চেয়ারে: রূপা দাশগুপ্ত।
ইঙ্গিত ছিল। সেই মতো পদক্ষেপ করলেন তৃণমূল শীর্ষনেতৃত্ব। ডেবরা তৃণমূল ছাত্র পরিষদ ব্লক সভাপতির পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হল সমর পালকে।
কিছু যে একটা হতে চলেছে তা বোঝা গিয়েছিল আগেই। তাই ‘দাপুটে’ নেতা হোন বা কলেজের ‘দাদা’রা—যুদ্ধং দেহি মেজাজ সরিয়ে সকলেই ব্যস্ত ছিলেন নিজেদের নির্দোষ প্রমাণ করতে।
তৃণমূল শীর্ষনেতৃত্বের নির্দেশে ডেবরা শহিদ ক্ষুদিরাম মহাবিদ্যালয়ে গোলমাল থামাতে হস্তক্ষেপ করেছে প্রশাসন। তারপরই ভোল বদলে গেল কলেজের। বৃহস্পতিবার কলেজের প্রশাসক তথা খড়্গপুরের মহকুমা শাসক সুদীপ সরকারকে যাঁরা কার্যত তাড়িয়ে ছেড়েছিলেন শুক্রবার তাঁদের দেখা গেল না কলেজ চত্বরের আশেপাশে। যাঁদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে মদত দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল তাঁদের একজন দাবি করলেন তিনি ডেঙ্গিতে আক্রান্ত। অন্যজনের দাবি, ভাইঝির অন্নপ্রাশনে ব্যস্ত, তাই নাকি তিনদিন ধরে কলেজেই যাননি।
বৃহস্পতিবার কলেজে গোলমালের ঘটনায় পুলিশ কয়েকজন টিএমসিপি কর্মীকে আটক করেছিল। পুলিশের এক সূত্র জানাচ্ছে, ওই টিএমসিপি কর্মীরা নতুন অধ্যক্ষের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিয়েছেন। আর কখনও কলেজে অশান্তি করবেন না বলে আশ্বস্ত করেছেন। শুক্রবার কলেজের ছাত্র সংসদ কার্যালয়েও ধরা পড়েছে ভিন্ন ছবি। অন্যদিন যে কার্যালয় সরগরম থাকে তা এ দিন ছিল কার্যত ফাঁকা। কলেজে অশান্তির বিরোধিতা করায় ওই ছাত্র সংসদ কার্যালয়েই কয়েকজন পড়ুয়াকে আটকে রাখার অভিযোগ উঠেছিল।
কারা প্রশাসককে কলেজে ঢুকতে বাধা দিয়েছিলেন? কারা মারধর করেছিলেন শিক্ষকদের? সবিস্তার খোঁজখবর শুরু করেন তৃণমূলের শীর্ষনেতৃত্ব। ওই ঘটনায় টিএমসিপির ব্লক সভাপতি সমর ও ইউনিট সভাপতি শুভেন্দু প্রামাণিকের নাম উঠে আসে। এমনকী তাঁদের মদত দেওয়ায় অভিযুক্ত হয়েছেন যুব তৃণমূল নেতা তথা পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য প্রদীপ কর। বিকেলে জেলা তৃণমূল সভাপতি অজিত মাইতি বলেন, ‘‘কলেজে অশান্তির ঘটনায় রাজ্য নেতৃত্বের নির্দেশে সমর পালকে টিএমসিপির ব্লক সভাপতির পদ থেকে সরিয়ে দিচ্ছি। আজ, শনিবারই চিঠি পাঠানো হবে।’’ এ বিষয়ে সমরের বক্তব্য, ‘‘চিঠি পাইনি। তবে যেহেতু কলেজে গোলমালের ঘটনায় যুক্ত নই, তাই পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হলে তা মেনে নিতে পারব না।’’
বিকেলে জানা যায়, পদ থেকে সরানো হয়েছে সমরকে। তবে আগেই তিনি দাবি করেন, ভাইঝির অন্নপ্রাশনে ব্যস্ত থাকায় তিনদিন কলেজ যাননি। তাঁর কথায়, ‘‘সিসি ক্যামেরায় আমার ছবি দেখাতে পারবেন!’’ প্রদীপ দাবি করেছেন, ‘‘আমার বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগ মিথ্যা। আমি সঠিক খবরও জানিনা। কারণ আমার তিনদিন ধরে ডেঙ্গি হয়েছে।” আর ঘটনার পর থেকেই ফোন বন্ধ রয়েছে শুভেন্দুর।
পরিচালন সমিতির সভাপতির পদ থেকে প্রদীপ করকে সরিয়ে দেওয়ার পর থেকেই উত্তপ্ত কলেজ। গত কয়েকবছর ধরেই প্রদীপের অনুগামী সমর ও শুভেন্দু প্রামাণিকের মদতে কলেজে অশান্তির অভিযোগ উঠছে। এমনকী গোটা ঘটনায় প্রশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে সদ্য সরে যাওয়া টিচার ইন-চার্জ সুতপা পালের বিরুদ্ধে। গড়তে দেওয়া হয়নি পরিচালন সমিতি। সরকার মনোনীত প্রতিনিধি পছন্দ না হওয়ায় অনশন করেছিল পড়ুয়ারা। তাতেই ভেস্তে গিয়েছে পরিচালন সমিতি গঠনের কাজ। এত দিন সুতপার সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখেই চলছিল ছাত্র সংসদ। নতুন অধ্যক্ষ আসতেই বদলে গিয়েছে পরিস্থিতি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy