Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

অভাব আর পড়াশোনার তাগিদে দু’চাকায় ছোটে শঙ্করের দোকান

অনেক জায়গায় পুলিশ দখলদারি হটালেও ফেরে সেখানে দোকান বসাতে গেলে পুলিশের কোপে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

নিজের চলমান দোকানে শঙ্কর মাইতি। —নিজস্ব চিত্র

নিজের চলমান দোকানে শঙ্কর মাইতি। —নিজস্ব চিত্র

শান্তনু বেরা
দিঘা শেষ আপডেট: ২০ মার্চ ২০১৯ ০৪:২১
Share: Save:

রাস্তার ধারে স্থায়ী দোকান নয়, একেবারে চলমান দোকান। দিঘায় গেলে এখন চোখে পড়বে এমনই দোকান। স্কুটি বা মোটর সাইকেলের পিঠেই চলছে পান-সিগারেট বিক্রির দোকানদারি। বছর খানেক আগে এমন ছবি অবশ্য দেখা যেত না সৈকত শহরে। কিন্তু বেশ কিছুদিন ধরে সৈকত শহরের রাস্তাঘাট দখলমুক্ত করতে নেমেছে পুলিশ। আর তার জেরেই এমন ছবি দেখা যাচ্ছে বলে স্থানীয়দের ধারণা।

তা ছাড়া, এতে অন্য সুবিধাও রয়েছে। অনেক জায়গায় পুলিশ দখলদারি হটালেও ফেরে সেখানে দোকান বসাতে গেলে পুলিশের কোপে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সে ক্ষেত্রে চলমান দোকান থাকলে সুবিধা রয়েছে। কোথাও দোকানদারি করার সময় যদি পুলিশ হটিয়েও দেয় তা হলে অন্যত্র সরে গিয়ে ব্যবসা করার সুযোগ রয়েছে।

বছর ষোলোর শঙ্কর মাইতি পড়াশোনার পাশাপাশি সংসারের জন্য উপার্জনে এমনই পন্থা বেছে নিয়েছে। একদিকে অভাবের সংসার, অন্যদিকে পড়াশোনার খরচ—দু’দিক সামলাতেই এ কাজে নামতে হয়েছে বলে জানাল দিঘার পাশের গ্রাম পদিমার বাসিন্দা শঙ্কর। বাবা আনন্দ মাইতির বয়স প্রায় ৬০ ছুঁতে চলেছে। এখনও দিঘায় ভ্যানরিকশা চালান। নিউ দিঘায় সৈকতে রাস্তার ধারে ঝুপড়িতে পান বিড়ির দোকান চালাতেন মাইতি পরিবার। দোকান থেকে প্রতিদিন ৪০০-৫০০ টাকা আয় হত। কিন্তু দিঘার সৌন্দর্যায়নের জন্য সৈকত থেকে সমস্ত হকার ও ঝুপড়ি উচ্ছেদ করা হয়েছে। ভেঙে দেওয়া হয়েছে শঙ্করদের ঝুপড়ি দোকানও। পর্যটকরা যাতে দিঘার সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন, তার জন্য হকার ও দখলদারদের হটাতে নামানো হয়েছে ব্ল্যাক ফোর্স। এ ছাড়াও দিঘা জুড়ে যত্রতত্র ঝুপড়ি দোকানের বিরুদ্ধে পুলিশের অভিযান অব্যাহত।

হকারদের পুনর্বাসনে ইতিমধ্যে অনেক স্টল তৈরি হয়েছে। কিন্তু সেখানে সব হকারকে পুনর্বাসন দেওয়া সম্ভব হয়নি। বাকিদের জন্য নতুন করে পুনর্বাসন কেন্দ্র ও স্টল তৈরি হচ্ছে। কিন্তু কাজ শেষ হতে আরও প্রায় এক বছর লাগবে বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে।

তার আগে পেট চালাতে এমনই পন্থা বেছে নেওয়ার ভাবনা আসে শঙ্করের মাথায়। কিন্তু স্কুটিতে দোকান করার জন্য সেই গাড়ি জোগাড় করলেন কী ভাবে?

দিঘা দেবেন্দ্রলাল জগবন্ধু শিক্ষা সদনের নবম শ্রেণির ছাত্রটি জানায়, ওড়িশার তালসারির একটি দোকান থেকে স্কুটিটি ভাড়া নিয়েছে সে। প্রতিদিন ৫০ টাকা ভাড়া গুনতে হয়। ভাড়া মিটিয়ে যা থাকে সেটাই দিনের শেষে মায়ের হাতে তুলে দেয় শঙ্কর।

রাস্তায় যেখানে সেখানে গাড়ি দাঁড় করিয়ে দোকানদারির জন্য পুলিশের তাড়া খেতে হয় না?

শঙ্করের কথায়, “পুলিশ এলেই সেই এলাকা থেকে স্কুটি নিয়ে অন্য কোথাও চলে যাই। এ ভাবেই দিনে ২০০-২৫০ টাকার বিক্রি হয়। তা দিয়ে সংসারে সাহায্য করি এবং নিজের পড়াশোনার খরচ চালাই।’’

সকাল ৭টা থেকে সাড়ে নটা পর্যন্ত এ ভাবে দোকানদারি। তারপর স্কুলে। স্কুল থেকে ফিরে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত ফের দোকানদারি। তারপর বাড়ি ফিরে খাওয়া সেরে রাতে পড়তে বসা, এটাই শঙ্করের রোজনামচা। ছেলের এমন কাজ নিয়ে বাবা আনন্দ মাইতি বলেন, “গরিবের সংসার। সংসারের অভাব দেখে ও এমন কাজে নেমেছে। স্টল পেতে গেলে মোটা টাকা দিতে হবে। এত টাকা আমাদের নেই। তাই এ ভাবে পরিশ্রম করা ছাড়া আমাদের কোনও উপায় নেই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Digha
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE