Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
দিঘার সৈকতের পরিবেশের কী হাল! পরিষেবার হালই বা কী!

ভ্যানোর কালো ধোঁয়ায় অন্ধকার দেখেন পর্যটকরা

দিন দিন দিঘায় পর্যটকের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। যার মধ্যে বিদেশিরাও আছে। পর্যটকদের সুবিধার কথা বিবেচনা করে অজস্র পরিকাঠামো গড়ে তোলা হয়েছে।

সৈকত শহর জুড়ে চলা এমন ভ্যানোতেই আপত্তি পর্যটকদের।

সৈকত শহর জুড়ে চলা এমন ভ্যানোতেই আপত্তি পর্যটকদের।

নিজস্ব সংবাদদাতা
দিঘা শেষ আপডেট: ৩১ অগস্ট ২০১৯ ০০:৪৫
Share: Save:

নিউদিঘায় দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকা একটি হোটেলের সামনে দিয়ে জনাদশেক পর্যটক চাপিয়ে উদয়পুরের উদ্দেশ্যে রওনা দিচ্ছিল একটি ইঞ্জিনচালিত মেশিন রিকশা। স্থানীয় লোকজন যাকে বলে ভ্যানো। ভ্যানোর পিছনে অন্তত একশ মিটার এলাকা জুড়ে কালো ধোঁয়ার কুণ্ডলী। একটু পরেই কালো ধোঁয়ার কুণ্ডলী ছড়াতে ছড়াতে পর্যটকদের নিয়ে দৃষ্টির আড়ালে চলে গেল ভ্যানো। রাজ্যের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্রে এই ভ্যানোর রমরমা শুধু দিঘার বাসিন্দাদের কাছেই নয়, পর্যটকদের কাছেও যন্ত্রণার হয়ে দাঁড়িয়েছে।

দিন দিন দিঘায় পর্যটকের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। যার মধ্যে বিদেশিরাও আছে। পর্যটকদের সুবিধার কথা বিবেচনা করে অজস্র পরিকাঠামো গড়ে তোলা হয়েছে। করা হয়েছে সৌন্দর্যায়ন। কিন্তু পরিকাঠামো গড়তে গিয়ে পরিবেশ রক্ষার বিষয়টিকে সে ভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি বলে ইতিমধ্যেই স্থানীয় প্রশাসন কিংবা রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে সরব হয়েছে পরিবেশপ্রেমীরা। সৈকত শহরে ভ্যানোর কারণে শব্দদূষণ ও বায়ুদূষণ নিয়ে বার বারই অভিযোগ উঠেছে পর্যটকদের পক্ষ থেকে। দিঘাতে বেড়াতে আসা বহু পর্যটকই অভিযোগ করেছেন, দিঘায় এক জায়গা থেকে আর এক জায়গায় যেতে হলে ভ্যানো ছাড়া উপায় থাকে না। অথচ ভ্যানোর ইঞ্জিনের জোরাল শব্দ এবং কালো ধোঁয়ায় প্রাণ অতিষ্ঠ হয়। একই অভিযোগ অটোর বিরুদ্ধেও। তবে বর্তমানে ব্যাটারি চালিত প্রচুর টোটো সৈকত শহরে চালু হওয়ায় কিছিটা হলেও স্বস্তি পেয়েছেন পর্যটকেরা।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, নিউ দিঘায় কমপক্ষে ৮টি রিকশাস্ট্যান্ড রয়েছে। ওল্ড দিঘাতেো কমবেশি সমসংখ্যক রিকশাস্ট্যান্ড রয়েছে। সেখান থেকে ভ্যানোর চেপে দিঘা মোহনা কিংবা উদয়পুর এবং চন্দনেশ্বর বেড়াতে যান পর্যটকেরা। নিউ দিঘায় আনুমানিক ২০০টি ভ্যানো রয়েছে। এক দশকেরও বেশি সময় ধরে সৈকত শহরে ওই সব ভ্যানো দাপিয়ে বেড়াচ্ছে বলে অভিযোগ। পরিবেশ দূষণ সৃষ্টিকারী এই ধরনের ইঞ্জিন চালিত রিকশা রাজ্যে বন্ধ করতে ইতিমধ্যেই নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। অথচ তার পরেও দিঘার মতো পর্যটন কেন্দ্রে কী ভাবে ভ্যানো চলছে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন পরিবেশপ্রেমীরা। এ ব্যাপারে প্রশাসনের উদাসীনতা নিয়ে সমালোচনা করেছেন তাঁরা। ভ্যানো চালকদেরও দাবি, প্রশাসনের পক্ষ থেকেও তাঁদের এ বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি।

এক পর্যটকের কথায়, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী দিঘাকে গোয়ার মতো করে সাজানোর কথা বলছেন। দিঘায় পুরীর মন্দিরের আদলে জগন্নাথ মন্দির গড়ার কথা বলছেন। কিন্তু পুরীর সৈকতের রাস্তায় ভ্যানোর বিকট আওয়াজ বা দূষণ নেই। সেখানে অটো-টোটো রয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী পুরীর মতো দিঘাতেও ভ্যানো নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা নিলে দূষণের হাত থেকে অনেকটাই রক্ষা পাবে সৈকত। রক্ষা পাবেন পর্যটকেরাও।’’

শুধু ইঞ্জিনচালিত রিকশা নয়, দিঘায় অটো নিয়েও অভিযোগ রয়েছে। নিউ এবং ওল্ড দিঘা মিলিয়ে এই মুহূর্তে কয়েক হাজার অটো চলে। এদের অধিকাংশেরই প্রয়োজনীয় অনুমোদন নেই ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে। রামনগর-১ এর বিডিও আশিস রায় বলেন, ‘‘অটো এবং ইঞ্জিন চালিত ভ্যান নিয়ন্ত্রণ করার জন্য মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন। এই বিষয়ে স্থানীয় পুলিশ এবং আঞ্চলিক পরিবহণ আধিকারিকের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। দ্রুত ওইসব যানগুলির বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে তাদের বৈধতা খতিয়ে দেখা হবে।’’

নিকাশি নিয়েও অসন্তোষ রয়েছে দিঘার বাসিন্দা থেকে পর্যটকদের। ওল্ড দিঘার প্রতীক্ষালয়, নেহরু মার্কেট সহ একাধিক এলাকায় সামান্য বৃষ্টিতেই জল দাঁড়িয়ে যায়। এতে পথচারীদের অসুবিধে হয় বলে অভিযোগ। স্থানীয়দের অভিযোগ, দিঘা জুড়ে যে সব হাই ড্রেন তৈরি করা হয়েছে তার মাধ্যমে ও শহরের বর্জ্য এবং নোংরা জল ঠিকমতো বেরোতে পারছে না। দিঘা-শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদ সূত্রে জানানো হয়, শহরের নোংরা জল এবং বর্জ্য শোধন করে হাই ড্রেনের মাধ্যমে সমুদ্রে ফেলা হয়। হোটেল মালিকদেরও এ ব্যাপারে বার বার সতর্ক করা হয়েছে। একই সঙ্গে যাতে দূষিত জল থেকে পরিবেশ অস্বাস্থ্যকর না হয়ে ওঠে, তার জন্যও তদারকি কমিটি তৈরি করা হচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Digha Sea Bea Pollution
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE