প্রচার: সচেতনতা বাড়াতে নাটক খড়্গপুর স্টেশন চত্বরে। নিজস্ব চিত্র
টিকিট কাউন্টারে দীর্ঘ লাইন। শেষ মূহূর্তে স্টেশনে এসে টিকিট না পেয়ে তড়িঘড়ি ট্রেনে উঠে গিয়েছিলেন এক কলেজ ছাত্র। টিকিট পরীক্ষক অবশ্য সে সব কথা শোনেনি। নিয়ম মতো তাঁকে জরিমানা দিতে হয়। সব দেখে এক সহযাত্রী ওই ছাত্রকে অ্যাপেই অসংক্ষিত আসনের টিকিট কাটার পরামর্শ দিলেন। সব শুনে ওই ছাত্র স্মার্টফোনে ওই অ্যাপ ইনস্টলও করে ফেলেন চোখের নিমেষে। তারপর থেকে লাইনে না দাঁড়িয়ে অ্যাপের মাধ্যমেই টিকিট কাটেন তিনি।
অনেকেই অ্যাপের কথা জানেন। অ্যাপের মাধ্যমে ট্রেনের অসংরক্ষিত আসনের টিকিট কাটা যায়, সেটা অনেকে জানেনও না। তাই শুক্রবার খড়্গপুর রেল স্টেশনের বোগদা টিকিট কাউন্টারের সামনে অ্যাপের মাধ্যমে টিকিট কাটার খুঁটিনাটি জানানো হল নাটকের মাধ্যমে।
রেলের কমার্শিয়াল বিভাগের উদ্যোগে আয়োজিত এই প্রচার অভিযানে ইউটিএস অ্যাপের ব্যবহার, ‘অ্যাপ ইনস্টলেশন’, ওয়ালেটে টাকা জমার নিয়ম-সহ নানা খুঁটিনাটি বিষয়ে যাত্রীদের জানানো হয়। সেই সঙ্গে টিকিট কাউন্টারের লম্বা লাইনে না দাঁড়িয়ে অ্যাপ ব্যবহারের পরামর্শ দিয়ে মাইকে প্রচারও চালানো হয়। আগামীদিনে খড়্গপুর ডিভিশনের হাওড়া, সাঁতরাগাছি, মেচেদা, পাঁশকুড়া, বালেশ্বর, বেলদা, মেদিনীপুর, ঘাটশিলা-সহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ স্টেশনেও এই প্রচার চালানো হবে বলে রেল সূত্রে জানা গিয়েছে।
২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে খড়্গপুর-হাওড়া শাখায় প্রথম এই ‘ইউটিএস’ অ্যাপ চালু করে খড়্গপুর রেল ডিভিশন। এর পরে দিঘা, হলদিয়া, মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, জলেশ্বর শাখাতেও ধাপে-ধাপে এই অ্যাপে টিকিট কাটার সুযোগ দেওয়া হয়।
এ দিন যখন অ্যাপের মাধ্যমে টিকিট কাটায় যাত্রীদের উৎসাহ বাড়াতে প্রচার চালাচ্ছে রেল, ঠিক সেই সময়ই টিকিট কাউন্টারে দেখা গেল অন্য দিনের মতোই দীর্ঘ লাইন। এ দিন হাওড়া যাওয়ার জন্য কাউন্টারে দাঁড়িয়ে পেপার টিকিট কাটছিলেন আইআইটি-র ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের এমটেক-এর ছাত্র বিশাল বাজেঠা। কেন ইউটিএস অ্যাপ ব্যবহার করছেন না? হাসিমুখে বিশালের জবাব, “চার মাস আগে অ্যাপ ইনস্টল করে মাত্র এক বার টিকিট কেটেছিলাম। কিন্তু তার পরে ইউটিএস অ্যাপ থেকে টিকিট কাটা যায়নি। সম্ভবত জিপিএসের সমস্যা।”
বিশাল শুধু একা নন, ইউটিএস অ্যাপ ব্যবহারকারী রেল যাত্রীদের কম-বেশি সকলেরই একই অভিজ্ঞতা। অ্যাপের নিয়ম অনুযায়ী স্টেশনের ২০ মিটার থেকে ২ কিলোমিটারের মধ্যে স্টেশন বাছাই করে টিকিট কাটতে হয়। কিন্তু জিপিএসের গোলযোগে স্টেশন বাছাই করতে গিয়ে সমস্যায় পড়ছেন যাত্রীরা।
ইউটিএস মোবাইল অ্যাপে লাইনে না দাঁড়িয়েই ট্রেনের অসংরক্ষিত আসনের টিকিট কাটা যায়। অবশ্য নিকটবর্তী স্টেশনের ২০ মিটার থেকে ২ কিলোমিটারে দূরত্বের মধ্যেই এই অ্যাপ কাজ করে। এ ক্ষেত্রে কারও বাড়ি যদি নিকটবর্তী স্টেশন থেকে ২ কিলোমিটারের বেশি দূরত্বে হয় তবে তিনি বাড়ি বসে টিকিট কাটতে পারবেন না। আবার স্টেশনের প্ল্যাটফর্ম অথবা ট্রেনে বসে এই অ্যাপে টিকিট কাটারও সুযোগ নেই। গোটা পদ্ধতি তাই জিপিএস ব্যবস্থার ওপর নির্ভরশীল। অ্যাপে থাকা ওয়ালেট থেকেই টিকিটের টাকা দিতে হয়। তাই আগে থেকেই ডেবিট অথবা ক্রেডিট কার্ড দিয়ে ওয়ালেট রিচার্জ করাতে হয়। যদিও কোনও সুনির্দিষ্ট গাইডলাইন না থাকায় সমস্যায় পড়েন যাত্রীরা। এ নিয়ে খড়্গপুরের সিনিয়র ডিভিশনাল কমার্শিয়াল ম্যানেজার কুলদীপ তিওয়ারি বলেন, “একটি সংস্থা ওই অ্যাপ দেখছে। আমরা সেই সংস্থাকে এ ধরনের কিছু সমস্যা জানিয়েছি। ওঁরা মেরামতের চেষ্টা করছে। বেশি সংখ্যক যাত্রী এই অ্যাপ ব্যবহার করলে সমস্যাগুলি আমরাও জানতে পারব। ওই সংস্থা তার সমাধান করবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy