Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
জাতীয় সড়কে নিষেধাজ্ঞা

এলাকায় মদের দোকান, ক্ষোভ

শিক্ষক শ্রীমন্ত মণ্ডল বলেন, ‘‘যেখানে স্কুলের সামনে গুটখা, পান মশলা বিক্রি করা নিষিদ্ধ করছে সরকার, সেখানে কী করে প্রাথমিক স্কুলের সামনে মদের দোকান খোলার চেষ্টা চলছে— তাই বুঝতে পারছি না।’’ স্থানীয় বাসিন্দা রাজকুমার কুণ্ডি, উসিয়ার রহমানরা বলেন, ‘‘কোনও মতেই এই দোকান খুলতে দেব না আমরা।’’

নারাজ: পোস্টার হাতে খুদেদের বিক্ষোভ। নিজস্ব চিত্র

নারাজ: পোস্টার হাতে খুদেদের বিক্ষোভ। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
তমলুক শেষ আপডেট: ৩১ অগস্ট ২০১৭ ০৬:২০
Share: Save:

পাশেই প্রাথমিক স্কুল, অঙ্গনওয়াড়ি। গ্রামের একমাত্র হাইস্কুলটির দূরত্ব কয়েকশো মিটার। এমন এলাকায় তৈরি হচ্ছে মদের দোকান। কিন্তু সে দোকান খুলতে দেবেন না বাসিন্দারা।

বুধবার সকাল ১০ টা নাগাদ কোলাঘাটের সাগরবাড় পঞ্চায়েত এলাকার আমিরচক গ্রামের কয়েকশো বাসিন্দা নির্মীয়মাণ ওই দোকানের সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। বিক্ষোভকারীদের মধ্যে ছিলেন স্কুল পড়ুয়া, শিক্ষকরা, ছিলেন গ্রামের মহিলারাও। তাঁরা সঙ্গে এনেছিলেন ঝাঁটা, জুতো। স্কুল পড়ুয়ারা আবার নিজেরা হাতে লিখে এনেছিল পোস্টার— কোনও অজুহাতেই এলাকায় মদের দোকান খুলতে দেওয়া হবে না। গ্রামের রাস্তায় মিছিল করে তাঁরা বরদাবাড় বাজারের কাছে ৬ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করেন। পরে কোলাঘাট থানার পুলিশ এসে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিলে অবরোধ ওঠে।

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, এর আগে বরদাবাড় বাজারের কাছে জাতীয় সড়কের ধারেই মদের দোকানটি চলত। সে সময়ে মদ্যপদের উৎপাতে অতিষ্ঠ ছিল এলাকা। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে সে দোকান বন্ধ হয়ে গিয়েছে। তাই গ্রামের ভিতরে দোকান সরিয়ে নিতে চাইছেন দোকান মালিক নরেন্দ্রনাথ মাইতি।

শিক্ষক শ্রীমন্ত মণ্ডল বলেন, ‘‘যেখানে স্কুলের সামনে গুটখা, পান মশলা বিক্রি করা নিষিদ্ধ করছে সরকার, সেখানে কী করে প্রাথমিক স্কুলের সামনে মদের দোকান খোলার চেষ্টা চলছে— তাই বুঝতে পারছি না।’’ স্থানীয় বাসিন্দা রাজকুমার কুণ্ডি, উসিয়ার রহমানরা বলেন, ‘‘কোনও মতেই এই দোকান খুলতে দেব না আমরা।’’

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, আমিরচক প্রাথমিক বিদ্যালয় ও অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের পাশেই ওই দোকান খোলার চেষ্টা হচ্ছে। একশো মিটারের মধ্যেই উত্তর জিয়াদা হাইস্কুল। এলাকার বাসিন্দাদের যাতায়াতের মূল রাস্তায় ওই দোকান খোলার বিষয়ে আপত্তি জানিয়ে তাঁরা আবগারি দফতর ও ব্লক প্রশাসনের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন এর আগেই। কিন্তু আবগারি দফতর কোনও ব্যবস্থা নেয়নি বলে অভিযোগ।

জেলা আবগারি সুপার স্বপন হাজরা বলেন, ‘‘আদালতের নির্দেশ মেনে জেলায় অনেক মদের দোকানই বন্ধ হয়েছে। তবে বরদাবাড় বাজার এলাকায় মদের দোকান স্থানান্তর হয়ে নতুন জায়গায় খোলা হয়নি বলে জানি।’’ এ দিনের বিক্ষোভের কথা জেনেছেন বলেও স্বীকার করেছেন স্বপনবাবু। সাগরবাড় পঞ্চায়েতের প্রধান সুরজিৎ মাইতিও বলেন, ‘‘আমিরচক গ্রামের কাছে মদ দোকান খোলার চেষ্টায় আপত্তি জানিয়ে বিডিওকে স্মারকলিপি দিয়েছিলেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তবে ওখানে মদের দোকান খোলার আবেদন পঞ্চায়েতে জমা পড়েনি।’’ এলাকাবাসীর মতামতকে গুরুত্ব দেওয়া হবে বলেও তিনি আশ্বাস দেন।

যদিও ওই দোকানের মালিক নরেন্দ্রনাথ মাইতে এ দিন বলেন, ‘‘আবগারি দফতরের অনুমতি পেলেই দোকান খোলা হবে।’’ এলাকাবাসীর বিক্ষোভের বিষয়ে তাঁর বক্তব্য, ‘‘সারা রাজ্যে কি মদের দোকান খোলা নিষিদ্ধ হয়ে গিয়েছে? মুখ্যমন্ত্রী যদি তেমন সিদ্ধান্ত নেন তবে দোকান হবে না।’’

সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে সারা দেশে জাতীয় এবং রাজ্য সড়কের ৫০০ মিটারের মধ্যে মদের দোকান বন্ধ করা হয়েছে। ওই নির্দেশের পর রাজ্য সরকার বিভিন্ন জেলার বেশ কিছু রাজ্য সড়কের তকমা পরিবর্তন করে। তাতে বেশকিছু মদের দোকান রেহাই পেয়েছে। পাশাপাশি জাতীয় সড়কের ধারে বন্ধ হওয়া মদের দোকান সড়ক থেকে ৫০০ মিটারের বাইরে নিয়ে গিয়ে খোলার অনুমোদনও দিচ্ছে আবগারি দফতর।

গত জুনে এমনই এক প্রতিবাদে নেমেছিলেন ময়নার দক্ষিণ আনুখা গ্রামের বাসিন্দারা। সেখানেও মহিষাদল এলাকা থেকে মদের দোকান সরিয়ে ময়নায় খোলার চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু প্রতিবাদের মুখে পড়ে, প্রশাসনের হস্তক্ষেপে শেষ পর্যন্ত সেখানে সে দোকান খোলা হয়নি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

wine shop Teacher Student
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE