Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

মন খুলে লেখ, কলম উপহারে বার্তা শিক্ষিকার

টানা তেইশটা বছর এই স্কুলের সুখ দুঃখের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়েছিলেন মিনুদেবী। ১৯৯৪ সালের সেপ্টেম্বরে প্রধান শিক্ষিকার দায়িত্বে আসেন।

মনে-রেখো: পড়ুয়াদের মাঝে মিনু বেরা। নিজস্ব চিত্র

মনে-রেখো: পড়ুয়াদের মাঝে মিনু বেরা। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ০১ ডিসেম্বর ২০১৭ ০১:১৮
Share: Save:

বিদায়বেলায় স্কুলের সব পড়ুয়াকে কলম উপহার দিলেন প্রধান শিক্ষিকা। বৃহস্পতিবার দুপুরে ঝাড়গ্রাম ব্লকের গজাশিমূল উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে নতুন সুর বেঁধে দিলেন মিনু বেরা। স্কুলে গান বাজনার জন্য একটি দামি হারমোনিয়ামও উপহার দিলেন তিনি। সেই সঙ্গে এ বছর থেকেই মিনুদেবীর উদ্যোগে চালু হল পঞ্চম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির কৃতী পড়ুয়াদের পুরস্কার!

টানা তেইশটা বছর এই স্কুলের সুখ দুঃখের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়েছিলেন মিনুদেবী। ১৯৯৪ সালের সেপ্টেম্বরে প্রধান শিক্ষিকার দায়িত্বে আসেন। তাঁর বাড়ি খড়্গপুরের নিমপুরার আরামবাটি এলাকায়। প্রতিদিন নিমপুরা থেকে চল্লিশ কিলোমিটার বাসে উজিয়ে স্কুলে আসতেন। এ দিন অবসর গ্রহণের পরে বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সবাইকে অবাক করে দেন তিনি। ঝাড়গ্রামের গ্রামাঞ্চলের এ তল্লাটেও এখন মোবাইল ফোনের বাড়বাড়ন্ত। সারাদিন কেবল ফোনের মেসেজ লিখে চলেছে নয়াপ্রজন্মের পড়ুয়ারা। কয়েক মাস আগে ব্লু-হোয়েলের আতঙ্কও ছড়িয়েছিল এলাকায়। দীর্ঘদিন ধরেই বিষয়টা লক্ষ করেছিলেন মিনুদেবী। অবসরের দিনে স্কুলের পঞ্চম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির সাড়ে পাঁচশো ছাত্রছাত্রীর সবাইকে কলম উপহার দিয়ে মিনুদেবী বললেন, “সুন্দর হাতের লেখায় ঝরঝরে গদ্য কিংবা পদ্যে পাতা ভরিয়ে দাও। লেখার কোনও বিকল্প নেই। যন্ত্রে কিছুটা সময় বাঁচে বটে, কিন্তু কলমের লেখায় মনের চিন্তাচেতনার বর্হিপ্রকাশটা নানা সদর্থক ভাবে হতে পারে।” কেমন ভাবে? সেটাও জানালেন মিনুদেবী। রবি ঠাকুর লেখার সময় কলম দিয়ে কাটাকুটি আর আঁকিবুকি কেটে কেমন দৃষ্টিনন্দন ছবির উন্মেষ ঘটাতেন! সেই কথাই জানালেন সবাইকে। বাংলা সাহিত্যের এমএ মিনুদেবীর জীবনজুড়ে রয়েছেন রবীন্দ্রনাথ। বিদায়লগ্নে ছাত্রছাত্রীরা গাইল ‘এই লভিনু সঙ্গ তব সুন্দর হে সুন্দর’।

স্কুলের তাঁর সহকর্মী ১৩ জন শিক্ষক-শিক্ষিকাকে নানা ধরনের বই উপহার দিয়েছেন মিনুদেবী। ২ জন শিক্ষাকর্মী ও তাঁদের পরিবারের সদস্যদের জন্য পোশাক উপহার দিয়েছেন। স্কুলের পরিচালন কমিটির সদস্যদেরও সবাইকে কলম উপহার দেন তিনি। সাধারণত, অবসর গ্রহণের দিনে অবসরপ্রাপ্তকে সংবর্ধনা দেওয়াটাই রীতি। মিনুদেবীকেও বিদায় বেলায় উপহার ও মানপত্র দিয়েছেন স্কুল কর্তৃপক্ষ ও পড়ুয়ারা। এসেছিলেন প্রাক্তনীরাও। মিনুদেবী বললেন, “আধুনিক হও। কম্পিউটার-মোবাইলে হাত পাকাও। কিন্তু কলম আর বইকে ভুলে যেও না।”

একটা আক্ষেপ থেকে গেল মিনুদেবীর। স্কুলে উচ্চ মাধ্যমিকস্তরে কলা বিভাগ চালু হয়েছে। কিন্তু এখনও বিজ্ঞান বিভাগটা চালু করা গেল না। স্কুলের মাথার উপর থাকা ১১ হাজার ভোল্টের বিদ্যুতের বিপজ্জনক তারটাও সরানো গেল না।

বিদায়ী প্রধান শিক্ষিকার কাছ থেকে উপহার পেয়ে আপ্লুত স্কুলপড়ুয়া খগেশ মাহাতো, কৃষ্ণা বাস্কে, তাজামুল আলি, বীণা মাহাতোরাও জানিয়ে দিল, রোজ নিয়ম করে হাতের লেখা করব। কলমের লেখা দিয়ে নতুন করে কিছু ভাবতে শিখব। আর এই কলম দিয়ে চিঠি লিখে প্রশাসনের কাছে সমস্যা মেটানোর আবেদন জানাব।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

teacher Retire Students
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE