Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

রূপনারায়ণ গিলেছে চাষের জমি, তাই দিনমজুরি

পূর্ব মেদিনীপুরের জেলা সদর তমলুক থেকে কোলাঘাটগামী রূপনারায়ণের মূল বাঁধের গায়েই রয়েছে এই সব গ্রাম। গোবরায় ১২০টি পরিবার এবং আচাইপুরে ৭০ টি পরিবারের বসত বাড়ি থেকে রূপনারায়ণ এখন মাত্র পঁচিশ থেকে পঞ্চাশ ফুট দূরে।

আনন্দ মণ্ডল
কোলাঘাট শেষ আপডেট: ০৭ জুন ২০১৭ ০৫:১৪
Share: Save:

দু’মাস আগেও বাড়ির কাছে চাষের জমি, নারকেল গাছ— সবই ছিল। এখন সেখানে খর স্রোত বইছে। আচাইপুর গ্রামের স্বপন মেটলার কথায়, ‘‘দু’বিঘে চাষজমির সবটাই এক বছরের মধ্যে হারিয়ে গিয়েছে। বাধ্য হয়েই এখন দিনমজুরি করছি।’’

আচাইপুর গ্রামেই বাড়ি কাকলি সামন্তের। এই গৃহবধূরও বক্তব্য, ‘‘জলের স্রোত ক্রমশ দোরগোড়ায় চলে আসছে। ছেলে-মেয়েদের নিয়ে খুব আতঙ্কে রয়েছি।’’

শুধু আচাইপুর নয়, জামিত্যা, গোবরা-সহ রূপনারায়ণের তীরের বেশ কয়েকটি গ্রামের প্রায় দু’শো পরিবার এখন ভাঙন-আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। তমলুক ও কোলাঘাটের মাঝে খারুই-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে পড়ে এই গ্রামগুলি। এলাকাটি কোলাঘাট শহর তথা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে মাত্র চার কিলোমিটার দূরে।

পূর্ব মেদিনীপুরের জেলা সদর তমলুক থেকে কোলাঘাটগামী রূপনারায়ণের মূল বাঁধের গায়েই রয়েছে এই সব গ্রাম। গোবরায় ১২০টি পরিবার এবং আচাইপুরে ৭০ টি পরিবারের বসত বাড়ি থেকে রূপনারায়ণ এখন মাত্র পঁচিশ থেকে পঞ্চাশ ফুট দূরে। ক্রমে নদ গিলে নিচ্ছে চাষজমি, বড় বড় নারকেল, শিরীষ গাছ। যে কোনও মুহূর্তে ভাঙনে তলিয়ে যেতে আচাইপুরের
শিশুশিক্ষা কেন্দ্রটিও। গোবরার বাসিন্দা বাবলু বাগ, বাপি মণ্ডলরা বলছিলেন, ‘‘কয়েকবছর আগেও নদের পূর্ব দিকে প্রায় দু’কিলোমিটার লম্বা চর ছিল। সেখানে ধান, আলু, ঝিঙে, পটল, কুমড়ো চাষ হত। এখন সব গিলে নিয়েছে রূপনারায়ণ।’’ আচাইপুরের বাসিন্দা ৭২ বছরের বৃদ্ধ চণ্ডী মাজিও জানালেন, তাঁদের দু’বিঘে জমি রূপনারায়ণে মিশে গিয়েছে।

গত বর্ষা থেকেই এই এলাকায় রূপনারায়ণের ভাঙন শুরু হয়েছে।
গত দু’মাসে তার তীব্রতা আরও অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে। এমনটা চলতে থাকলে আগামী বর্ষায় পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, তা ভেবেই উদ্বিগ্ন এলাকাবাসী। স্থানীয় তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্য দিলীপ মণ্ডল বলছিলেন, ‘‘রূপনারায়ণের ভাঙনে দু’শোটি পরিবার বিপন্ন অবস্থায় রয়েছে। ভাঙন ঠেকাতে সেচ দফতর ও ব্লক প্রশাসনকে আগেই জানিয়েছিলাম। সম্প্রতি গ্রামবাসীর সই-সহ সেচ মন্ত্রীকেও চিঠি দেওয়া হয়েছে।’’

দক্ষিণবঙ্গের দায়িত্বপ্রাপ্ত সেচ দফতরের চিফ ইঞ্জিনিয়ার অনীশ ঘোষ জানিয়েছেন, রূপনারায়ণের মূল স্রোত হাওড়ার দিক থেকে সরে পূর্ব মেদিনীপুরের দিকে চলে আসাতেই ভাঙন দেখা দিচ্ছে। তবে তাঁর আশ্বাস, ‘‘ওই এলাকায় ভাঙন নিয়ে ইতিমধ্যে সমীক্ষা করা হয়েছে। ভাঙন রোধে শীঘ্রই পদক্ষেপ করা হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Rupnarayan Soil Erosion রূপনারায়ণ
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE