প্রাক্তন পুরপ্রধান দুর্গেশ মল্লদেবের ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের এই কাঁচা রাস্তা ঢালাই করার উল্লেখ রয়েছে টেন্ডারে। নিজস্ব চিত্র
৫৩টি কাঁচা রাস্তা ঢালাই করতে ই-টেন্ডার ডেকেও কাজ হয়নি। পড়ে রয়েছে কেন্দ্রীয় প্রকল্পের ২ কোটি ৮৩ লক্ষ টাকা। অভিযোগ, শাসকদলের একাংশের আপত্তিতেই নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেলেও টেন্ডার খোলা যায়নি।
এই ঘটনায় পুরভোটের আগে ফের অস্বস্তিতে অরণ্যশহরের শাসকদল। পুরভোটের দিন ঘোষণা হয়ে গেলে রাস্তার কাজ আদৌ করা যাবে কি-না তা নিয়ে সংশয়ে পুর-কর্তৃপক্ষও।
২০১৮ সালের ডিসেম্বরে তৃণমূল পরিচালিত পুরবোর্ডের মেয়াদ শেষে পুরসভায় প্রশাসক নিয়োগ করেছে রাজ্য। তবে পুর-প্রশাসনিক বোর্ডের সরকার মনোনীত সদস্য হিসেবে রয়েছেন প্রাক্তন পুরপ্রধান দুর্গেশ মল্লদেব এবং ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের প্রাক্তন কাউন্সিলর তথা শহর তৃণমূলের সভাপতি প্রশান্ত রায়। বিরোধীদের অভিযোগ, শাসকদলের দুই প্রতিনিধি পুর-প্রশাসনিক বোর্ডে থাকায় উন্নয়নের কাজে টেন্ডার ঘিরে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে। ই-টেন্ডার হওয়ায় শাসকদলের অনুগ্রহভাজন ঠিকাদারদের কাজ পাওয়াটা অনিশ্চিত হয়ে গিয়েছে। এ ক্ষেত্রে টোন্ডার না খুললে বোঝা সম্ভব নয় যে সর্বনিম্ন দরপত্র কারা দিয়েছেন। গত বছর ১৮ সেপ্টেম্বর পুরসভার নির্বাহী আধিকারিক ৫৩টি রাস্তার কাজের জন্য ই-টেন্ডার ডাকেন। প্রতিটি রাস্তার জন্য গড়ে ৪ থেকে ৬ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করা হয়। প্রকল্প ব্যয় ধরা হয় ২ কোটি ৮৩ লক্ষ ১৫ হাজার টাকা। কয়েকজন ঠিকাদার দরপত্র দেন। জানা গিয়েছে, স্থানীয়দের পাশাপাশি বাইরের ঠিকাদারেরাও অনলাইনে দরপত্র জমা দিয়েছেন। তাই এই অচলাবস্থা।
পুরসভার টেন্ডার বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, ৫৩টি কাজের অনলাইনে কারিগরি দরপত্র খোলা হয় ৭ নভেম্বর। কিন্তু সর্বনিম্ন দরপত্র কারা দিয়েছেন সেই সংক্রান্ত আর্থিক প্রস্তাব অনলাইনে খগোলার কথা পরে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানানোর কথা ছিল। সেই বিজ্ঞপ্তি জারি হয়নি। আজ পর্যন্ত চূড়ান্ত টেন্ডার খোলাও হয়নি। ফলে, কাউকেই কাজের বরাত দেওয়া হয়নি। ঠিকাদারেরা ‘আর্নেস্ট মানি’-সহ দরপত্র জমা দিয়ে অপেক্ষা করছেন। তিন মাস পেরিয়ে গেলেও টেন্ডার-প্রক্রিয়া মাঝপথে থমকে রয়েছে।
ঝাড়গ্রাম পুরসভার ১৮টি ওয়ার্ডের প্রতিটিতে একাধিক ঢালাই রাস্তা হওয়ার কথা। পুরসভা সূত্রের দাবি, প্রকল্পটি রূপায়িত হলে শহরের অধিকাংশ কাঁচা রাস্তা কংক্রিটের হত। তৃণমূলের নিচুতলার কর্মীরা বলছেন, পুরভোটের আগে কাজ শুরু হলে শাসকদলের পক্ষে তা সহায়ক হত। পুরসভার নির্বাহী আধিকারিক তুষারকান্তি শতপথী এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি। তবে পুর-প্রশাসক সুবর্ণ রায় বলেন, ‘‘যত শীঘ্র সম্ভব টেন্ডার খোলা নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’’ তবে কেন বিলম্ব তা নিয়ে জানাননি পুরপ্রশাসক।
বিজেপি-র ঝাড়গ্রাম নগর মণ্ডলের সভাপতি নন্দন ঠাকুরের অভিযোগ, ‘‘ই-টেন্ডারে বহিরাগত অনেকেই দরপত্র জমা দিয়েছেন। ফলে, তৃণমূলের অনুগ্রহভাজন নির্দিষ্ট কিছু স্থানীয় ঠিকাদার কাজগুলি আদৌ পাবেন কি-না তা নিয়ে তৃণমূলের নেতাদের মধ্যে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। সেই কারণেই টেন্ডার খোলা হয়নি।’’
পুর-প্রশাসনিক বোর্ডের সদস্য প্রাক্তন পুরপ্রধান দুর্গেশ মল্লদেব অভিযোগ উড়িয়ে বলেন, ‘‘নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া মেনে সব দিক খতিয়ে দেখতে হয়তো কিছু সময় লাগছে। স্বজনপোষণের ব্যাপার নেই।’’ পুর-প্রশাসনিক বোর্ডের আর এক সদস্য শহর তৃণমূলের সভাপতি প্রশান্ত রায় বলেন, ‘‘কেন টেন্ডার খোলা হয়নি জানা নেই। প্রকল্পটি দ্রুত রূপায়ণে পুর-প্রশাসককে জানিয়েছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy