Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

নেই-রোগে ধুঁকছে সব কলেজই

কোথাও প্রয়োজনের তুলনায় শিক্ষক-শিক্ষাকর্মী কম, কোথাও বা প্রয়োজনীয় সংখ্যক ল্যাবরেটরি, লাইব্রেরি নেই। যেখানে আছে সেখানে আবার সরঞ্জাম কিংবা বইপত্রের অভাব। পুরনো হোক বা নতুন, রোগের প্রকোপে পশ্চিম মেদিনীপুরের বেশিরভাগ কলেজ।

বরুণ দে
মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ১০ জুন ২০১৬ ০১:২৮
Share: Save:

কোথাও প্রয়োজনের তুলনায় শিক্ষক-শিক্ষাকর্মী কম, কোথাও বা প্রয়োজনীয় সংখ্যক ল্যাবরেটরি, লাইব্রেরি নেই। যেখানে আছে সেখানে আবার সরঞ্জাম কিংবা বইপত্রের অভাব। পুরনো হোক বা নতুন, রোগের প্রকোপে পশ্চিম মেদিনীপুরের বেশিরভাগ কলেজ।

এক সময় পশ্চিম মেদিনীপুরে ২৩টি কলেজ ছিল। এখন কলেজের সংখ্যা ৩২। বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে সেই সব কলেজেই এখন প্রথম বর্ষে ভর্তি প্রক্রিয়া চলছে। কলেজে কলেজে জমছে আবেদনের পাহাড়। ভাল কলেজগুলিতে ভিড় তুলনায় বেশি। কিন্তু পুরনো হোক বা নতুন, গ্রামের হোক বা শহরের, নামী হোক বা অনামী, সব কলেজেই পরিকাঠামো তথৈবচ। ফলে, পঠনপাঠনের মান নিয়ে পড়ুয়া, অভিভাবকরা উদ্বিগ্ন।

ছবিটা ঠিক কী রকম?

জেলার সদর শহর মেদিনীপুরে একাধিক কলেজ রয়েছে। তবে সর্বত্রই সেই পরিকাঠামোর অভাব। মেদিনীপুর কমার্স কলেজে যেমন ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ১,৭৯০। ৪টি বিষয়ে অনার্স এবং ৬টি বিষয়ে পাস কোর্স পড়ানো হয় এখানে। অথচ শিক্ষকের পদ রয়েছে মাত্র ১৩টি। তার মধ্যে ৩টি পদ আবার শূন্য। পরিস্থিতি দেখে ৫ জন আংশিক সময়ের শিক্ষক এবং ৩ জন অতিথি শিক্ষক নিতে হয়েছে। পর্যাপ্ত শিক্ষাকর্মীও নেই। শিক্ষাকর্মীর ১৫টি পদের মধ্যে ৭টি পদই শূন্য। আর সব মিলিয়ে কলেজে ক্লাসঘর রয়েছে ২৫টি। কমার্স কলেজের অধ্যক্ষ দুলালচন্দ্র দাস বলেন, ‘‘শূন্যপদগুলো পূরণ হলে ভাল হয়। ক্লাসরুমের সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় কম। তা বাড়ানোর চেষ্টা চলছে।’’

স্বশাসিতের স্বীকৃতি পাওয়া মেদিনীপুর কলেজেও সেই এক সঙ্কট। প্রায় সাড়ে ৪ হাজার ছাত্রছাত্রীর জন্য শিক্ষক পদ রয়েছে ৯৪টি। কিন্তু স্থায়ী শিক্ষক আছেন ৬১ জন। আর আংশিক সময়ের শিক্ষক ৫০ জন ও অতিথি শিক্ষক ৪৭ জন। ছাত্রছাত্রীরা জানালেন, ৩৩ জন শিক্ষকের পদ শূন্য থাকায় আংশিক সময়ের ও অতিথি শিক্ষকদের ভরসাতেই কলেজ চলে। কিন্তু অভিযোগ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তাঁদের পড়ানোর মান ভাল নয় এবং দায়বদ্ধতাও তুলনায় কম।

স্বশাসিত এই কলেজে এখন ২১টি বিষয়ে সাম্মানিক স্নাতক এবং ১১টি বিষয়ে স্নাতকোত্তর পড়ানো হয়। অথচ পুরনো এই কলেজে নেই-এর তালিকা বেশ দীর্ঘ। এখানে সেন্ট্রাল রিসার্চ ল্যাবরেটরি নেই, ওয়াই-ফাই জোন নেই, সব বিভাগে ই-ক্লাসরুম, স্মার্ট বোর্ড নেই। মেদিনীপুর কলেজের (স্বশাসিত) অধ্যক্ষ গোপালচন্দ্র বেরা বলেন, “ক্লাসরুমের সংখ্যা বাড়াতে হবে। আর একটা ক্যাম্পাস হলে ভাল হয়।’’ সে জন্য জায়গা চেয়ে জেলা প্রশাসনের কাছে আবেদনও করেছেন কলেজ কর্তৃপক্ষ।

সমস্যা কিন্তু শুধু পুরনো কলেজগুলোতে নয়। কয়েক বছরের মধ্যে পথচলা শুরু করেছে, এমন কলেজেও রয়েছে পরিকাঠামোর অভাব। শালবনি, লালগড়, নয়াগ্রাম-সহ জেলার ৯টি এলাকায় নতুন কলেজ খোলা হয়েছে। শালবনি কলেজ গড়ে ওঠে ২০১১ সালে। পঠনপাঠন শুরু হয়েছে ২০১৪-’১৫ শিক্ষাবর্ষ থেকে। ৫টি বিষয় অনার্স ছিল। আসন সংখ্যা ছিল ২৩৫। এ বার আরও দু’টি বিষয় অনার্স চালু হবে। আসন সংখ্যা বেড়ে হবে ৩০৫। কিন্তু শিক্ষক পদ সেই ১৯টি। আর রয়েছেন মাত্র ১৬ জন শিক্ষক। শিক্ষাকর্মীর পদ ১২টি। রয়েছেন মাত্র ৩ জন। পরিস্থিতি দেখে চুক্তিভিত্তিক কর্মী নিয়োগ করা হয়েছে। প্রয়োজনীয় সংখ্যক ল্যাবরেটরি নেই। কলেজের টিচার ইনচার্জ শান্তনু ধর বলেন, ‘‘পরিকাঠামোগত উন্নতির সব রকম চেষ্টা চলছে। পৃথক সায়েন্স ব্লিডিং হলে ভাল হয়।’’ তবে তিনতলা ভবন চারতলা করতে অর্থ বরাদ্দ হয়েছে।

জেলার অনেক কলেজেই স্থায়ী অধ্যক্ষ নেই। কাজ সামলাচ্ছেন টিচার ইন-চার্জ। স্থায়ী অধ্যক্ষ না থাকায় কলেজের পরিকাঠামো উন্নয়নও ব্যাহত হয়। জেলার একটি কলেজের টিচার ইন-চার্জের কথায়, “সপ্তাহে ১৮-২৪টি ক্লাস নিতে হয়। অধ্যক্ষকে এত ক্লাস নিতে হয় না। ক্লাসের চাপ সামলে কলেজের প্রশাসনিক কাজকর্ম সামলানো খুব সহজ হয় না।’’

কলেজে কলেজে পরিকাঠামোগত সমস্যার কথা মানছেন বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য রঞ্জন চক্রবর্তী বলেন, “কিছু কলেজে পরিকাঠামোগত সমস্যা থাকতে পারে। হয়তো আছেও। তবে ধীরে ধীরে তার উন্নতি হচ্ছে।’’ উপাচার্যের কথায়, ‘‘সব কাজ তো একসঙ্গে হয় না।’’ তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক আধিকারিকের আশ্বাস, ‘নতুন-পুরনো কলেজগুলোয় পরিকাঠামোগত যে ফাঁকফোকর রয়েছে, এ বার তা ধীরে ধীরে বুজিয়ে ফেলা হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

colleges district
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE