Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
টিকিট চোর ধরতে অভিযান

তৎকাল টিকিট হাতাতে ব্যবহার হচ্ছে ‘লাল লঙ্কা’!

হ্যাকিং সফটওয়্যার কাজে লাগিয়েই আইআরসিটিসি-র অ্যাকাউন্টে ব্যক্তিগত ভুয়ো ইউজার আইডি দিয়ে তৎকাল টিকিট কাটা হচ্ছে বলে অভিযোগ। যার জেরে লাইনে দাঁড়িয়েও তৎকাল টিকিট না পেয়েই ফিরতে হচ্ছে যাত্রীদের।

—ফাইল চিত্র।

—ফাইল চিত্র।

দেবমাল্য বাগচী
খড়্গপুর শেষ আপডেট: ২১ অক্টোবর ২০১৮ ০৩:৩৭
Share: Save:

‘রেড চিলি’!

এই সফটওয়্যারের খোঁজ পেতেই ঘুম ছুটেছে রেল আধিকারিকদের। কারণ এই হ্যাকিং সফটওয়্যার কাজে লাগিয়েই আইআরসিটিসি-র অ্যাকাউন্টে ব্যক্তিগত ভুয়ো ইউজার আইডি দিয়ে তৎকাল টিকিট কাটা হচ্ছে বলে অভিযোগ। যার জেরে লাইনে দাঁড়িয়েও তৎকাল টিকিট না পেয়েই ফিরতে হচ্ছে যাত্রীদের।

গত ১৪ অক্টোবর এই অভিযোগে পূর্ব মেদিনীপুরের পাঁশকুড়ার জুসরা কালী বাজার এলাকার রেলের টিকিট এজেন্ট সম্বিত মাইতিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ওই এজেন্ট আইআরসিটিসি-র ব্যক্তিগত ৮০টি ভুয়ো অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে তৎকাল টিকিট কেটে বিক্রি করছিলেন বলে অভিযোগ। ধৃতের থেকে বেশ কয়েকটি তৎকাল টিকিট, দু’টি ল্যাপটপ, ৮টি মোবাইল, ৫টি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।

রেলের অপরাধদমন শাখার দাবি, ওই ৫টি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে ওই ৮০টি ব্যক্তিগত ইউজার আইডি দিয়ে টিকিট কেটে বিক্রি করে প্রায় ৪৬ লক্ষ টাকা লেনদেন হয়েছে। এই ঘটনা নজরে আসার পর তদন্তে আরও গতি বাড়িয়েছে আরপিএফের ওই বিশেষ দল। তাঁদের দাবি, খড়্গপুর শহর, ঘাটাল, ঝাড়গ্রাম, দিঘা, তমলুক, হলদিয়া, কাঁথি, চন্দ্রকোনা, ঘাটশিলা শহরে এমন বহু এজেন্ট একইভাবে ‘রেড চিলি’ সফটওয়্যার ব্যবহার করে একইভাবে টিকিট কাটছেন।

কীভাবে চলছে কালোবাজারি? রেলের অপরাধদমন শাখা সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রাথমিকভাবে দেখা গিয়েছে রেলের অনুমোদিত সংস্থা আইআরসিটিসি-র বৈধ এজেন্ট হয়ে এই কারবার চালানো হচ্ছে। বৈধ এজেন্ট হওয়ায় রেলের চোখে সহজেই ধুলো দেওয়া যাচ্ছে। তবে তৎকাল টিকিট কাটার বিষয়টি নজরে আসে তদন্তকারীদের। কারণ তৎকাল টিকিট আইআরসিটিসি-র অনুমোদিত এজেন্টরা কাটতে পারেন না। একমাত্র রেল স্টেশনের টিকিট কাউন্টার ও আইআরসিটিসি-র ব্যক্তিগত ইউজার আইডি ব্যবহার করে তৎকাল টিকিট কাটতে পারেন যাত্রীরা। সে ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কয়েক মিনিট সময়ের মধ্যে ওই টিকিট কাটতে হয়। অথচ এই এজেন্টরা বহু তৎকাল টিকিট একসঙ্গেই কেটে রাখছেন বলে অভিযোগ।

একটি তৎকাল টিকিট পাওয়াই যেখানে অসম্ভব হয়ে যায় সেখানে এক জন এজেন্ট কীভাবে একাধিক টিকিট পাচ্ছেন তাই নজর কাড়ে রেলের অপরাধদমন শাখার। তদন্তে উঠে আসে ‘রেড চিলি’ সফটওয়্যারের নাম। জানা গিয়েছে, এই সফটওয়্যার ব্যবহার করে আগেভাগে ফর্ম পূরণ করে রাখছেন এজেন্টরা। তার পরে তৎকাল টিকিট কাটার সময় এলেই স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে ওই সফটওয়্যার কাজ করছে। আগে থেকেই পূরণ থাকা ফর্মে একাধিক তৎকাল টিকিট কাটা হয়ে যাচ্ছে। সেই টিকিট নিয়ে কালোবাজারি করছেন এজেন্টরা।

খড়্গপুরে রেলের সিনিয়র ডিভিশনাল সিকিউরিটি ম্যানেজার অশোককুমার রায় বলেন, “বেআইনিভাবে ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে রেড চিলি নামে একটি সফটওয়্যারের মাধ্যমে আগেভাগে টিকিট কাটছে কিছু এজেন্ট। আমরা বিভিন্ন সূত্রে সেই তথ্য হাতে পেয়েছি। সেই অনুযায়ী ইতিমধ্যে ১১টি মামলা হয়েছে। অভিযান চলবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE