প্রবীণদের লাইন। খড়্গপুরের মালঞ্চ রোডের একটি ব্যাঙ্কের সামনে।—নিজস্ব চিত্র।
নির্দেশিকা ছিল, শনিবার প্রবীণ নাগরিকরা যে কোনও ব্যাঙ্ক থেকেই ৫০০-১০০০ টাকার নোট বদল করতে পারবেন। যদিও নোট বদল করতে এক ব্যাঙ্ক থেকে অন্য ব্যাঙ্কে ঘুরেও খালি হাতেই বাড়ি ফিরলেন অনেকে।
এ দিন সকালে নোট বদল করতে প্রথমে ইন্ডিয়ান ব্যাঙ্কে যান খড়্গপুরের বাসিন্দা বছর পঁচাত্তরের দিলীপ বাগ। ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ জানান, তাঁদের ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট না থাকলে টাকা বদল করা যাবে না। নিরুপায় হয়ে এরপর দিলীপবাবু যান কানাড়া ব্যাঙ্কে। সেখানেও টাকা বদল না হওয়ায় পরের গন্তব্য ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া। ইন্ডিয়ান ব্যাঙ্কের মতো সেখানেও অ্যাকাউন্ট না থাকলে টাকা বদল করা হবে না বলা হয়। সবশেষে খরিদা রোডের একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কে গিয়ে টাকা বদল করেন দিলীপবাবু।
শুধু দিলীপবাবু নন, নোট বদল করতে বেরিয়ে এমনই দুর্ভোগের শিকার হলেন আরও অনেকে। দিলীপবাবুর কথায়, ‘‘রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের তিনটি শাখায় ঘুরেছি। লাইনে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষার পর জানানো হয়েছে টাকা বদল করা হবে না। নির্দেশিকা থাকা সত্ত্বেও রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলিতে গিয়ে আমাদের মতো প্রবীণদের কেন দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে জানিনা।”
সমস্যার কারণ জানতে চাইলে বিভিন্ন ব্যাঙ্কের আধিকারিকরা টাকার অভাবের কথা শোনাচ্ছেন। কানাড়া ব্যাঙ্কের খরিদা শাখার সিনিয়র ম্যানেজার শঙ্কর চক্রবর্তী বলেন, “আমাদের কাছে টাকার অভাব। টাকা আনার সঙ্গে সঙ্গেই শেষ হয়ে গিয়েছে। তাই টাকা বদল করে দিতে পারিনি।’’ তাঁর দাবি, ‘‘ব্যাঙ্কের অন্য সমস্ত কাজ চলেছে। তবে সিনিয়র সিটিজেনদের জন্য এখনও কোনও নির্দেশিকা আসেনি।” ইন্ডিয়ান ব্যাঙ্কের ম্যানেজার সরোজকুমার ঝাঁ আবার বলছেন, “নিজেদের গ্রাহককে তো প্রথমে পরিষেবা দিতে হবে। সিনিয়র সিটিজেনদের জন্য আলাদা লাইন করা হয়েছে। তবে টাকা বদল করে দেওয়া যায়নি।’’
শুধু প্রবীণরা নন, দুর্ভোগের তালিকায় রয়েছেন কনের বাবা-মাও। সামনে বিয়ে রয়েছে, কিন্তু টাকা তুলতে না পেয়ে দুশ্চিন্তা বাড়ছে বর-কনের বাবা-মার। সামনে বিয়ে থাকলে বিয়ের প্রমাণ পত্র দেখিয়ে আড়াই লক্ষ টাকা পর্যন্ত তোলার নির্দেশিকা রয়েছে। যদিও নির্দেশিকা নামেই। অনেক ব্যাঙ্কেই বিয়ের প্রমাণপত্র দেখিয়েও টাকা মিলছে না বলে অভিযোগ।
শহরের বুলবুলচটির বাসিন্দা রেলকর্মী অজয়কুমার মিশ্রের ছেলে অরূপম মিশ্রের বিয়ে আগামী ২৫ নভেম্বর। শনিবার ছেলের বিয়ের প্রমাণপত্র দেখিয়ে স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার আইআইটি শাখা থেকে দু’লক্ষ টাকা তুলতে যান বিজয়বাবু। যদিও নোটের জোগান না থাকায় ব্যাঙ্ক টাকা দিতে নারাজ বলে অভিযোগ। খালি হাতেই বাড়ি ফেরেন বিজয়বাবু। এ বিষয়ে এসবিআইয়েররিজিওনাল ম্যানেজার মনমোহন রথ বলেন, “প্রতিটি ব্যাঙ্ককে বিয়ের টাকা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রমাণ দেখালেই টাকা দেওয়া উচিত। কেন টাকা দেওয়া হয়নি খোঁজ নিয়ে দেখব।’’ তাঁর দাবি, ‘‘টাকার অভাব হওয়ার কথা নয়। এটিএমে পাঁচশো-হাজার টাকার নোট না থাকায় দ্রুত টাকা শেষ হয়ে যাচ্ছে। সিনিয়র সিটিজেনদেরও নিয়ম মেনে পরিষেবা দেওয়া হচ্ছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy