিয়েছে। কখন কী ঘটে যায় কিচ্ছু বলা যায় না। তার আগেই টাকা পাওয়া গেল। মনে হচ্ছে অর্কেস্টা করা যাবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Puja Dole Cheque Kolkata High Court
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE