Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

চোলাই ব্যবসা ছেড়ে শালপাতায় স্বপ্ন

সময় বদলে দেয় অনেক কিছু। এ কথা বোধহয় নিজের জীবন দিয়ে বুঝেছেন নারায়ণগড়ের আহারমুণ্ডার সোমা দাস। অপরাধ চোলাই বিক্রি এবং মজুত।

ছেলেকে কোলে নিয়ে সোমা।

ছেলেকে কোলে নিয়ে সোমা।

   বিশ্বসিন্ধু দে
নারায়ণগড় শেষ আপডেট: ০৬ জুন ২০১৯ ০০:০১
Share: Save:

সময় বদলে দেয় অনেক কিছু। এ কথা বোধহয় নিজের জীবন দিয়ে বুঝেছেন নারায়ণগড়ের আহারমুণ্ডার সোমা দাস। অপরাধ চোলাই বিক্রি এবং মজুত। দশ মাসের শিশুকে নিয়ে জেলে কাটাতে হয়েছিল সাত দিন। ফিরে এসেও রেহাই নেই। আইনি ঝুটঝামেলা তো আছে। তার সঙ্গে প্রতিবেশীদের বাঁকা নজর। আইন আর সমাজের চাপে চোলাই ব্যবসা ছেড়েছেন সোমা। ধান থেকে চাল তৈরি আর জঙ্গল থেকে শালপাতা এনে সংসার চালান তিনি।

সাধারণ ভাবে দেখা যায়, চোলাই বিক্রি, মজুত বা পাচারের অভিযোগে কেউ গ্রেফতার হলেও পেশা ছাড়েন না। জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর কয়েকদিন চুপচাপ থাকার পর ফের শুরু হয় একই ব্যবসা। তাই কেউ একবার গ্রেফতার হলে তার বাড়িতে বারবার তল্লাশি অভিযান হয়। অভ্যাস মতোই সোমবার আবগারি দফতরের আধিকারিক, কর্মীরা তাই অভিযান চালিয়েছিলেন সোমার বাড়িতে। তন্ন তন্ন করে খুঁজেও বাড়িতে চোলাইয়ের নামগন্ধ পাননি তাঁরা। সোমা এবং তাঁর প্রতিবেশীদের সঙ্গে কথা বলে আধিকারিকেরা নিশ্চিত হন, চোলাই ব্যবসা ছেড়েছেন ওই যুবতী। আধিকারিকদের সোমা জানান, ছোট্ট ছেলেকে নিয়ে আদালতে ছোটা এবং মামলা চালানো তার পক্ষে সম্ভব নয়। মামলা যেন একটু লঘু করে দেওয়া হয়, কর্তাদের কাছে এই আবেদন করেন ওই যুবতী। বেলদা আবগারি দফতরের অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার অভিষেক রায় বলেন, ‘‘আমাদের অভিযানের ফলে ঔ মহিলা সমাজের মূল স্রোতে ফিরেছেন এটা ভালোর দিক।’’

২০১৮ এর ২৯ অগস্ট চোলাইয়ের সন্ধানে সোমার বাড়িতে তল্লাশি চালিয়েছিল আবগারি দফতর। বাধা দেন সোমা। একাই প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। শেষ পর্যন্ত কিছু না পেয়ে রান্না করার লঙ্কাগুঁড়োর জল আবগারি দফতরের কর্মীদের লক্ষ্য করে ছিটিয়ে দেন। জখম হয়েছিলেন দু’জন আবগারি কর্মী। নারায়ণগড় থানায় অভিযোগ করা হয়। গ্রেফতার করা হয় সোমাকে। আদালতের রায়ে কোলের দশমাসের শিশুকে নিয়ে সাতদিন জেলে থাকতে হয়েছিল তাকে।

স্বামী শঙ্কর পেশায় নির্মাণ কর্মী। কাজের সূত্রে প্রায়ই বাইরে থাকেন তিনি। দুই ছেলে। স্বামীর পাঠানো টাকায় সংকুলান হত না। চোলাই বিক্রি ও মজুত করতে শুরু করেছিলেন সোমা। কিন্তু গত বছর অগস্ট মাসের পর থেকে এক লহমায় বদলে যায় জীবন। সামাজিক ও মানসিক চাপে দিশাহারা হয়ে যান সোমা। তিনি বলেন, ‘‘জেলে থাকার সময় ভেবেছি কেন এ কাজ করেছি! গ্রামে মুখ দেখাব কী করে!’’ প্রতিবেশী হীরক দাস, পলাশ সিংহদের বক্তব্য,‘‘আমরা নিষেধ করেছিলাম। পড়শি হিসেবে যতটুকু সাহায্য করার নিশ্চয়ই করব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Hooch Struggle Narayangarh
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE