Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

বন্ধু নেই, জানে না সরস্বতী

সে দিন অটোতে দু’জন পাশাপাশিই ছিল। সনিয়া সরেন ও সরস্বতী সরেন। দু’জনেই ভাদুতলা হাইস্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী। নিয়ন্ত্রণ হারানো লরির ধাক্কায় দুমড়ে-মুচড়ে যায় অটো।

নিজস্ব সংবাদদাতা
মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০১৭ ০২:০৬
Share: Save:

সে দিন অটোতে দু’জন পাশাপাশিই ছিল। সনিয়া সরেন ও সরস্বতী সরেন। দু’জনেই ভাদুতলা হাইস্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী। নিয়ন্ত্রণ হারানো লরির ধাক্কায় দুমড়ে-মুচড়ে যায় অটো। ছিটকে পড়ে সরস্বতীরা। দু’জনকেই মেদিনীপুর মেডিক্যালে আনা হয়েছিল। মেডিক্যালে সনিয়ার মৃত্যু হয়। সরস্বতী এখনও আইসিইউ-তে ভর্তি। সহপাঠী সনিয়ার মৃত্যুর খবর এখনও জানে না সে। তাই বারবার সনিয়ার খোঁজ নিচ্ছে সে।

রবিবার স্কুলের কয়েকজন শিক্ষক মেডিক্যালের আইসিইউ-তে গিয়ে সরস্বতীর সঙ্গে দেখা করেন। শিক্ষকদের দেখে সরস্বতীর প্রথম প্রশ্নই ছিল, ‘‘সনিয়া কেমন আছে? কোথায় আছে?’’ একরত্তি মেয়েটাকে বন্ধুর চরম পরিণতির কথা জানাতে পারেননি শিক্ষকরা। বলেছেন, ‘‘সনিয়া যেখানে আছে ভালই আছে। চিন্তার কিছু নেই।’’

ভাদুতলা হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক অমিতেশ চৌধুরী বলছিলেন, “সরস্বতীর খুব ভাল বন্ধু ছিল সনিয়া। প্রায় দিনই একসঙ্গে স্কুলে আসত। ছুটির পরে একসঙ্গে ফিরত। সনিয়ার মৃত্যুর কথাটা ওকে বলতে পারিনি। জানলে ওর শরীর আরও খারাপ হবে।’’ শুধু সরস্বতী নয়, ওই দিনের দুর্ঘটনায় যে স্কুলের দুই পড়ুয়ার মৃত্যু হয়েছে, তা জানানো হয়নি মেদিনীপুর মেডিক্যাল ও কলকাতার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন কাউকেই।

জখমদের মধ্যে এখন কলকাতার হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে পাঁচজন। চারজন এসএসকেএমে আর রনি বেরা নামে একজনের চিকিৎসা চলছে কলকাতার অন্য এক হাসপাতালে। এসএসকেএমে চিকিৎসাধীনদের মধ্যে লক্ষ্মী মুর্মু এবং বিকাশ হেমব্রমের সঙ্কট এখনও কাটেনি। বিকাশের ফের অস্ত্রোপচার হওয়ার কথা রয়েছে। মেদিনীপুর মেডিক্যালে ছ’জন ভর্তি ছিল। তার মধ্যে চারজনকে এ দিন ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। ভর্তি রয়েছে সরস্বতী-সহ দু’জন।

ভাদুতলার দুর্ঘটনায় মৃত এবং আহত পড়ুয়াদের পরিজনেদের সঙ্গে রবিবার দেখা করেছে আদিবাসী অধিকার মঞ্চের এক প্রতিনিধি দল। নেতৃত্বে ছিলেন মঞ্চের রাজ্য সম্পাদক তথা প্রাক্তন সাংসদ পুলিনবিহারী বাস্কে। রবিবার সকালে দলটি ভাদুতলায় আসে। প্রথমে মৃত দুই পড়ুয়ার বাড়িতে যান প্রতিনিধিরা। পরিজনেদের সঙ্গে দেখা করে পাশে থাকার আশ্বাস দেন। পরে আহতদের পরিজনেদের সঙ্গেও দেখা করেন নেতৃত্ব।

গত বৃহস্পতিবার দুর্ঘটনার পরে পুলিশকে মারধরের অভিযোগে আরও ৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এই নিয়ে ধৃতের সংখ্যা বেড়ে হল ১৬। শনিবার রাতে ওই ৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়। রবিবার দুপুরে এদের মেদিনীপুর সিজেএম আদালতে হাজির করা হয়। ধৃতদের মধ্যে ৭ জনের ৫ দিন পুলিশ হেফাজত এবং একজনের ১৪ দিন জেল হেফাজতের নির্দেশ হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE