Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

বন্দিকে ছেড়ে শো-কজের মুখে দুই কারাকর্তা 

জেল সূত্রের খবর, শো- কজের জবাব সন্তোষজনক না- হলে এই দুই জেল আধিকারিকের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নিতে পারে কারা দফতর। 

নিজস্ব সংবাদদাতা
মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ২৯ মার্চ ২০১৯ ১০:২০
Share: Save:

নির্দেশ ছাড়াই এক বন্দিকে জেল থেকে ছেড়ে দেওয়ার ঘটনায় শো- কজ করা হয়েছে জেলের দুই আধিকারিককে। জেলের এক সূত্রে এ খবর জানা গিয়েছে। ওই সূত্র জানাচ্ছে, শো- কজের মুখে পড়েছেন এক জেলার এবং এক ডেপুটি জেলার। জেল সূত্রের খবর, শো- কজের জবাব সন্তোষজনক না- হলে এই দুই জেল আধিকারিকের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নিতে পারে কারা দফতর।

জেলের দুই আধিকারিককে কি শো- কজ করা হয়েছে? মেদিনীপুর জেলের সুপার সৌমিক সরকার বলেন, ‘‘আমি কিছু বলব না।’’ তবে জেলের অন্য এক কর্তা মানছেন, ‘‘ঘটনায় দু’জনকে শো- কজ করা হয়েছে। শো- কজের উত্তর খতিয়ে দেখে পরবর্তী পদক্ষেপ করবে দফতর।’’

বৃহস্পতিবার দিনভর এ নিয়ে জেলের অন্দরে শোরগোল ছিল। বুধবার মেদিনীপুর আদালতে হাজিরার দিন ছিল চন্দন ঘোড়ই নামে এক বন্দির। আদালতে হাজির করানোর জন্য খোঁজ করতে গিয়ে দেখা যায়, ওই বন্দি জেলেই নেই। দিন দুয়েক আগেই তাঁকে জেল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। ঘটনায় তোলপাড় পড়ে জেলের অন্দরে। বিভাগীয় তদন্ত শুরু করে কারা দফতর।

জেলের এক সূত্রের খবর, এ নিয়ে ডিজি (কারা) অরুণকুমার গুপ্তের কাছে এক রিপোর্টও পাঠানো হয়েছে। কী ভাবে এমন ঘটনা ঘটতে পারে? জেল- কর্তৃপক্ষের সাফাই, ভুল করে ওই বন্দিকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। সূত্রের খবর, বুধবার আদালতে এই ভুল স্বীকার করেছেন জেল- কর্তৃপক্ষ। ওই দিন আদালতে এসেছিলেন জেলের সুপার সৌমিক সরকার। এসেছিলেন জেলের আরও একাধিক আধিকারিক। কর্তব্যে যাঁদের গাফিলতি রয়েছে, তাঁদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য জেল- কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছে আদালত। সরকারি আইনজীবী সৈয়দ নাজিম হাবিব মানছেন, ‘‘আদালত জেল- কর্তৃপক্ষকে এক নির্দেশ দিয়েছে। যাঁদের গাফিলতি রয়েছে, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছে।’’

চন্দনের বাড়ি নারায়ণগড় থানা এলাকায়। তাঁর বিরুদ্ধে দু’টি মামলা রয়েছে। একটি খোরপোষ সংক্রান্ত। অন্যটি, বধূ নির্যাতন সংক্রান্ত। গত ২৬ ফেব্রুয়ারি থেকে এই বন্দি মেদিনীপুর জেলে ছিলেন। খোরপোষ সংক্রান্ত মামলায় তাঁর এক মাসের জেল হয়েছিল।

গত সোমবার অর্থাৎ, ২৫ মার্চ তাঁকে জেল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। জেল থেকে ছাড়া পেয়ে বাড়ি ফেরেন তিনি। বধূ নির্যাতন মামলায় এই অভিযুক্তের খোঁজ শুরু হতেই টনক নড়ে জেল- কর্তৃপক্ষের। তাঁরা বুঝতে পারেন, আদালতের নির্দেশ ছাড়াই ভুল করে ওই বন্দিকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

জেলের এক সূত্রে খবর, এই ঘটনায় জেলার বিভু মল্লিক এবং ডেপুটি জেলার শোভন মান্ডিকে শো- কজ করা হয়েছে। জেল- কর্তৃপক্ষ মনে করেছেন, কর্তব্যে তাঁদের গাফিলতি ছিল। না- হলে এমন ঘটনা কখনওই ঘটত না। ভুল কবুল করেছেন ওই দুই আধিকারিক। জেল- কর্তৃপক্ষকে তাঁরা জানিয়েছেন, ফাইল থেকে একটি কাগজ কোনও কারণে ‘মিসিং’ হয়ে গিয়েছিল। ফলে, তাঁরা বুঝতে পারেননি যে চন্দনের বিরুদ্ধে আরও একটি মামলা ঝুলে রয়েছে।

বস্তুত, আদালতের নির্দেশে যেমন কোনও বিচারাধীন কিংবা সাজাপ্রাপ্ত বন্দিকে জেলে রাখা হয়, তেমনই আদালতের নির্দেশ ছাড়া কোনও বিচারাধীন বন্দিকে জামিনে ছাড়া যায় না। কাউকে জামিনে মুক্তি দিলে বন্দির নাম এবং কেস নম্বর উল্লেখ করে আদালত নির্দেশ পাঠায় সংশ্লিষ্ট জেলে। এ ক্ষেত্রে বন্দিকে ছাড়ার কোনও নির্দেশ আদালতের তরফে ছিল না।

জেলের এক কর্তা বলেন, ‘‘ফাইল থেকে কোনও কাগজ মিসিং হয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখা হবে। যদি ফাইল মিসিং হয়ে থাকে তা কী ভাবে হল, বিভাগীয় তদন্তে সমস্ত দিকই যাচাউ করে দেখা হচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Medinipur Police
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE