Advertisement
১৭ এপ্রিল ২০২৪

ন্যাপকিন বানাবে স্বনির্ভর গোষ্ঠী, যন্ত্র দেবে প্রশাসন

ঋতুকালীন পরিচ্ছন্নতা মহিলাদের স্বাস্থ্য রক্ষায় ভীষণ জরুরি। কিন্তু গাঁ-গঞ্জে বহু মহিলাই এখনও মাসের এই বিশেষ দিনগুলির স্বাস্থ্যবিধি নিয়ে যথেষ্ট সচেতন নন। এখনও তাঁরা ঋতুস্রাবের সময় কাপড় ব্যবহার করেন।

বরুণ দে
মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০০:০০
Share: Save:

ঋতুকালীন পরিচ্ছন্নতা মহিলাদের স্বাস্থ্য রক্ষায় ভীষণ জরুরি। কিন্তু গাঁ-গঞ্জে বহু মহিলাই এখনও মাসের এই বিশেষ দিনগুলির স্বাস্থ্যবিধি নিয়ে যথেষ্ট সচেতন নন। এখনও তাঁরা ঋতুস্রাবের সময় কাপড় ব্যবহার করেন। একই কাপড় বারবার কেচে ব্যবহার করার চলও রয়েছে। এ থেকে রোগ সংক্রমণের আশঙ্কা থেকে যায়। কিছু ক্ষেত্রে তার নজিরও রয়েছে।

পরিস্থিতি দেখে নড়ে বসেছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা প্রশাসন। ঋতুকালীন স্বাস্থ্য সচেতনতার কথা মাথায় রেখে স্বনির্ভর গোষ্ঠীকে দিয়ে স্যানিটারি ন্যাপকিন তৈরির পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এ জন্য স্বনির্ভর গোষ্ঠীকে স্যানিটারি ন্যাপকিন তৈরির যন্ত্র, পাশাপাশি প্রশিক্ষণও দেওয়া হবে। ন্যাপকিন তৈরি হলে তা স্বল্পমূল্যে তুলে দেওয়া হবে গ্রামের মহিলাদের হাতে। জেলায় ‘পাইলট প্রোজেক্ট’ হিসেবে এই কাজ শুরু হবে গড়বেতা-৩ ব্লকের শঙ্করকাটা গ্রাম পঞ্চায়েতে। কাজটি করবে এই এলাকারই স্বনির্ভর গোষ্ঠীর এক সঙ্ঘ। সাধারণত, এক-একটি সঙ্ঘে শতাধিক স্বনির্ভর গোষ্ঠী থাকে। জেলাশাসক জগদীশপ্রসাদ মিনা বলেন, “মহিলাদের স্বাস্থ্য সচেতনতায় জোর দিতেই এই প্রকল্প। তা রূপায়িত হলে স্বনির্ভর দলের সদস্যদের পাশাপাশি এলাকার মহিলারাও উপকৃত হবেন।” গ্রামীণ উন্নয়ন নিগম (ডিআরডিসি)-এর জেলা আধিকারিক নিবেদিতা রায়ের কথায়, “স্বনির্ভর দলের সদস্যরা বিভিন্ন কাজ করেন। এ বার তাঁরা স্যানিটারি ন্যাপকিনও বানাবেন। শীঘ্রই কাজ শুরু হবে।”

ইতিমধ্যে জেলার বিভিন্ন স্কুল-কলেজে স্যানিটারি ন্যাপকিন ভেন্ডিং মেশিন বসেছে। স্বনির্ভর গোষ্ঠীর তৈরি ন্যাপকিন যাতে ওই স্কুল-কলেজগুলো কেনে, সেই ব্যাপারেও উদ্যোগী হবে প্রশাসন। জেলা প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, “এখানে বড় লাভের কোনও ব্যাপার নেই। আরও বেশি সংখ্যক মহিলা যাতে ন্যাপকিন ব্যবহার করেন, সেটাই মূল উদ্দেশ্য। তাই ন্যূনতম দামে স্যানিটারি ন্যাপকিন দেওয়া যাবে।”

শুধু গ্রামাঞ্চল নয়, শহর এলাকার বহু মহিলাও ঋতুকালীন স্বাস্থ্যবিধি নিয়ে যথেষ্ট সচেতন নন। এর ফলে কেউ কেউ জটিল রোগে আক্রান্ত হন। ঋতুস্রাবের সময় অপরিচ্ছন্নতা থেকে যৌনাঙ্গে সংক্রমণ হতে পারে। পরে সন্তান জন্ম দেওয়ার সময়ও ক্ষতি হতে পারে মা-শিশু দু’জনেরই।

এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য দফতর কি কোনও পদক্ষেপ করে?

জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্র বেরার জবাব, “চিকিত্সক-স্বাস্থ্যকর্মীরা এ বিষয়ে মহিলাদের সচেতন করেন।” তার পরেও অবশ্য বহু মহিলাই বিষয়টি নিয়ে যথেষ্ট সচেতন নন।

স্বনির্ভর গোষ্ঠীকে দিয়ে ন্যাপকিন বানিয়ে তা নামমাত্র মূল্যে বিলি করলে পরিস্থিতি বদলাবে বলেই প্রশাসনের আশা। জেলা প্রশাসনের এক সূত্রে খবর, প্রকল্প রূপায়ণের জন্য স্যানিটারি ন্যাপকিন তৈরির একটি যন্ত্র কেনা হচ্ছে। ওই যন্ত্রে দিনে দু’হাজার ন্যাপকিন তৈরি হবে।

একই সঙ্গে এলাকার আশাকর্মী, অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের দিয়ে মহিলাদের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর কাজ চলবে। স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্য শেফালি দণ্ডপাট মানছেন, “প্রকল্পটি ভীষণ সময়োপযোগী। আশা করি প্রকল্প ফলপ্রসূ হবে।” জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, পাইলট প্রোজেক্ট সফল হলে পরে জেলার অন্য ব্লকেও এই প্রকল্প রূপায়িত হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Self Help Group Sanitary Napkins
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE