Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

এই স্কুলে মাথা রক্ষায় ভরসা বলতে কাঠের খুঁটি

তিন বছর আগে ভূমিকম্পে একাধিক স্কুলের ছাদ, দেওয়ালে বিপজ্জনক ফাটল তৈরি হয়েছিল। কোথাও সংস্কার, কোথাও নতুন ভবন তৈরির জন্য স্কুলগুলির তরফে প্রশাসনের কাছে আর্থিক বরাদ্দের আবেদন জানানো হয়েছিল। এখনও তা না মেলায় বিপদ মাথায় নিয়েই চলছে ক্লাস। বিপন্ন শিক্ষক থেকে পড়ুয়া। আশঙ্কায় অভিভাবকেরাও। তমলুক মহকুমার সেই সব স্কুল দেখে এল আনন্দবাজার। স্থানীয় সূত্রে খবর, তমলুকের এই স্কুলের দু’টি তিনতলা ভবন ষাটের দশকে তৈরি হয়।

খারুই ইউনিয়ন হাইস্কুলের ভগ্রপ্রায় ভবন। নিজস্ব চিত্র।

খারুই ইউনিয়ন হাইস্কুলের ভগ্রপ্রায় ভবন। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব প্রতিবেদন
তমলুক শেষ আপডেট: ০৫ জানুয়ারি ২০১৯ ০১:৫৯
Share: Save:

মাথার ওপর মাঝেমধ্যেই ভেঙে পড়ছে চাঙড়। বছর খানেক আগে মাথায় চাঙড় পড়ে আহত হয়েছিলেন এক শিক্ষক ও এক ছাত্র। স্কুলের দু’দুটি ভবনেরই হাল একই রকম। সরকারি ইঞ্জিনিয়ার পরিদর্শনের পর ভবন দুটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করেছেন। কিন্তু উপায় না থাকায় একটি ভবনে ওই অবস্থাতেই ক্লাস করতে হচ্ছে তমলুকের শহিদ মাতঙ্গিনী ব্লকের খারুই ইউনিয়ন হাইস্কুলের শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রীদের।

স্থানীয় সূত্রে খবর, তমলুকের এই স্কুলের দু’টি তিনতলা ভবন ষাটের দশকে তৈরি হয়। ২০১৫ সালের মে মাসে ভূমিকম্পের পর থেকে ওই দু’টি ভবনেই বিপজ্জনক ফাটল দেখা দিয়েছে। থেকে থেকে উপর থেকে খসে পড়ছে চাঙড়। স্কুল কর্তৃপক্ষের দাবি, সেই সময় জেলাশাসক ও শিক্ষা দফতরে সমস্যার কথা জানিয়েছিলেন। জেলাশাসকের নির্দেশে সরকারি ইঞ্জিনিয়ার স্কুলভবন পরিদর্শনে এসেছিলেন। তিনি বিদ্যালয় ভবন দুটিকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করে লিখিত ভাবে জানিয়ে দেন বলে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দাবি। কিন্তু আজ পর্যন্ত বিদ্যালয় ভবনের নির্মাণে কোনও সরকারি সাহায্য আসেনি বলে অভিযোগ। খারুই ইউনিয়ন হাইস্কুলের ছাত্রসংখ্যা দেড় হাজারেরও বেশি। স্কুলভবনের ভগ্নদশার ছাপ পড়েছে বিদ্যালয়ের পঠন পাঠনের ওপর। কিন্তু বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় দু’টির মধ্যে একটি ভবনে এখন ক্লাস না হলেও অন্য ভবনটির এক তলায় ঝুঁকি নিয়ে ক্লাস করতে বাধ্য হচ্ছেন শিক্ষক-পড়ুয়ারা। পরিস্থিতি এমন যে স্থান সঙ্কুলান না হওয়ায় মিড ডে মিল খাওয়ার হলঘরে ত্রিপল টাঙিয়ে চলছে ক্লাস। স্থানীয় খারুই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দুটি হলঘর ও বৃত্তিমূলক শাখার ক্লাসরুমগুলিতেও চলছে ক্লাস।

ঘরের অভাবে বিভিন্ন শ্রেণির বিভাগ বিভাজন করা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ফলে এক একটি ক্লাসে ৮০ জনেরও বেশি ছাত্রছাত্রী নিয়ে ক্লাস চলছে। এতে পঠন পাঠনে সমস্যা হচ্ছে বলে দাবি শিক্ষকদের। তার উপর মিড ডে মিলের ঘরে ক্লাস হওয়ায় ছাত্রদের স্কুলের বারান্দায় বসে মিড ডে মিল খেতে হচ্ছে। এখনও কোনও সরকারি সাহায্য না মেলায় পরিত্যক্ত ভবনটির ছাদের নীচে কাঠের পিলার দাঁড় করিয়ে ছাদ রক্ষার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। প্রধান শিক্ষক তপন বেরা বলেন, ‘‘আমি স্কুলশিক্ষা দফতরে বিষয়টি জানিয়েছি। ওঁরা নতুন ভবন নির্মাণের আশ্বাস দিয়েছেন। তবে নতুন ভবন নির্মাণের ব্যাপারে এখনও কোনও সবুজ সংকেত মেলেনি।’’

পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পরিষদের শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ মধুরিমা মণ্ডল বলেন, ‘‘আমরা সম্প্রতি যে সব স্কুলে এমন পরিত্যক্ত ভবন রয়েছে সেই বিদ্যালয়গুলিতে নতুন ভবন নির্মাণের বিষয়ে রাজ্যে জেলার তালিকা পাঠিয়ে দিয়েছি। ওই বিদ্যালয়টি তালিকায় আছে কিনা জানি না। স্কুল কর্তৃপক্ষ আমার সঙ্গে দেখা করে আবেদন জানালে আমি নিশ্চয় নতুন ভবন নির্মাণের জন্য সুপারিশ করব।’’ শেষ

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Education Tamluk
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE