Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

শহরে সম্প্রীতির ছবি মহরমের মিছিল বরণে পুজো কমিটি

মেদিনীপুর আলম কমিটির উদ্যোগে রবিবার বিকেলে মেদিনীপুর শহরে শোক মিছিল বেরিয়েছিল। মহরম উপলক্ষ্যে মির্জামহল্লা থেকে শুরু হওয়া মিছিলে ছিলেন বিধায়ক আশিস চক্রবর্তী, প্রাক্তন বিধায়ক সন্তোষ রাণা, কাউন্সিলর সৌমেন খানরা।

বন্ধু: মহরমের মিছিলে সামিলদের দেওয়া হল ফুল। ছবি: কিংশুক আইচ।

বন্ধু: মহরমের মিছিলে সামিলদের দেওয়া হল ফুল। ছবি: কিংশুক আইচ।

বরুণ দে
মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ০২ অক্টোবর ২০১৭ ০১:২৪
Share: Save:

ধর্মের সীমারেখা মুছে গেল সৌহার্দ্য আর সৌজন্যে। ফের একবার সম্প্রীতির সুর ধরা পড়ল শহর মেদিনীপুরে। মহরমের মিছিলে সামিল হওয়া মানুষজনকে ফুল দিয়ে বরণ করে মিষ্টিমুখ করালেন দুর্গোত্সব কমিটির লোকজনেরা।

মেদিনীপুর আলম কমিটির উদ্যোগে রবিবার বিকেলে মেদিনীপুর শহরে শোক মিছিল বেরিয়েছিল। মহরম উপলক্ষ্যে মির্জামহল্লা থেকে শুরু হওয়া মিছিলে ছিলেন বিধায়ক আশিস চক্রবর্তী, প্রাক্তন বিধায়ক সন্তোষ রাণা, কাউন্সিলর সৌমেন খানরা। নিমতলাচক, স্কুলবাজার হয়ে মিছিল নতুনবাজারে কারবালা শরিফে পৌঁছয়। আলম কমিটির সম্পাদক হাজি আবদুল রাশেদ বলছিলেন, “জাতি-ধর্ম, দল-মত নির্বিশেষে সকলেই শোক মিছিলে পা মিলিয়েছেন।’’ মিছিল যখন নিমতলাচক ছুঁয়ে এগোচ্ছে, তখনই রাস্তার পাশে দাঁড়িয়েছিলেন বটতলাচক সর্বজনীনের উদ্যোক্তারা। হাতে ফুলের তোড়া আর মিষ্টি। শোক মিছিলে সামিল হওয়া সকলকেই ফুল দিয়ে বরণ করা হয়। মিষ্টিমুখও করানো হয়। দুর্গোৎসব কমিটির পক্ষে বৈদ্যনাথ বেহেরা বলছিলেন, “মেদিনীপুর শান্তির শহর, সম্প্রীতির শহর। সেই মেলবন্ধন আরও মজবুত করতেই এই উদ্যোগ।’’ আলম কমিটির কার্যকরী সভাপতি রাজেশ হোসেনও মানছেন, “সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি এই শহরের মূলধন। এমন উদ্যোগে সম্প্রীতির বাঁধন আরও মজবুত হবে।’’

শহরের বহু দুর্গাপুজোতেও এ বার মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষজনকে সক্রিয় ভূমিকায় দেখা গিয়েছে। মণ্ডপে মণ্ডপে ঠাকুর দেখার দলেও ছিলেন মুসলিমরা। নিমতলাচকের শেখ সানির কথায়, “আমরা হিন্দু-মুসলিম বাড়ির ছেলেমেয়েরা একসঙ্গে বড় হয়েছি, খেলেছি, স্কুলে। দুই সম্প্রদায়ের উৎসবেও সকলে মিলেমিশে থাকব এটাই তো বড় কথা।’’

শনিবার ছিল দুর্গাপুজোর দশমী। আর রবিবার পালিত হয়েছে মহরম। পিঠোপিঠি দুই অনুষ্ঠান সুষ্ঠু ভাবেই মিটেছে মেদিনীপুরে। শহরের গোলকুয়াচকে সম্প্রীতির ছবির দেখা মেলে বরাবরই। ইদের লাচ্চা, সিমুই যেমন হিন্দুর ঘরে পৌঁছেয়। তেমন দুর্গাপুজোর অন্নভোগ যায় মুসলিম পরিবারে। শেখ মোমিন, শেখ সামজানদের কথায়, “পুজো শুধু হিন্দুদের, মহরম মুসলিমদের, তা মনে

করি না। দুর্গাপুজোয় যেমন আনন্দ করি, আমাদের বন্ধুরাও মহরমে সামিল হন।’’

এ দিন সকালে শহরের বিভিন্ন মহল্লা থেকে তাজিয়া নিয়ে শোভাযাত্রা বেরোয়। গোলকুয়াচকের কাছে মেলা বসে। বহু মানুষ এখানে আসেন। ছিলেন পুলিশ-প্রশাসনের কর্তারা, পুরকর্তারাও। বেশ কয়েকটি মহল্লা সুশৃঙ্খল ভাবে শোভাযাত্রা করে। গোলকুয়াচকেও পুজো কমিটির লোকজনেরা মহরমের মিছিলে সামিল হওয়া লোকজনেদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন, লাঠি খেলেন। গোলকুয়াচক সৃষ্টি সর্বজনীনের পক্ষে সৌরভ বসু বলছিলেন, “মেদিনীপুরে কোনও উত্সবেই ধর্ম-বর্ণ-জাতির বিভেদ থাকে না।’’ বিধায়ক মৃগেন মাইতিরও বক্তব্য, “মেদিনীপুরে যে কোনও উত্সবই সৌহার্দ্যের মধ্যে দিয়ে পালিত হয়। এ বারও তাই হয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Muharram Durga Puja Harmony
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE