প্রতিবাদ: খড়্গপুরে রেল কর্মীদের মিছিল। নিজস্ব চিত্র
ক্যান্টিনে পরিষেবার মান নিয়ে অভিযোগে ঊর্ধ্বতন আধিকারিককে ঘেরাও করে আন্দোলন। এক বছর আগের সেই আন্দোলনের জেরে একজনকে চাকরি থেকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেল। আরও ন’জনের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থার সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছে। গত ১০ নভেম্বর রেল এই সিদ্ধান্ত জানানোর পর থেকেই ক্ষোভ ফুঁসছিল কর্মীরা। শুক্রবার খড়্গপুর রেল কারখানার গেট থেকে মিছিল করে ডিআরএম অফিস ঘেরাও করল রেলের মেনস ইউনিয়ন।
নিম্ন মানের খাবার, পর্যাপ্ত খাবারের অভাব-সহ একাধিক অভিযোগে ২০১৭ সালের ১৪ মে খড়্গপুরে রেল কারখানার ডিজেল শপের কর্মীরা আন্দোলনে নামেন। ডেপুটি চিফ মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারকে ঘেরাও করেন তাঁরা। ঘটনায় উত্তেজনা ছড়ায় রেল কারখানায়। সেই সময়ে ওই কর্মীদের সঙ্গে রেল সুরক্ষা বাহিনীর হাতাহাতি হয়। এর জেরে ওই শপের কর্মী বাদল অধিকারী, কৌশিক সরকার ও সেলিম আকতার নামে তিন কর্মীকে ‘রিমুভ ফ্রম সার্ভিস’ করা হয়। এর পরে রেল কারখানার সিডব্লিউএম একটি তদন্ত কমিটি গড়ে তদন্তের নির্দেশ দেন। তবে আন্দোলনের জেরে রেল কর্তৃপক্ষ বরখাস্ত হওয়া তিন কর্মীকে গ্রেড কমিয়ে চাকরিতে পুনর্বহাল করেন।
বছর খানেক আগে গঠিহ হওয়া তদন্ত কমিটি সম্প্রত চার্জশিট জমা দিয়েছে। সেই চার্জশিটে অভিযুক্ত হিসেবে ১০জনের নাম রয়েছে। তাঁদের মধ্যে কবীর মল্লিককে ‘রিমুভ ফ্রম সার্ভিস’ করা হয়। এ ছাড়াও বি ভট্টাচার্য, এ কে চৌধুরী, রমেশ কুমার, রুপালি সেনগুপ্ত, এ কে বেহেরা-সহ ৮জনের বেতনক্রম কমিয়ে বিভিন্ন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েছে রেল। এই সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ রেলকর্মীরা। চাকরি থেকে বহিষ্কার হওয়া মেনস ইউনিয়নের শাখা সম্পাদক কবীর মল্লিকের দাবি, “যে সময় আন্দোলন হয়েছিল সেই সময়ে আমি ছুটিতে ছিলাম। কিন্তু তদন্ত কমিটি ভুল তদন্ত করে এমন চার্জশিট দিয়েছে।”
এ বার সংগঠিতভাবে আন্দোলন করতে কারখানার বাইরে গিয়ে আন্দোলনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেলের মেনস ইউনিয়ন। তাদের সঙ্গে শামিল হয়েছেন রেলের চালকেরাও। কারণ দিন কয়েক আগে সহকর্মীর মৃত্যুতে সরব হয়ে অফিস ভাঙচুরে অভিযুক্ত ৮ জন ট্রেন চালককে চাকরি থেকে বরখাস্ত করে রেল। মেনস ইউনিয়নের দাবি, মূলত অফিসারদের স্বার্থ সুরক্ষিত রাখতে রেল কর্তৃপক্ষ অফিসারদের কথায় এ ভাবে গণতন্ত্র হত্যা করতে এই ব্যবস্থা নিচ্ছে। তবে রেল কর্তৃপক্ষের দাবি, ভাঙচুর, মারধরের মতো উগ্র আন্দোলন কখনও গণতান্ত্রিক আন্দোলন হতে পারে না। তাই এই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা।
রেলের মেনস ইউনিয়নের দক্ষিণ-পূর্ব রেলের সহকারী সাধারণ সম্পাদক অজিত ঘোষালের অভিযোগ, “কর্মচারীদের চাকরি থেকে বরখাস্ত করে পরিবারগুলিকে খুন করছে রেল। রেল কর্তৃপক্ষ চাইছে এ ভাবে কর্মীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়ে কর্মচারী সংগঠনগুলিকে দুর্বল করতে।’’ তাঁর দাবি, ‘‘আসলে সিডব্লিউএম-এর চাপে তদন্ত কমিটি এমন অনৈতিক চার্জশিট দিয়েছে। মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার এ ভাবে কেড়ে নেওয়া যায় না। দিনের পর দিন বঞ্চনা চলতে থাকলে আন্দোলনের ঝাঁঝ তো বাড়বেই।”
যদিও এ নিয়ে খড়্গপুরের সিডব্লিউএম অনিলকুমার গুপ্ত বলেন, “তদন্ত কমিটির চার্জশিটের প্রেক্ষিতে যা পদক্ষেপ করার করা হয়েছে। এতে আমার চাপ থাকবে কেন! গণতান্ত্রিক আন্দোলন গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে হওয়া প্রয়োজন। ভাঙচুর, আধিকারিককে আটকে রাখা, মারধর নিশ্চয় গণতান্ত্রিক আন্দোলনের অঙ্গ নয়। এই এমন ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy