Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪
পুলকারে নজরদারি নেই
School pool car

বিপদ মাথায় নিয়েই স্কুলের পথে পড়ুয়ারা

বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অভিভাবকেরা ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠাতে ভাড়া করা গাড়িতেই ভরসা করেন। আর এখানেই উঠেছে প্রশ্ন।

অভিযোগ, পুলকারের বৈধ কাগজ ছাড়াই চলে এই সব গাড়ি। নিজস্ব চিত্র

অভিযোগ, পুলকারের বৈধ কাগজ ছাড়াই চলে এই সব গাড়ি। নিজস্ব চিত্র

রাজকুমার গিরি
কাঁথি: শেষ আপডেট: ০৬ জুলাই ২০১৮ ০২:১৬
Share: Save:

মহকুমায় আগের তুলনায় বেসরকারি স্কুলের সংখ্যা বেড়েছে। ওই সব স্কুলে পড়ুয়ার সংখ্যাও ক্রমবর্ধমান। শুধু এই সব বেসরকারি স্কুলই নয়, সরকারি পোষিত বহু স্কুলের পড়ুয়াদের অভিভাবকেরা ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠাতে পুলকারের উপরেই ভরসা করন। অনেক স্কুলের নিজস্ব গাড়িতে পড়ুয়াদের আনা-নেওয়ার ব্যবস্থা থাকলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অভিভাবকেরা ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠাতে ভাড়া করা গাড়িতেই ভরসা করেন। আর এখানেই উঠেছে প্রশ্ন। ওই সব ভাড়া গাড়ির পুলকার হিসাবে চলার বৈধ কাগজপত্র আছে কি না, গাড়িগুলি নিয়ম নেমে নির্দিষ্ট সংখ্যার বাইরে অতিরিক্ত পড়ুয়া নেয় কি না, গাড়িগুলিতে নিরাপত্তার কী ব্যবস্থা আছে সে সব নিয়ে অনেক অভিভাবকই সচেতন নন। বা বিষয়টি তাঁরা জানেনই না। প্রশ্ন উঠেছে পুলিশ ও প্রশাসনের ভূমিকা নিয়েও।

শুধু কাঁথি নয়, জেলার অন্যান্য মহকুমাতেও পুলকারে ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠান অভিভাবকেরা। কিন্তু পুলকারগুলি নিয়ম মানছে কিনা তা নিয়ে অভিভাবকেরাও যেমন সচেতন নন, তেমনি প্রশাসনের তরফেও উদাসীনতার অভিযোগ উঠেছে।

কন্টাই পাবলিক স্কুলের এক অভিভাবক বরুণ কুমার জানা বলেন, ‘‘কাঁথির বেশ কয়েকটি স্কুলে পুলকারে পড়ুয়ারা আসাযাওয়া করে। আমাদের স্কুল কিংবা মাউন্ট লিটেরা জি স্কুলের নিজস্ব গাড়ি রয়েছে। তবে বহু ছাত্রছাত্রীকে দেখি ভাড়ার গাড়িতে স্কুলে যাতায়াত করে। ওই সব গাড়ির পুলকার হিসাবে চলার বৈধ কাগজপত্র আছে কি না তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।’’ কয়েক জন অভিভাবকের এমনই অভিযোগ, পুলকারগুলির অধিকাংশই কমার্শিয়াল লাইসেন্স নিয়ে চলাচল করে। পুলকার হিসাবে ব্যবহারের জন্য ওই সব গাড়ির আদৌ কোনও ছাড়পত্র আছে কি না তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। সচেতনতার অভাবে অনেক অভিভাবক এ সব বিষয়ে খোঁজ না নিয়েই ছেলেমেয়েদের ওই সব গাড়িতে স্কুলে পাঠাচ্ছেন। প্রশাসনের তরফেও কোনও নজরদারি না থাকায় পড়ুয়াদের নিরাপত্তার বিষয়টি কার্যত হেলাফেলা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ।

কাঁথির আঞ্চলির পরিবহণ দফতর সূত্রে খবর, অধিকাংশ ক্ষেত্রে পুলকারগুলি কমার্শিয়াল লাইসেন্সের মাধ্যমে চলে। মাঝে মাঝে বিশেষ অভিযান চালানো হয়। সেই সময় ওই সব গাড়ির কাগজপত্র পরীক্ষার পাশাপাশি গাড়ির স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়। এমনকী গাড়িতে প্রয়োজনের বেশি শিক্ষার্থী আছে কিনা তাও যাচাই করা হয় বলে দাবি। তবে আলাদা ভাবে পুলকারের বিষয়টি নিয়ে ভাবনাচিন্তা করা হয়নি। দফতরের আধিকারিক সুমন বিশ্বাস বলেন, ‘‘আমাদের কাছে অভিভাবকদের তরফে কখনও কোনও অভিযোগ আসেনি। বেশিরভাগ বেসরকারি স্কুলের নিজেদের গাড়ি রয়েছে। অনেক সময় কমার্শিয়াল লাইসেন্সে বেশ কিছু গাড়ি স্কুলের বাচ্চাদের নিয়ে যায়। তাদের বিরুদ্ধে মাঝেমধ্যেই অভিযান চালানো হয়। কোনও খামতি থাকলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হয়। তা ছাড়া এই বিষয়ে পরবর্তীতে আরও ভাবনা-চিন্তা করা হবে।’’

পুলকারে ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠালেও তা নিয়ে বহু অভিভাবকই যে সচেতন নন তার প্রমাণ চন্দন রাউল। কাঁথির একটি বেসরকারি সংস্থার কর্মী চন্দনবাবু বলেন, ‘‘ছেলেকে একটি বেসরকারি নার্সারি স্কুলে ভর্তি করিয়েছি। পুলকারেই ওকে স্কুলে পাঠাই। কিন্তু কখনও এতটা বিশদ ভাবে ভাবিনি।’’ তাঁর দাবি, পুলিশ –প্রশাসনের পক্ষ থেকেও এ নিয়ে সচেতনতার প্রচার চালানো উচিত।

কাঁথি পুরসভার চেয়ারম্যান সৌম্যেন্দু অধিকারী বলেন, ‘‘এই সব বিষয় আমাদের দেখার কথা নয়। এগুলো আঞ্চলির পরিবহণ দফতরের দায়িত্ব। আর কাঁথিতে এই নিয়ে কখনও কোনও তরফে অভিযোগ আসেনি। অধিকাংশ স্কুল নিজেদের গাড়ি ব্যবহার করে। তবে স্কুলের নিজস্ব গাড়ি হোক বা ভাড়ার পুলকার, পড়ুয়াদের নিরাপত্তা সবার আগে। পুলকার নিয়ে যখন প্রশ্ন উঠেছে তখন বিষয়টি নিয়ে খোঁজখবর নেওয়া হবে।’’

পরিবহণ মন্ত্রী শুভেন্দ্ু অধিকারী বলেন, ‘‘এ ব্যাপারে সুপ্রিম কোর্টের স্পষ্ট নির্দেশ রয়েছে। তা যাতে মানা হয় সেদিকে কড়া নজর দেওয়া হবে। আরটিও এবং ডিএম-কে খোঁজ নিতে বলব। তবে কারও অভিযোগ থাকলে সংবাদ মাধ্যমের কাছে না জানিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানালে খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE