স্বাস্থ্যকেন্দ্রের দরজায় বোলতার বাসা। নিজস্ব চিত্র
কাঠের দরজার মাথার উপরের চৌকাঠের কোটরে অজস্র বোলতা। উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সদর দরজা দিয়ে ঢোকার সময় প্রায়ই খেতে হয় বোলতার কামড়। নিয়মিত উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র খোলা হয় না বলে দরজার চৌকাঠে বোলতার বাসা হয়েছে বলে অভিযোগ একাংশ এলাকাবাসীর।
পূর্ণাপাণির জঙ্গলখাস থেকে কিলোমিটার খানেক সহজপথে তাড়কি উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র। লালগড় ব্লকের লালগড় গ্রাম পঞ্চায়েতের তাড়কি উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রের আওতায় রয়েছে ১৫টি গ্রাম। সপ্তাহে তিন দিন (সোম, বুধ, শুক্র) উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র খোলা থাকার কথা। কিন্তু সব দিন উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র খোলা থাকে না বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। এখন অবশ্য সকাল সকাল কেন্দ্র খোলা হচ্ছে। স্বাস্থ্য দফতরের সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলায় যক্ষ্মা আধিকারিকের পদটি খালি। জেলা হওয়ার পরে ওই পদে কোনও আধিকারিক নিয়োগ করেনি রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর। জেলার সহকারী মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক মনোজ মুর্মু যক্ষ্মা আধিকারিকের দায়িত্ব সামলাচ্ছেন।
এলাকায় কত জন যক্ষ্মারোগী আছেন? কেন্দ্রের নথিতে (কর্মীরা যা জানিয়েছেন) মাত্র চার জন যক্ষ্মারোগী। তার মধ্যে মঙ্গল ওরফে মংলু শবরের মৃত্যু হয়েছে। কেন্দ্রের স্বাস্থ্য কর্মী ও আশাকর্মীরা দাবি করেছিলেন, যক্ষ্মায় আক্রান্তরা সেরে উঠেছেন। এলাকায় যক্ষ্মারোগীর খোঁজ মেলেনি। অথচ মঙ্গলবার পূর্ণাপাণির চার জন অসুস্থ শবরকে ঝাড়গ্রাম জেলা সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। ওই চার জনের মধ্যে একজনের কফ পরীক্ষা করে যক্ষ্মা ধরা পড়েছে। বুধবার থেকে তাঁর চিকিত্সা শুরু হয়েছে। এক জন ডায়েরিয়ায় আক্রান্ত। বাকি দু’জনের অপুষ্টিজনিত উপসর্গ রয়েছে। ওই এলাকায় স্বাস্থ্য পরিষেবার কাজ কেমন চলছে তা নিয়ে অস্বস্তি রয়েছে স্বাস্থ্য দফতরের অন্দরে। মৃত মংলু শবরের বাবা চুনু শবর বলেন, ‘‘উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে ছেলেকে ওষুধ দিত। ছেলে ওষুধ খেত কী খেত না, সেটা আর নজরদারি করব কখন। আর ওই ওষুধ কখন কীভাবে খেতে হত আমি জানতামও না।” মেদিনীপুর লোধা-শবর কল্যাণ সমিতির সম্পাদক বলাইচন্দ্র নায়েক বলেন, “শবরদের প্রতি স্বাস্থ্য দফতরের স্থানীয় কর্মীরা যত্নশীল হলে যক্ষ্মায় মৃত্যু কী ঠেকানো কি যেত না! শুধু কি ওষুধ ধরিয়ে দিলেই হল?’’
ঝাড়গ্রাম জলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অশ্বিনীকুমার মাঝি বলেন, “ডটের চিকিত্সা যথাযথ চলছে। কফ পরীক্ষায় যক্ষ্মার জীবাণু মিললে চিকিত্সা শুরু হয়। যক্ষ্মারোগীদের প্রতি বাড়তি নজর দেওয়া হচ্ছে। জেলা যক্ষ্মা আধিকারিক পদটি পূরণ করার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy