ঘাটালের বসন্তকুমারী উচ্চ বিদ্যালয়ে এল প্রতিমা। —নিজস্ব চিত্র
দোড়গোড়ায় সরস্বতী পুজো। অন্য বছর এই সময়ে স্কুলে স্কুলে পুজোর শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি চলে। কিন্তু পশ্চিম মেদিনীপুরের কয়েকটি প্রাথমিক স্কুলে এ বার ছবিটা আলাদা। ওই স্কুলগুলিতে পুজোর প্রস্তুতি চলা তো দূরের কথা, পঠনপাঠনই শিকেয় উঠেছে। কারণ, প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি। শুক্রবারও কয়েকটি স্কুলের সামনে অভিভাবক ও পড়ুয়াদের একাংশ বিক্ষোভ দেখিয়েছেন।
সর্বশিক্ষা মিশনের নির্দেশ অনুযায়ী, একটি প্রাথমিক স্কুলে নূন্যতম ২ জন শিক্ষক থাকার কথা। পড়ুয়া ও শিক্ষক অনুপাতে ভারসাম্য আনতে রাজ্যের ২,৮৭৩ জন প্রাথমিক স্কুল শিক্ষককে বদলি করা হয়। এর মধ্যে পশ্চিম মেদিনীপুরের ৯০৫ জন রয়েছেন। গত ৪ ফেব্রুয়ারি স্কুলশিক্ষা দফতরের পক্ষ থেকে ওই শিক্ষকদের বদলির নির্দেশ ধরানো হয়। ৫ ফেব্রুয়ারি তাঁদের নতুন স্কুলে যোগ দিতে বলা হয়।
শালবনির কর্ণগড়ের শৌলা প্রাথমিক স্কুল গত তিন দিন ধরে তালাবন্ধ ছিল। কারণ অভিভাবকেরা স্কুলের গেটে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছিলেন। বৃহস্পতিবার তালা খোলে। শালবনির ওই স্কুলে এখন ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ১০৫। আগে ৪ জন শিক্ষক ছিলেন। বদলির পরে এখন সেই সংখ্যা দাঁড়াল ৩। ওই স্কুলের এক শিক্ষককে সারসবেদিয়া প্রাথমিক স্কুলে বদলি করা হয়েছে। সেই স্কুলের ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ৭৫। সেখানে আগে থেকেই ৪ জন শিক্ষক ছিলেন। এই বদলির ফলে ছাত্র-শিক্ষক অনুপাতের ভারসাম্য কীভাবে বজায় থাকছে সেটা বুঝে উঠতে পারছেন না অভিভাবকেরা। শৌলা প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক অলোক হাজরা বলেন, ‘‘অভিভাবকেরা চাইছেন, যাঁকে অন্য স্কুলে বদলি করা হয়েছে, তাঁকে আবার এই স্কুলে ফিরিয়ে দেওয়া হোক।’’ একই সঙ্গে তাঁর আক্ষেপ, ‘‘এ বার সরস্বতী পুজোর প্রস্তুতি সারতে গিয়ে সমস্যায় পড়তে হয়েছে। এ দিকে শনিবার পঞ্চমী পড়ে যাচ্ছে। আমাদের স্কুলে শনিবারই পুজো। বদলি নিয়ে ঝামেলার কারণে পুজোর প্রস্তুতি সেভাবে নেওয়া হয়নি।’’
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা প্রাথমিক স্কুল সংসদ সূত্রে খবর, জেলায় আগে কখনও একসঙ্গে এত প্রাথমিক স্কুল শিক্ষকের বদলি হয়নি। শহরের দিকে অনেক প্রাথমিক স্কুলে ছাত্রের তুলনায় শিক্ষক বেশি ছিলেন। অন্য দিকে, প্রত্যন্ত গ্রামের স্কুলে পর্যাপ্ত শিক্ষক নেই। শিক্ষার অধিকার আইন অনুযায়ী, প্রাথমিক স্কুলে পড়ুয়া সংখ্যা ১৫০ জনের মধ্যে হলে ৩০ জন ছাত্র পিছু একজন করে শিক্ষক থাকার কথা। ছাত্র সংখ্যা ১৫০ জনের বেশি হলে ৪০ জন ছাত্র পিছু একজন করে শিক্ষক থাকার কথা। অভিযোগ, বদলির ফলে জেলার অনেক প্রাথমিক স্কুলে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে। দেখা যাচ্ছে, বদলির পরে বেলদার জাহালদা দক্ষিণ চক্রে অন্তত ৬টি স্কুলে মাত্র একজন করে শিক্ষক থাকবেন। যেমন, রঙ্গসাতিয়া প্রাথমিক স্কুলে আগে ৩ জন শিক্ষক ছিলেন। তাঁদের মধ্যে ২ জনের বদলি হয়েছে। ওই স্কুলে ছাত্র ছাত্রীর সংখ্যা ৫০ জন। গামারিপুর প্রাথমিক স্কুলে ২ জন শিক্ষক ছিলেন। ১ জনের বদলি হয়েছে। এখানে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ৩৮ জন। গোপীনাথপুর প্রাথমিক স্কুলে ২ জন শিক্ষক ছিলেন। ১ জনের বদলি হয়েছে। এখানে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ৩১ জন। বানিচাপাটনা প্রাথমিক স্কুলে ২ জন শিক্ষক ছিলেন। ১ জনের বদলি হয়েছে। এখানে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ১৮ জন। কুরুল প্রাথমিক স্কুলে ৩ জন শিক্ষক ছিলেন। ২ জনের বদলি হয়েছে। এখানে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ৪৯ জন। মুলিদা প্রাথমিক স্কুলে ২ জন শিক্ষক ছিলেন। ১ জনের বদলি হয়েছে। এখানে ছাত্রছাত্রী ২৭ জন।
শিক্ষকদের একাংশের অভিযোগ, নিয়োগের সময় স্বজনপোষণ হয়েছিল। শিক্ষকদের স্কুল নির্ধারণের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক পরিচয় ও স্বজনপ্রীতি গুরুত্ব পেয়েছিল। পরবর্তী সময়ে বদলির ক্ষেত্রেও স্বজনপোষণ হয়েছে। যদিও সংসদ এই অভিযোগ মানতে নারাজ।
সমস্যার কথা স্বীকার করে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান নারায়ণ সাঁতরা বলেন, ‘‘পুরনো তথ্যের জেরে কিছু স্কুলে সমস্যা হয়েছে। বিষয়টি যেখানে জানানোর জানিয়েছি। যেমন নির্দেশ আসবে, সেই মতোই পদক্ষেপ করা হবে।’’ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের এক আধিকারিকের আশ্বাস, ‘‘অবর বিদ্যালয় পরিদর্শকেরা কিছু স্কুলে বদলি পরবর্তী সমস্যার কথা জানিয়েছেন। প্রয়োজনে কিছু স্কুলে শিক্ষক ফিরিয়ে দেওয়া হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy